আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
জীবনযাপনস্বাস্থ্য টিপস

বুক ব্যথায় করণীয় | হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে কী করবেন

বুক ব্যথা এবং হার্ট: আমাদের বুকের অনেকটা মাঝ বরাবর হার্টের অবস্থান। মায়ের গর্ভে থাকাকালীন অবস্থায় এর গঠন সমাপ্ত হয়। সারাশরীরে নিরন্তর রক্ত পাম্প করাই এর কাজ। অর্থাৎ হার্ট শরীরে রক্ত চলাচল বা পুষ্টি সরবরাহ নিয়ন্ত্রণ করে। যদি কোনও কারণে হার্ট সঠিক নিয়ম অর্থাৎ ছন্দে রক্ত পাম্প করতে না পারে, তবে রক্ত সরবরাহ বিঘ্নিত হয়ে দেহের যে কোন অঙ্গের এমনকি হার্টের মাংসপেশিরও ক্ষতিসাধন হতে পারে। এ অবস্থায় বুকেব্যথা অনুভব হবে, তবে দীর্ঘদিনের বা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিক রােগীর হার্টের সমস্যায় ব্যথা নাও থাকতে পারে। তাই ডায়াবেটিসকে বলা হয় সাইলেন্ট কিলার বা নীরব ঘাতক।

বুকের ব্যথা বােঝার উপায়

সাধারণত যে কোনও ধরনের পরিশ্রম করলে বা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলে বা এক্সারসাইজ করলে বুকে ব্যথা হয়। এ কাজ থেকে বিরত থাকলে বা পরিশ্রম কমিয়ে দিলে ব্যথা আস্তে আস্তে কমে যায়। এ থেকে হার্টের ব্যথা নিশ্চিতভাবে বােঝা যায়। এ ব্যথায় আক্রান্ত রােগীর মনে হবে যেন দম আটকে আসছে বা বুকের মধ্যে ভারি ওজন কেউ দিয়ে চেপে আছে বা বুক চেপে আসছে বা মৃত্যু আসন্ন। এমন হলে বােঝা যায়, তার একিউট বা হঠাৎ অ্যাটাক হয়েছে।

এ অবস্থায় নিকটস্থ চিকিৎসক বা হাসপাতালে কিংবা হৃদরােগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া বাঞ্ছনীয়। ব্যথা বুকের বাম বা ডান যে কোনও পাশে হতে পারে। অনেকের ধারণা, হার্ট দেহের বাম পাশে বেশি অংশ থাকে বলে শুধুমাত্র বামপাশে ব্যথা হলেই তা হার্টের ব্যথা- যা ঠিক নয়। এ ব্যথা রেডিয়েট বা ছড়িয়ে যেতে পারে। নিচের চোয়ালে, ডান বা বাম হাতে বা গলার কাছে ব্যথা আসতে পারে। কারও যদি উপরের যে কোনও এক একাধিক লক্ষণ থাকে, তবে মােটামুটি নিশ্চিত হওয়া যায় তিনি হার্টের সমস্যায় ভুগছেন।

বুকব্যথা মানেই কি হার্টের ব্যথা

বুকব্যথা আরও অনেক কারণে হতে পারে। মনে রাখবেন, এ ব্যথাগুলাের কোনওটাই মৃত্যুঝুঁকি বয়ে আনে না। তবে এর যথাযথ চিকিৎসা প্রয়ােজন। যেমন

  • মাংসপেশি ও হাড় থেকে, শ্বাস-প্রশ্বাস বা ফুসফুসের কোনও কারণে এবং বুকের নিচে পেটের কোনও কারণে, উঠলেবসলে, একাত-ওকাত হলে, নড়াচড়া করলে, শােয়া থেকে বসা বা বসা থেকে উঠলে যদি ব্যথা হয়, তবে ধারণা করা যায়, এটি মাংসপেশি বা হাড়জনিত কোনও ব্যথা।
  • শ্বাসের সঙ্গে যদি ব্যথা কম-বেশি থাকে তবে ফুসফুসের কোনও সমস্যা থেকে এ ব্যথা হতে পারে।
  • পেটে-বুকে জ্বালাপােড়া ভাবের সঙ্গে ব্যথা কিংবা খাওয়ার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত যেমন- খালি বা ভরা পেটে ব্যথা হলে বা বুকের মাঝখানে জ্বালা থেকে ব্যথা হলে ধরে নেয়া যায় এটি খাদ্যনালী বা পাকস্থলীজনিত কোনও ব্যথা।

তবে হার্টজনিত ব্যথাই সবচেয়ে মারাত্মক। কারণ এ থেকে মৃত্যুঝুঁকি থাকে, তাই একে গুরুত্বের সঙ্গে নিতে হবে।

কারা হার্টের ব্যথায় আক্রান্ত হতে পারে

  • যাদের বয়স ৪০-এর ওপর।
  • মহিলাদের চেয়ে পুরুষদের সাধারণত হার্টের সমস্যা বেশি হয়ে থাকে।
  • যারা ধূমপায়ী। ধূমপান রক্তনালীর দেয়াল পুরু করে রক্তনালী চিকন করে দেয়। ফলে রক্ত সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটে।
  • যাদের অনিয়ন্ত্রিত বা বেশি মাত্রায় ডায়াবেটিস আছে।
  • যাদের উচ্চরক্তচাপ বা হাইপারটেনশন আছে।
  • যাদের রক্তে উচ্চমাত্রায় কলেস্টেরল আছে।
  • যারা ব্যায়াম করেন না।
  • যারা অলস জীবনযাপনে অভ্যস্ত।
  • যাদের ফিজিক্যাল একটিভিটি কম।

তবে এ ফ্যাক্টর বা ফ্যাক্টরগুলাে না থাকলেও কারও হার্টের সমস্যা হতে পারে।

যেভাবে হৃদরােগ শনাক্ত করা হয়

হৃদরােগ বিশেষজ্ঞরা রােগীকে পরীক্ষা করেন এবং রােগের লক্ষণ ও ইতিহাস জেনে হৃদরােগ নির্ণয় করে থাকেন। এক্ষেত্রে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়ােজন হয়ে থাকে। যেমন:

  • ইসিজি – এটি কোনও সূক্ষ্ম পরীক্ষা বা কনফারমেটরি টেস্ট নয়। প্রাথমিকভাবে রােগ নির্ণয়ে ইসিজি সাহায্য করে।
  • এক্সারসাইজ টলারেন্স টেস্ট বা ইটিটি – এর সাহায্যে হার্টের কন্ডিশন বা পারফরমেন্স ভালােভাবে জানা যায়।
  • করােনারি এনজিগ্রাম – এর সাহায্যে হার্টের রক্তনালীগুলাে কী অবস্থায় আছে অর্থাৎ চেপে গেছে কিনা বা ব্লক আছে কিনা তা বােঝা যায়।

রক্তনালী বেশি চেপে গেলে বেলুন করে রিং লাগানাে হয়, কোনও কোনও ক্ষেত্রে অপারেশনের প্রয়ােজন হতে পারে। এছাড়া আরও কিছু রুটিন টেস্টের দরকার হয়।

হৃদরােগ কি প্রতিরােধ করা যায়?

হৃদরােগ অনেক ক্ষেত্রেই প্রতিরােধযােগ্য। এ জন্য যা করতে হবে তা হল

  • ধূমপান থেকে বিরত থাকতে হবে।
  • উচ্চরক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • ডায়াবেটিস পূর্ণমাত্রায় নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।
  • রক্তের কলেস্টেরলের মান স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে হবে।
  • নিয়মিত ব্যায়াম করার অভ্যাস করতে হবে।

হঠাৎ বুকে ব্যথা হলে কী করবেন

প্রথমেই নিশ্চিত হতে হবে, এটি হৃদরােগজনিত ব্যথা কিনা। এ জন্য হৃদরােগ বিশেষজ্ঞের সঙ্গে অবশ্যই কনসাল্ট করতে হবে। হার্টের কারণে ব্যথা হলে রক্ত সরবরাহ বাড়ানাের ব্যবস্থা করতে হবে। এ জন্য নাইট্রেট জাতীয় ওষুধ যেমন নাইট্রোগ্লিসারিন জিহ্বার নিচে দিলে হার্টে রক্ত সরবরাহ সাময়িকভাবে বাড়ানাে যায়। মনে রাখবেন, হঠাৎ কারও এ সমস্যা হলে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়াই নাইট্রোগ্লিসারিন ব্যবহার করা ঠিক হবে না। অনেকে এ অবস্থায় নিজে থেকে অ্যাসপিরিন জাতীয় ওষুধ খেয়ে নেন। পেটের সমস্যা থেকে এ ব্যথা হলে অ্যাসপিরিনে হিতে বিপরীত হবে। তাৎক্ষণিক চিকিৎসার জন্য নিকটস্থ ডাক্তার বা হাসপাতালে যেতে হবে।

হৃদরােগের চিকিৎসা

এর চিকিৎসায় প্রথমেই প্রতিরােধের উপায়ের দিকে নজর দিতে হবে। হার্টডিজিজের রােগীদের দীর্ঘসময় এমনকি আজীবন এসপিরিন বা ক্লোপেডিগ্রিল জাতীয় ওষুধ খেতে বলা হয়। এসপিরিনে কারও কারও এসিডিটির সমস্যা দেখা দিলে এন্টিআলসারেন্ট ওষুধ খেতে হয়। এছাড়া হেপারিন জাতীয় ওষুধেরও প্রয়ােজন হতে পারে। এ ওষুধ বাংলাদেশের সর্বত্র এমনকি উপজেলা পর্যায় পর্যন্ত পাওয়া যায়। এছাড়া অন্যান্য ওষুধের সাহায্যে হৃদরােগের চিকিৎসা করা হয়।

টাইম ইজ মাসেল

হৃদরােগ চিকিৎসায় একটি বহুল ব্যবহৃত বাক্য আছে, তা হল টাইম ইজ মাসেল। অর্থাৎ হার্ট অ্যাটাক হওয়ার পর বা ব্যথা শুরু হওয়ার পর যত তাড়াতাড়ি হাসপাতালে যাওয়া যাবে তত হার্টের মাংসপেশির নেক্রোসিস বা ক্ষয় হওয়া রােধ করা যাবে। বলা হয় ৬-১২ ঘণ্টার মধ্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার বা বিশেষায়িত হাসপাতালে রােগীকে নিয়ে যেতে হয়।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button