আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

লিঙ্কে ক্লিক করুন
টুকরো সংবাদ

GDP’র নতুন ভিত্তি বছর

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরাে (BBS) মােট দেশজ উৎপাদন (GDP) হিসাব করার জন্য সম্প্রতি নতুন ভিত্তি বছর চূড়ান্ত করেছে। ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে নতুন এ খসড়া হিসাব পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের অনুমােদনের অপেক্ষায় রয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে এ নিয়ে চতুর্থবারের মতাে জাতীয় আয়ের ভিত্তি বছর পরিবর্তন করা হবে।

ভিত্তি বছর কী?

ভিত্তি বছর (Base Year) হচ্ছে একটি মানদণ্ড যার প্রেক্ষাপটে একটি দেশের উৎপাদন, সঞ্চয়, মূলধনের মােট পরিমাণ, কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাত কতটা বৃদ্ধি পেয়েছে সে হিসাব করা। এক বছরে দেশে যেসব পণ্য ও সেবাসামগ্রী উৎপাদিত হয়, তার মােট বাজারমূল্যকে মােট দেশজ উৎপাদন (GDP) বলা হয়। এটি একটি বার্ষিক হিসাব। একটি অর্থবছরকে ভিত্তি ধরে এ হিসাব করা হয়।

GDP’র ভিত্তি বছর দিয়ে মূলত, অর্থনীতিতে যে বিভিন্ন খাতের মূল্য সংযােজন হয়, সেগুলােকে তুলে আনা হয়। আর নতুন নতুন খাত এ হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয় , এ জন্য ভিত্তি বছর পরিবর্তন করা হয়। ভিত্তি বছর পরিবর্তন একটি স্বাভাবিক ও স্বীকৃত কাজ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশে সাধারণত ১০ বছর পরপর এটি পরিবর্তন হয় বা নতুন ভিত্তি বছর গ্রহণ করা হয়।

এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন

কোনাে কোনাে দেশে পাঁচ বছর অন্তর এটি পরিবর্তিত হয়। তবে ভিত্তি বছর পরিবর্তন একটি বিশাল কর্মযজ্ঞের বিষয়। এটি পরিবর্তনের সাথে আগের ও পরের বেশ কয়েকটি অর্থবছরের GDP’র হিসাবও সমন্বয় করতে হয়। এর মধ্য দিয়ে জাতীয় আয়ের হিসাব-নিকাশ সংশােধন ও হালনাগাদ হয়।

বাংলাদেশে GDP নির্ণয়ে ভিত্তি বছর

বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে প্রথম GDP হিসাব প্রকাশ করা হয়। তখন ১১টি খাতের ওপর ভিত্তি করে GDP নিরূপণ করা হতাে। টানা দুই দশক ১৯৭২-৭৩ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে জাতীয় আয়ের হিসাব-নিকাশ করা হয়। ১৯৯২-৯৩ অর্থবছরে ভিত্তি বছর পাল্টে করা হয় ১৯৮৪-৮৫। এরপর ১৯৯৯-২০০০ সময়কালে আবার ভিত্তি বছর হালনাগাদ করে নির্ধারণ করা হয় ১৯৯৫-৯৬। একই সাথে GDP খাতের সংখ্যা ১১টি থেকে বাড়িয়ে ১৫টি করা হয়।

খাতগুলাে হলাে—
  • কৃষি ও বনজ
  • মৎস্যসম্পদ
  • খনিজ ও খনন
  • শিল্প উৎপাদন
  • বিদ্যুৎ, গ্যাস ও পানি সম্পদ
  • নির্মাণ
  • পাইকারি ও খুচরা বিপণন
  • হােটেল ও রেস্তোরা
  • পরিবহন, সংরক্ষণ ও যােগাযােগ
  • আর্থিক প্রাতিষ্ঠানিক সেবা
  • রিয়েল এস্টেট, ভাড়া ও অন্যান্য ব্যবসা
  • লােকপ্রশাসন ও প্রতিরক্ষা
  • শিক্ষা
  • স্বাস্থ্য ও সামাজিক সেবা
  • কমিউনিটি, সামাজিক ও ব্যক্তিগত সেবা।

এরপর এক যুগ অতিক্রম করে ২০১৩ সালে ২০০৫-০৬ অর্থবছরকে নতুন ভিত্তি বছর করা হয়। তখনও ১৫টি খাতের ওপর ভিত্তি করে GDP নিরূপণ করা হয়। আর সর্বশেষ ২০২১ সালে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরাে (BBS) ২০১৫-২০১৬ অর্থবছরকে ভিত্তি বছর ধরে GDP, প্রবৃদ্ধি, বিনিয়ােগ, মাথাপিছু আয় গণনা করা শুরু করে। নতুন ভিত্তি বছর থেকে প্রচলিত ১৫টি খাতের সঙ্গে আরও ৯টি খাত যুক্ত হয়ে মােট ২৪টি খাতের বাজারমূল্য যােগ করে GDP নির্ণীত হবে।

নতুন খাতসমূহ
  • মােবাইল ব্যাংকিং
  • এজেন্ট ব্যাংকিং
  • গরু ও হাঁস-মুরগি
  • নার্সারি
  • লটকন, ড্রাগন, স্ট্রবেরি, ক্যাপসিকাম, মাশরুম
  • আবাসন
  • ক্যাবল টেলিভিশন
  • ইন্টারনেট
  • হেলিকপ্টার

নতুন ভিত্তি বছরে যা কিছু পরিবর্তন

মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি

২০২০-২০২১ অর্থবছরে মাথাপিছু; আয় ২,২২৭ মার্কিন ডলার থেকে বেড়ে ২,৫৫৪ মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। মার্কিন ডলারের বর্তমান বিনিময় হার (১ ডলার সমান ৮৫ টাকা) অনুযায়ী, বাংলাদেশি মুদ্রায় ২,১৭,০৯০ টাকা। অর্থাৎ, মাথাপিছু আয় বেড়েছে ৩২৭ মার্কিন ডলার বা ২৭,৭৯৫ টাকা। মাথাপিছু আয় কোনাে ব্যক্তির একক আয় নয়। দেশের অভ্যন্তরের পাশাপাশি রেমিট্যান্সসহ যত আয় হয়, তা দেশের মােট জাতীয় আয়। সেই জাতীয় আয়কে মাথাপিছু ভাগ করে দেওয়া হয়।

GDP বৃদ্ধি

২০২০-২০২১ অর্থবছরে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার (GDP) ৪০৯ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। বর্তমান বিনিময় হার হিসাবে (প্রতি ডলার ৮৫ টাকা) টাকার অংকে ৩৪,৭৬,৫০০ কোটি টাকা। পূর্ববর্তী ভিত্তি বছরের হিসাবে ছিল ৩০,১১,০০০ কোটি টাকা। অর্থাৎ নতুন হিসাবে GDP’র আকার বেড়েছে ১৫.৭%।

খাতের সম্প্রসারণ

নতুন ভিত্তি বছরের প্রেক্ষাপটে কৃষি, শিল্প এবং সেবা খাতের সম্প্রসারণ ঘটেছে। এর মধ্যে কৃষি খাতের অবদান হিসাব করার সময় ১৪৪ ধরনের শস্যের তথ্য আমলে নেওয়া হয়, যেটি আগের হিসাবে ১২৪ ছিল। শিল্প খাতে আশুগঞ্জ পাওয়ার স্টেশন কোম্পানি লি, নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি লিমিটেড, বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বাের্ড, খাদ্য সংরক্ষণের জন্য কোল্ড স্টোরেজ, রাজশাহী ওয়াসা ও জাহাজ ভাঙা শিল্পের তথ্য অন্তর্ভুক্ত হয় সেবা খাতে রাইড-শেয়ারিং সেবা, বেসরকারি মােটরযান, জাতীয় উড়ােজাহাজ সংস্থা বিমান, বেসরকারি নভােএয়ার ও ইউএস বাংলা, বেসরকারি হেলিকপ্টার সেবা, বাংলাদেশ সাবমেরিন ক্যাবল কোম্পানি, : চলচ্চিত্র নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান, সিনেমা হল, নতুন ব্যাংক, মােবাইল আর্থিক সেবা, এজেন্ট ব্যাংকিং এবং বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠান অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button