আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়

বাংলায় ইউরােপীয়দের আগমন ও ঔপনিবেশিক শাসনের পটভূমি

বিদেশি কর্তৃক কোনাে দেশ দখল করে শাসন প্রতিষ্ঠা করলেই তাকে ঔপনিবেশিক শাসন বলা হয় না। ঔপনিবেশিক শাসনের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে দখলদার শক্তি চিরস্থায়ীভাবে শাসন প্রতিষ্ঠা করতে আসে না। তারা জানে একদিন এই শাসনের পাট উঠিয়ে তাদের ফিরে যেতে হবে নিজ দেশে ।

তবে দখলদার শক্তি যতদিন শাসক হিসাবে থাকবে ততদিন সেই দেশের ধন-সম্পদ নিজদেশে পাচার করবে। তারপর যখন তাদের শাসনের বিরুদ্ধে স্থানীয় মানুষ বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠবে বা অন্য কোনাে কারণে অন্যের দেশ শাসন করা আর লাভজনক মনে হবে না তখন ফিরে যাবে নিজ দেশে। এভাবে অন্য কোনাে দেশের উপর দখলদারদের আধিপত্যই হচ্ছে উপনিবেশ স্থাপন। আর উপনিবেশ প্রতিষ্ঠা করা এই শাসনকে বলা হয় ঔপনিবেশিক শাসন।

প্রথমে বাংলা এবং পরে ভারত উপমহাদেশে ইংরেজরা যে শাসন প্রতিষ্ঠা করে তার বৈশিষ্ট্য উপরে উল্লিখিত ধারণার সাথে মিলে যায়। এ কারণে বাংলা ও ভারতে প্রতিষ্ঠিত ইংরেজ শাসনকে বলা হয় ঔপনিবেশিক শাসন। ইংরেজ আগমনের অনেক আগে থেকেই বাংলাদেশে বহিরাগত শক্তি প্রবেশ করেছিল ।

ধনসম্পদের আকর্ষণেই সকলের দৃষ্টি ছিল বাংলার দিকে। খ্রিষ্টপূর্ব যুগে বহিরাগত আর্যরা বাংলায় প্রবেশ করেছিল। কিন্তু আর্যরা এখানে কোনাে শাসন প্রতিষ্ঠা করে নি। খ্রিষ্টপূর্ব তৃতীয় শতকে বাংলার উত্তরাংশ দখল করেন ভারতের মৌর্য সম্রাট অশােক। সে সময় পুণ্ড্রবর্ধনভুক্তি উত্তরবাংলা মৌর্যদের প্রদেশ হয়। মৌর্যদের পর ভারতে প্রতিষ্ঠিত হয় গুপ্ত সাম্রাজ্য। চার শতকে উত্তর বাংলা ও দক্ষিণপূর্ব-বাংলার কিছু অংশ গুপ্ত সাম্রাজ্যের অধিকারে এসে যায়।

গুপ্তদের পতনের পর সপ্তম শতকে উত্তর বাংলায় প্রথম বাঙালি শাসক শশাঙ্ক কর্তৃক স্বাধীন রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে শশাঙ্কের রাজত্ব দীর্ঘস্থায়ী ছিল না। তার মৃত্যুর পর একশ বছর ধরে অরাজকতা চলতে থাকে বাংলায়। যাকে সংস্কৃত ভাষায় বলা হয় মাৎস্যন্যায় যুগ। এরপর বাঙালির দীর্ঘস্থায়ী রাজ্য প্রতিষ্ঠিত হয় আট শতকের মাঝ পর্বে। প্রায় চারশ বছর শাসন করেন বাঙালি পাল রাজারা। পালদের পতনের পর এগার শতকের শেষ দিকে আবার বিদেশি শাসনের অধীনে চলে যায় বাংলা। দক্ষিণ ভারতের কর্নাটক থেকে আসা সেন রাজারা দখল করে নেন বাংলার সিংহাসন।

সেনদের শাসনের অবসান ঘটে বহিরাগত মুসলমান শক্তির হাতে। তুর্কি সেনাপতি ইখতিয়ার উদ্দিন মােহাম্মদ বখতিয়ার খলজি রাজা লক্ষণসেনকে পরাজিত করে বাংলার এক ছােট্ট অংশ দখল করেন। ১২০৪ থেকে ১২০৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত বাংলার পশ্চিমে নদীয়া ও উত্তর বাংলার কিছুটা অংশ বখতিয়ার খলজির দখলে ছিল।

নদীয়া ও উত্তর বাংলায় তুর্কি শাসন প্রতিষ্ঠিত হলেও পূর্ববাংলা আরও অনেক সময় পর্যন্ত সেন শাসকদের অধীনে ছিল। তবে বখতিয়ার খলজির মাধ্যমে বাংলায় তুর্কি সুলতানদের শাসনের পথ প্রশস্ত হয়েছিল। ১২০৬ সালে বখতিয়ার খলজির মৃত্যুর পর থেকে ১৩৩৮ সাল পর্যন্ত বাংলা জুড়ে মুসলিম শাসনের বিস্তার ঘটতে থাকে। এ সময়ের মধ্যে বাংলার তিনটি অংশে দিল্লির মুসলিম সুলতানদের তিনটি প্রদেশ বা বিভাগ প্রতিষ্ঠিত হয়। বিভাগগুলােকে ফারসি ভাষায় ‘ইকলিম’ বলা হতাে। এই ইকলিমগুলাে উত্তর বাংলায় লখনৌতি, পশ্চিম বাংলায় সাতগাঁও এবং পূর্ব বাংলায় সােনারগাঁও নামে পরিচিত ছিল।

১৩৩৮ সালে সােনারগাঁওয়ের শাসনকর্তা ফখরউদ্দিন মুবারক শাহ দিল্লির মুসলমান সুলতানদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে স্বাধীনতা ঘােষণা করেন। এভাবে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলায় দুইশ বছরের স্বাধীন সুলতানি যুগ পর্ব। ১৫৩৮ সালে অবসান ঘটে বাংলার স্বাধীন সুলতানি শাসনের। সুলতানগণ বহিরাগত অবাঙালি শাসক হলেও এদেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং কেউ নিজ দেশে ফিরে যান নি। অবশ্য এর আগেই বিদেশি মােগলরা। দিল্লি দখল করেছিল।

মােগল সম্রাট হুমায়ুন ১৫৩৮ সালে উত্তরবাংলার গৌড় অর্থাৎ ইকলিম ও লখনৌতি দখল করলেও বাংলায় তখন মােগল শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারেন নি। এর কারণ বিহারের আফগান শাসক শের খান হুমায়ুনকে প্রথমে বাংলা ও পরে ভারত থেকে বিতাড়িত করেন। এ পর্বে অবাঙালি আফগানদের হাতে চলে যায় বাংলার সিংহাসন। ভারতে মােগলরা আবার সংগঠিত হয় এবং দিল্লির সিংহাসন পুনুরুদ্ধার করেন। এরপর সম্রাট আকবরের সময় ১৫৭৬ সালে পশ্চিম বাংলা ও উত্তর বাংলার অনেকটা অংশ মােগলদের অধিকারে আসে।

পূর্ববাংলা অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশ অংশ সহজে দখল করতে পারে নি মােগলরা। বারােভূঁইয়া নামে পরিচিত পূর্ববাংলার জমিদাররা একযােগে মােগল আক্রমণ প্রতিহত করেন। আকবরের সেনাপতি মানসিংহ কয়েকবার চেষ্টা করেও বারােভূঁইয়াদের নেতা ঈশা খাঁকে পরাজিত করতে পারেন নি।

সম্রাট জাহাঙ্গীরের আমলে ১৬১০ সালে মােগল সুবেদার ইসলাম খান চিশতি চূড়ান্তভাবে বারােভূঁইয়াদের পরাজিত করে ঢাকা অধিকার করেন এবং তৎকালীন দিল্লির সম্রাট জাহাঙ্গীরের নাম অনুসারে জাহাঙ্গীরনগর নামকরণ করেন। এভাবেই বাংলায় মােগল অধিকার সম্পন্ন হয়। এই বিদেশি মােগল শাসন চলে আঠার শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত। ১৭৫৭ সালে পলাশির যুদ্ধে নবাব সিরাজউদৌল্লার পতনের মধ্য দিয়ে মােগল শাসনের চূড়ান্ত অবসান ঘটে। সেই সাথে বাংলার ক্ষমতা দখল করে আরেক বিদেশি শক্তি। এভাবে শুরু হয় ইউরােপীয় শক্তির শাসন।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button