আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
জীবনযাপনস্বাস্থ্য টিপস

মাথা ব্যথা: বিভিন্ন প্রকার ও সঠিক চিকিৎসা

মাথা ব্যথা কখনাে হয়নি এমন ব্যক্তি খুঁজে পাওয়া ভার। আমাদের সবারই কম বেশি মাথা ব্যথা হয়। মাথা ব্যথা হলেই আমরা ওষুধ কিনে খেয়ে ফেলি। যা করা মােটেই উচিত নয়। ভেবে নিই মাথা থাকলে মাথা ব্যথা তাে হবেই। দৈনন্দিন জীবনে মাথা ব্যথা খুব সাধারণ একটি সমস্যা। যদিও বেশীর ভাগ মাথা ব্যথা বিরক্তিকর, তবে বেশীর ভাগ মাথা ব্যথাই মারাত্মক রােগ নির্দেশ করেনা। দুশ্চিন্তা ও মাইগ্রেন শতকরা ৯০ ভাগ মাথা ব্যথার জন্য দায়ী। মাথা ব্যথা নানা রকমের।

দৈনন্দিন জীবনে মাথা ব্যথার কারণ ও প্রতিকার

টেনশন হেডেক বা দুশ্চিন্তাজনিত মাথা ব্যথা, মাইগ্রেন হেডেক, ক্লাস্টার হেডেক, সাইনাস হেডেক, আর্জেন্ট হেডেক, আইহেডেক বা চক্ষুজনিত মাথা ব্যথা, হরমােনজনিত মাথা ব্যথা। তাছাড়া মগজের টিউমার, মগজের ঝিল্লির ভিতর রক্তপাত, উচ্চ রক্তচাপ ইত্যাদি কারণেও মাথা ব্যথা হয়।

টেনশন হেডেক বা দুশ্চিন্তাজনিত মাথা ব্যথা

মাথা ব্যথা মাথার উভয় দিকে হয়। মাথায় তীব্র চাপ অনুভূত হয় এবং ব্যথা ঘাড়ে সংক্রমিত হতে পারে। মানসিক চাপে ব্যথা বাড়তে পারে। পুরুষ, মহিলা সমানভাবে আক্রান্ত হয়।

মাথা ব্যথার লক্ষণসমূহ:

  • মাথা ব্যথা সাধারণত: মাথার পিছনে দুই দিকে ও ঘাড়ে অনুভূত হয়।
  • মাথা ব্যথা সপ্তাহব্যাপী বা মাসব্যাপী স্থায়ী হয়। তবে ব্যথার তীব্রতা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন রকমের হতে পারে।
  • মাথা ব্যথা দিনের যে কোন সময় হতে পারে।
  • মাথায় চাপ অনুভূত হয়। কিন্তু ব্যথার সাথে কখনাে জ্বর থাকে না।

চিকিৎসা:

সাধারণত বেদনা নাশক দ্বারা চিকিৎসা করা হয়। স্বল্পমাত্রার ট্র্যাঙ্কুলাইজারও দেয়া যেতে পারে।

মাইগ্রেন-এর মাথা ব্যথা

শতকরা ১০-১৫ ভাগ লােক এ ধরণের মাথা ব্যথায় আক্রান্ত হয়। মাইগ্রেন মহিলাদের বেশী হয়। সাধারণত: ১৫-১৬ বছর বয়স থেকে মাইগ্রেনের লক্ষণ দেখা দেয় এবং বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই ৪০-৫০ বছর বয়স পর্যন্ত স্থায়ী হয়। মাইগ্রেনের আক্রমণের সময় মগজের রাসায়নিক বাহক সেরােটনিন-এর মাত্রা বেড়ে যায় এবং মাথা বাইরের ধমনীগুলাে প্রসারিত
হয়।

মাথা ব্যথার লক্ষণসমূহ:

  • মাথা ব্যথা সাধারণত: মাথার এক দিকে হয় (আধ কপালে মাথা ব্যথা)। তবে ব্যথা সমস্ত মাথায় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
  • মাথা ব্যথার সাথে বমি বমি ভাব হয়, এমনকি বমিও হতে পারে।
  • রােগী তখন আলাে সহ্য করতে পারে না।
  • এ ধরণের মাথা ব্যথা কয়েক ঘন্টাব্যাপী চলতে পারে, কিন্তু সারাদিনব্যাপী খুব কম হয়।
  • মাইগ্রেন রােজ, সপ্তাহব্যাপী বা মাসব্যাপী হতে পারে।
  • দুশ্চিন্তা, মদ্যপানে মাথা ব্যথা বেশী হয়। পনির, চকোলেট ইত্যাদি খাবারেও মাথা ব্যথা বেশী হয়।
  • ঘুমালে মাথা ব্যথা কমে যায়।
  • মাইগ্রেনের বংশগত ইতিহাস থাকতে পারে।
  • সাধারণত কোন স্নায়ুবিক উপসর্গ থাকে না।

কারণ

  • অ্যালাজি
  • উজ্জ্বল আলাে
  • তীব্র শব্দ
  • নানা ধরনের গন্ধ
  • শারীরিক ও মানসিক চাপ
  • অনিয়মিত ঘুম বা অনিদ্রা
  • ধূমপান ও ধোঁয়া
  • অনিয়মিত খাদ্যগ্রহণ
  • অধিক সময় না খেয়ে থাকলে।
  • অনিয়মিত মাসিক নিয়মিত জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি গ্রহণ, মেনােপজের কারণে হরমােনের ভারসাম্যহীনতা
  • চকোলেট, বাদাম, মাখন, কলা, লেবু, পেঁয়াজ এবং দুগ্ধজাত খাবার নিয়মিত অতিরিক্ত সেবন।
  • কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের গােলযােগ।
  • বংশগত।

পথ্য

আধা গ্লাস গরম পানি, এক চা চামচ লেবুর রস, এক চা চামচ আদার রস, এক চা চামচ মধু মিশিয়ে চায়ের মতাে ধীরে ধীরে পান করুন।

যা করবেন

  • প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা ঘুম
  • দুশ্চিন্তা বাদ
  • নিয়মিত ব্যায়াম।
  • মদ ও নেশাজাতীয় দ্রব্য বর্জন
  • নিয়মিত সঠিক সময়ে খাবার গ্রহণ।

টিপস

  • যত দিন মাথার যন্ত্রণা না সারে তত দিন দিনে দুবার গরম পানিতে (যতটা গরম সহ্য করা যায়) ১০ থেকে ১৫ মিনিট পা ডুবিয়ে রাখতে পারেন।
  • খাঁটি ঘি সকাল ও বিকেলে ১ ফোঁটা করে নাকে দিলে বা বারবার শুকলে ব্যথা কমে যায়।
  • মাথার যেদিকটায় ব্যথা সেদিকের নাকের ছিদ্রে ২ ফোঁটা শর্ষের তেল দিলে বা শুকলেও ব্যথা কমে যায়।

চিকিৎসা:

যেসব কারণে মাইগ্রেনের আক্রমণ বৃদ্ধি পায়, তা পরিহার করতে হবে। স্বল্পস্থায়ী চিকিৎসা হিসাবে অ্যাসপিরিন বা প্যারাসিটামলের সাথে এন্টিইমেটিক যেমন প্রােক্লোরপেরাজিন, মেটাক্লোপ্যামাইড দেয়া যেতে পারে। তীব্র আক্রমণের চিকিৎসা হিসাবে সুমাট্রিপটিন, যা মাথার বাইরের ধমনীকে সংকুচিত করে, তা মুখে বা ইনজেকশনের মাধ্যমে দেয়া যেতে পারে। আর্গোটামিন বিকল্প হিসাবে দেয়া যেতে পারে। ঘন ঘন আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে প্রতিরােধকারী হিসাবে প্রােপানােলল, পিজোটিফেন বা অ্যামিট্রিপটাইলিন দেয়া যেতে পারে।

ক্লাসটার হেডেক

ক্লাস্টার হেডেক মাইগ্রেনের চেয়ে কম হয়। এ ধরনের মাথা ব্যথা মধ্য বয়স্ক পুরুষদের বেশী হয়ে থাকে। কিন্তু মাইগ্রেন মহিলাদের বেশী হয়।

মাথা ব্যথার লক্ষণসমূহ:

  • তীব্র যন্ত্রণায়ক মাথা ব্যথা।
  • মাথা ব্যথা সাধারণত: এক চোখে ও চোখের পিছনে হয় এবং সেদিকের চোখ লাল হয়, পানি পড়ে। নাক দিয়েও পানি পড়ে।
  • মাথা ব্যথা হঠাত্ করেই হয়ে থাকে। পাঁচ থেকে দশ মিনিটের মধ্যে ব্যথা সবচেয়ে বেশী হয় এবং আধ ঘন্টার মধ্যে সেরে যায়।
  • মাথা ব্যথায় ঘুম ভেঙে যেতে পারে।
  • মদ্যপানে মাথা ব্যথা বেশী হয়।
  • মাথা ব্যথা কয়েক সপ্তাহব্যাপী স্থায়ী হয় এবং দিনে কয়েকবার করে হয়।

চিকিৎসা:

চিকিৎসা হিসাবে উচ্চ মাত্রায় প্রদাহ বিনাশকারী (এন্টিইনফ্লামেটরী) দেয়া হয়। সুমাট্রিপটিনও ফলপ্রসূ। আর্গোটামিন ও ভেরাপামিল রােগ প্রতিরােধের জন্য কার্যকর। অর্ধেকের বেশী রােগী ফেস মাস্কের মাধ্যমে ১০০% অক্সিজেন শ্বাসের সাথে নিয়ে উপকার পায়। ধূমপান ও মদ্যপান বর্জন করা উচিত।

চক্ষুজনিত মাথা ব্যথা

শতকরা ৫ ভাগ মাথা ব্যথা চক্ষুজনিত। চোখের দৃষ্টিশক্তি কম থাকলে মাথা ব্যথা হতে পারে। অনেকক্ষণ পড়াশুনা করা, সেলাই করা, সিনেমা দেখা বা কম্পিউটার স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে থাকলেও মাথা ব্যথা হতে পারে। চোখের কোন রােগ যেমন- কর্ণিয়া, আইরিশের প্রদাহ, গ্লুকোমা বা রেট্রোবালবার নিউরাইটিস ইত্যাদি কারণেও মাথা ব্যথা হতে পারে। চক্ষুজনিত মাথা ব্যথা সাধারণত: চোখে, কপালের দু’দিকে বা মাথার পিছনে হয়ে থাকে।

হরমােনজনিত মাথা ব্যথা

মহিলাদের মাসিক কালীন সময়ে প্রােজেস্টেরন ও এস্ট্রোজেন হরমােনের উঠানামার কারণে মাথা ব্যথা হতে পারে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি খেলেও মাথা ব্যথা হতে পারে। মাসিক চক্র শেষ হলে বা জন্ম নিয়ন্ত্রণ বড়ি খাওয়া বন্ধ করলে এ ধরণের মাথা ব্যথা ভাল হয়ে যায়।

কখন সিটি স্ক্যান বা এম,আর,আই করতে হবে।

  • তীব্র ও অসহ্য মাথা ব্যথা।
  • কোন পরিশ্রমের কাজ করার পর মাথা ব্যথা শুরু হলে।
  • মাথা ব্যথার সাথে ঘাড় শক্ত হলে।
  • অস্বাভাবিক স্নায়ুবিক উপসর্গ দেখা দিলে
  • ৪০-৫০ বছর বয়স্কদের মাথা ব্যথা যদি দুই মাসের বেশী স্থায়ী হয়।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button