আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
ইসলাম ধর্ম

ঈদুল আযহা বা কুরবানির ঈদ : মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ঈদ উৎসব

ঈদুল আযহা বা কুরবানির ঈদ : মুসলমানদের সর্ববৃহৎ ঈদ উৎসব । আদি পিতা হযরত আদম (আ.) থেকে শুরু হওয়া এ কুরবানির মূল দীক্ষাই হল সকল প্রকার ঠুনকো, খোঁড়া যুক্তি ও বুদ্ধির উর্ধ্বে উঠে আল্লাহর হুকুম। আহকামের প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণ করা। আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আনুগত্যের নমুনাস্বরূপ হযরত ইবরাহীম (আ.) নিজ পুত্র ইসমাইলকে (আ.) আল্লাহর রাহে উৎসর্গ করতে গিয়েছিলেন। আল্লাহর হুকুমের প্রতি অতিশয় আনুগত্যের কারণে আল্লাহ তায়ালা তার এ কুরবানিকে কবুল করে নেন, এ ঘটনা আল্লাহর হুকুমের পূর্ণ আনুগেত্যের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

আযহা শব্দটিকে আরবীতে কুরবান’ও বলা হয়ে থাকে, যা ফারসী বা উর্দুতে ‘কুরবানী’ রূপে পরিচিত হয়েছে। কুরবানির শাব্দিক অর্থ হল- নৈকট্য অর্জন করা, কাছাকাছি যাওয়া পারিভাষিক অর্থে কুরবানী’ ঐ মাধ্যমকে বলা হয়, যার দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাছিল হয়। প্রচলিত অর্থে ঈদুল আযহার দিন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে শারঙ্গ তরীকায় যে পশু যবেহ করা হয়, তাকে কুরবানী’ বলা হয়। পবিত্র কুরআন ও হাদীস এ ব্যাপারে ব্যাপক গুরুত্বারােপ করেছে।

আল্লাহ তায়ালা তার প্রিয় হাবীবকে লক্ষ করে বলেন, ‘তুমি তােমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে ছালাত আদায় কর এবং কুরবানী কর’ (কাওছার, ২)। কাফির-মুশরিকরা তাদের দেব-দেবী ও মূর্তির উদ্দেশ্যে কুরবানী করে থাকে। তার প্রতিবাদ স্বরূপ এ আয়াতের মাধ্যমে মুসলমানদের আল্লাহর জন্য ছালাত আদায়ের ও তার উদ্দেশ্যে কুরবানী করার হুকুম দেওয়া হয়েছে। মুফাসসিরদের কারাে কারাে মতে, এ আয়াতে বিশেষভাবে ঈদুল আযহার নামাজ ও নামায শেষে কুরবানীর নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন

মহান আল্লাহ বলেন, “আর কুরবানীর পশুসমূহকে আমরা তােমাদের জন্য আল্লাহর নিদর্শনসমূহের অন্তর্ভুক্ত করেছি। এর মধ্যে তােমাদের জন্য কল্যাণ রয়েছে (হজ্জ, ৩৬)। আল্লাহ তায়ালা আরও বলেন, “আর আমরা তাঁর (ইসমাঈলের) পরিবর্তে যবেহ করার জন্য দিলাম একটি মহান কুরবানী। আমরা এটিকে পরবর্তীদের মধ্যে রেখে দিলাম’ (ছফফাত ১০৭)। আমাদের প্রিয় নবী মুহাম্মাদ (সা.) বলেছেন, ‘সামর্থ্য থাকা। সত্বেও যে ব্যক্তি কুরবানী করল না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটবর্তী না হয়’ (ইবনু মাজাহ, ৩১১৪)।

রাসূল (সা.) আরাে বলেন, ‘কুরবানীর দিন রক্ত প্রবাহিত করা (যবেহ করা) অপেক্ষা আল্লাহর নিকট অধিক প্রিয়। মানুষের কোনাে আমল হয় না’ (সুনানু তিরমিজি, ১৪১৩)। তিনি আরাে বলেন, “যে ব্যক্তি প্রফুল্ল চিত্তে কুরবানী। আদায়ের নিয়তে কুরবানী করে কিয়ামতের দিন তার এবং জাহান্নামের মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে’ (বায়হাকি)। এটি ইসলামের একটি মহান নিদর্শন যা সুন্নাতে ইবরাহীম” হিসেবে রাসূল (সা.) নিজে মদীনায় প্রতি বছর আদায় করেছেন এবং সাহাবীগণও নিয়মিতভাবে কুরবানী করেছেন।

অতঃপর অবিরত ধারায় মুসলিম উম্মাহ সামথ্যানদের মধ্যে এটি চালু আছে। এ ছাড়া মানব সভ্যতার সুদীর্ঘ ইতিহাস এটাই সাক্ষ্য দেয় যে, হযরত আদম (আ.) হতে পৃথিবীর সব জাতিই কোন না কোন পদ্ধতিতে আল্লাহর দরবারে নিজেদের প্রিয়বস্তু উৎসর্গ করেছেন। এ ইতিহাসের স্বীকৃতি প্রদান করে আল্লাহ তায়ালা সুস্পষ্টভাবে ঘােষণা করেছেন, আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে কুরবানীর এক বিশেষ রীতি-পদ্ধতি নির্ধারণ করে দিয়েছি, যেন তারা ওসব পশুর উপর আল্লাহর নাম নিতে পারে যে সব আল্লাহ তাদেরকে দান করেছেন (সূরা হজ্জ, ৩৪)।

কুরবানী আদায় করা ওয়াজিব। সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও যে ব্যক্তি এই ইবাদত পালন করে না তার ব্যাপারে হাদীস শরীফে এসেছে, যার কুরবানীর সামর্থ্য রয়েছে কিন্তু কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে (মুস্তাদরাকে হাকেম, ৩৫১৯)। প্রাপ্তবয়স্ক এবং সুস্থমস্তিষ্ক প্রত্যেক মুসলিম নর-নারী, যে ১০ যিলহজ্ব ফজর থেকে ১২ যিলহজ্ব সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়ােজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব।

টাকা-পয়সা, সােনারূপা, অলঙ্কার, বসবাস ও খােরাকির প্রয়ােজন আসে না এমন জমি, প্রয়ােজন অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়ােজনীয় সকল আসবাবপত্র কুরবানীর নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযােগ্য। মুতের পক্ষ থেকে কুরবানী করা জায়েয। মৃত ব্যক্তি যদি ওসিয়ত না করে থাকে তবে সেটি নফল কুরবানী হিসেবে গণ্য হবে। কুরবানীর স্বাভাবিক গােশতের মতাে তা নিজেরাও খেতে পারবে এবং আত্মীয়-স্বজনকেও দিতে পারবে। আর যদি মৃত ব্যক্তি কুরবানীর ওসিয়ত করে গিয়ে থাকে তবে এর গােশত নিজেরা খেতে পারবে না।

গরীবমিসকীনদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে, (মুসনাদে আহমাদ ১/১০৭)। আর নেসাব হল স্বর্ণের ক্ষেত্রে সাড়ে সাত (৭.৫) ভরি, রূপার ক্ষেত্রে সাড়ে বায়ান্ন (৫২.৫) ভরি, টাকা-পয়সা ও অন্যান্য বস্তুর ক্ষেত্রে নিসাব হল- এর মূল্য সাড়ে বায়ান্ন তােলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হওয়া। আর সােনা বা রূপা কিংবা টাকা-পয়সা এগুলাের কোনাে একটি যদি পৃথকভাবে নেসাব পরিমাণ না থাকে কিন্তু প্রয়ােজন অতিরিক্ত একাধিক বস্তু মিলে সাড়ে বায়ান্ন তােলা রূপার মূল্যের সমপরিমাণ হয়ে যায় তাহলেও তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। অন্যের ওয়াজিব কুরবানী দিতে চাইলে ওই ব্যক্তির অনুমতি নিতে হবে। অনুমতি নিলে এর দ্বারা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। নতুবা ওই ব্যক্তির কুরবানী আদায় হবে।

অবশ্য স্বামী বা পিতা যদি স্ত্রী বা সন্তানের বিনা অনুমতিতে তার পক্ষ থেকে কুরবানী করে তাহলে তাদের কুরবানী আদায় হয়ে যাবে। তবে অনুমতি নিয়ে আদায় করা ভালাে। আর কেউ যদি কুরবানীর দিনগুলােতে ওয়াজিব কুরবানী দিতে না পারে তাহলে কুরবানীর পশু ক্রয় না করে থাকলে তার উপর কুরবানীর উপযুক্ত একটি ছাগলের মূল্য সদকা করা ওয়াজিব। আর যদি পশু ক্রয় করেছিল, কিন্তু কোনাে কারণে কুরবানী দেওয়া হয়নি তাহলে ঐ পশু জীবিত সদকা করে দিবে। কুরবানীদাতা এক স্থানে আর কুরবানীর পশু ভিন্ন স্থানে থাকলে কুরবানীদাতার ঈদের নামায পড়া বা না পড়া ধর্তব্য নয়; বরং পশু যে এলাকায় আছে ওই এলাকায় ঈদের জামাত হয়ে গেলে পশু জবাই করা যাবে, (দুররুল মুখতার ৬/৩১৮)।

উট, গরু, মহিষ, ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয। এসব গৃহপালিত পশু ছাড়া অন্যান্য পশু যেমন হরিণ, বন্যগরু ইত্যাদি দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। উট কমপক্ষে ৫ বছরের হতে হবে। গরু ও মহিষ কমপক্ষে ২ বছরের হতে হবে। আর ছাগল, ভেড়া ও দুম্বা কমপক্ষে ১ বছরের হতে হবে। তবে ভেড়া ও দুম্বা যদি ১ বছরের কিছু কমও হয়, কিন্তু এমন হৃষ্টপুষ্ট হয় যে, দেখতে ১ বছরের মতাে মনে হয় তাহলে তা দ্বারাও কুরবানী করা জায়েয। অবশ্য এক্ষেত্রে কমপক্ষে ৬ মাস বয়সের হতে হবে।

ছাগলের বয়স ১ বছরের কম হলে কোনাে অবস্থাতেই তা দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে না। উট, গরু, মহিষ সাত ভাগে এবং সাতের কমে যেকোনাে সংখ্যা যেমন দুই, তিন, চার, পাঁচ ও ছয় ভাগে কুরবানী করা জায়েয। অর্থাৎ কুরবানীর পশুতে এক সপ্তমাংশ বা এর অধিক যে কোন অংশে অংশীদার হওয়া জায়েয। এক্ষেত্রে ভগ্নাংশ- যেমন, দেড় ভাগ, আড়াই ভাগ, সাড়ে তিন ভাগ হলেও কোনাে সমস্যা নেই, (সহীহ মুসলিম, ১৩১৮)। তবে শরীকদের কারাে পুরাে বা অধিকাংশ উপার্জন যদি হারাম হয় তাহলে কারাে। কুরবানী সহীহ হবে না। এমন শুকনাে দুর্বল পশু, যা জবাইয়ের স্থান পর্যন্ত হেঁটে যেতে পারে না তা দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়, (জামে তিরমিযী ১/২৭৫)।

গরু-ছাগলের অধিকাংশ দাঁত না থাকলেও যে কয়টি দাত আছে তা দ্বারা যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে পারে তবে সেটি দ্বারা কুরবানী সহীহ। কিন্তু দাঁত পড়ে যাওয়ার কারণে যদি ঘাস চিবিয়ে খেতে না পারে তবে ঐ পশু কুরবানী করা যাবে না। যে পশুর শিং একেবারে গােড়া থেকে ভেঙ্গে গেছে, যে কারণে মস্তিষ্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়। কিন্তু শিং ভাঙ্গার কারণে মস্তিষ্কে যদি আঘাত না পৌছে তাহলে সেই পশু দ্বারা কুরবানী জায়েয। তাই যে পশুর অর্ধেক শিং বা কিছু শিং ফেটে বা ভেঙ্গে গেছে বা শিং একেবারে উঠেইনি, সে পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয, (জামে তিরমিযী। ১/২৭৬)। তবে যে পশুর লেজ বা কোনাে কান অর্ধেক বা তারও বেশি কাটা সে পশুর কুরবানী জায়েয নয়।

আর যদি অর্ধেকের কম হয় তাহলে তার কুরবানী জায়েয। তবে জন্মগতভাবেই যদি কান ছােট হয় তাহলে অসুবিধা নেই, (জামে তিরমিযী ১/২৭৫)। কুরবানীর গােশত, চর্বি ইত্যাদি বিক্রি করা জায়েয নয়। বিক্রি করলে পূর্ণ মূল্য সদকা করে দিতে হবে। কুরবানীর মৌসুমে অনেক মহাজন কুরবানীর হাড় ক্রয় করে থাকে। টোকাইরা বাড়ি বাড়ি থেকে হাড় সংগ্রহ করে তাদের কাছে। বিক্রি করে এদের ক্রয়-বিক্রয় জায়েয। এতে কোনাে অসুবিধা নেই।

কিন্তু কোনাে কুরবানীদাতার জন্য নিজ কুরবানীর কোনাে কিছু এমনকি হাড়ও বিক্রি করা জায়েয। হবে না। করলে মূল্য সদকা করে দিতে হবে। আর জেনেশুনে মহাজনদের জন্য এদের কাছ থেকে ক্রয় করাও বৈধ হবে না, (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ৫/৩০১)। কুরবানীর পশুর কোনাে কিছু পারিশ্রমিক হিসাবে দেওয়া জায়েয নয়। গােশতও পারিশ্রমিক হিসেবে কাজের লােককে দেওয়া যাবে না। অবশ্য এ সময় ঘরের অন্যান্য সদস্যদের মতাে কাজের লােকদেরকেও গােশত খাওয়ানাে যাবে। কুরবানীর পশু জবাই করে পারিশ্রমিক দেওয়া-নেওয়া জায়েয।

তবে কুরবানীর পশুর কোনাে কিছু পারিশ্রমিক হিসেবে দেওয়া যাবে না। কুরবানী মুসলমানদের শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়, বরং
পরিশুদ্ধ জীবন গঠনের নিয়মতান্ত্রিক অনুশীলনও বটে। এর মাধ্যমে মুসলমান তাওহীদী আদর্শে উজ্জীবীত হয়ে ইখলাস, তাকওয়া অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর প্রতি পূর্ণ আত্মসমর্পণের অপূর্ব নজির স্থাপন করতে পারে। সংগৃহিত

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button