আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
বাংলাদেশ বিষয়াবলী (লিখিত)

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনের প্রভাব

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মহান বিজয় অর্জনের পিছনে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের ভূমিকা ছিল উল্লেখ করার মতাে। মূলত পাকিস্তানের রাজনৈতিক মৃত্যু ঘটে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়েই । নিচে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের তাৎপর্য আলােচনা করা হলাে :

বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিজয়

বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ভাষা ওসংস্কৃতিভিত্তিক বাঙালি জাতীয়তাবাদী চেতনার যে বীজ অঙ্কুরিত হয় তা ১৯৫৪ সালের নির্বাচন, ১৯৬৬ সালের ছয় দফা, ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থান এবং সর্বশেষ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়। ১৯৭০ সালের নির্বাচনের বাঙালি জাতীয়তাবাদের অনুপ্রেরণাই বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে শক্তি যােগায়।

শােষণ থেকে মুক্তির চেতনা অর্জন

১৯৪৭ সালে পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী পূর্ব বাংলার জনগণের উপর বিমাতাসুলভ আচরণ শুরু করে। এহেন শােষণের প্রেক্ষাপটে ১৯৭০ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচন বাঙালি জনগণকে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসন শােষণ থেকে মুক্তির আগ্রহকে বলিষ্ঠতর করে তােলে। নির্বাচনের ফলাফল এ চেতনাকে আরাে সুপ্রতিষ্ঠিত করে।

পশ্চিম পাকিস্তানের কর্তৃত্ব হ্রাস

১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে আওয়ামী লীগ বিপুল ভােটে নির্বাচিত হলে পূর্ব পাকিস্তানের উপর কেন্দ্রীয় সরকারের কর্তৃত্ব হাস পেতে থাকে। পূর্ব পাকিস্তান তখন শেখ মুজিবের নির্দেশে পরিচালিত হতে থাকে, যা পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর জন্য ছিল চরম অবমাননাকর ও ঈর্ষণীয়।

সংগ্রামী মনােভাবের সৃষ্টি

১৯৭০ সালে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের কাছে ইয়াহিয়া ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা শুরু করেন। এর ফলে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ সংগ্রামী হয়ে পড়ে। শুরু হয় অসহযােগ আন্দোলন, যা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনে রূপ নেয়।

রাজনৈতিক নেতৃত্বের সৃষ্টি

১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে রাজনৈতিক নেতৃত্বের সৃষ্টি হয়। শেখ মুজিবের রাজনৈতিক নেতৃত্ব বিকাশ লাভ করে । জনগণ তাকে ব্যাপকভাবে সমর্থন করে।

আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল সৃষ্টি

রাজনৈতিক নেতৃত্ব যে কোনাে জাতি গােষ্ঠীর জন্য আশীর্বাদ স্বরূপ। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দলগুলাে নির্বাচনে ভালাে ফল করে। অপরদিকে পশ্চিম পাকিস্তানে শুধু সেখানকার রাজনৈতিক দলগুলাে ভালাে করে। ১৯৭০ সালের নির্বাচন ছিল প্রকৃতপক্ষে আঞ্চলিক নির্বাচন এবং এ নির্বাচনকে নিয়ন্ত্রণ করেছে আঞ্চলিক দলসমূহ।

স্বাতন্ত্র্যবােধের বহিঃপ্রকাশ

পাকিস্তানের উভয় অংশের শিক্ষা, সংস্কৃতি, রাজনৈতিক | ভিন্নতা প্রভৃতির ভিত্তিতে যে স্বাতন্ত্র বিদ্যমান ১৯৭০ সালের নির্বাচনের মাধ্যমে তা প্রতিভাত হয়ে ওঠে। ফলে বাঙালিরা নিজেদের আলাদা করে ভাবতে শিখে।

পাকিস্তানের মৃত্যুর বার্তাবাহক

১৯৭০ সালের নির্বাচনের ফলাফলের দিকে লক্ষ্য করলে দেখা যায়, আওয়ামী লীগ পশ্চিম পাকিস্তান থেকে কোনাে আসন লাভ করতে পারেনি আবার পিপলস্ পার্টি পূর্ব পাকিস্তানের কোনাে আসনই লাভ করতে পারেনি। তাই বলা যায়, এই নির্বাচন যুক্ত পাকিস্তানের মৃত্যুবার্তা বহন করে।

পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর প্রত্যাশা ব্যর্থ

পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠীর ধারণা ছিল আওয়ামী লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পেয়ে অন্যান্য দলের সাথে কোয়ালিশন গঠনে বাধ্য হবে। কিন্তু আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ফলাফল পাকিস্তানিদের প্রত্যাশা ব্যর্থ করে দেয় ।

প্রকাশ্য দ্বন্দ্ব সৃষ্টি

১৯৭০ সালের নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত দুই পাকিস্তানের মাঝে আড আৰ|লে যে ঘন বিদ্যমান ছিল তা প্রকাশ্যে রূপ নেয় নির্বাচনের ফলাফল প্রকাশের ১৯৭০ সালের নির্বাচনের অভূতপূর্ব সাফল্যে ঈষান্বিত হয়ে পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকবর্গ পূর্ববাংলার জনগণের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য দ্বন্দে মেতে উঠে।

আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি

শােষিত-লাঞ্ছিত, নির্যাতিত ও নিপীড়িত পূর্ববাংলার জনমনে ১৯৭০ সালের নির্বাচন আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধি করে। আর এ আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়েই বাঙালিরা বাধিকার আদায়ের সগ্রামে ঝাপিয়ে পড়ে।

অধিকার আদায়

পূর্ববাংলার জনগণ ১৯৭০ সালের নির্বাচনের পূর্ব পর্যন্ত শিক্ষাদীক্ষা, চাকরি, ব্যবসা-বাণিজ্য সকল ক্ষেত্রেই বঞ্চিত ছিল। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে জয়লাভের মধ্য দিয়ে পূর্ব বাংলার অধিকার বঞ্চিত জনগণ অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবতীর্ণ হয়।

পরিশেষে বলা যায় যে, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগই শুধু বিজয়ী হয়নি সেই সঙ্গে বিজয়ী হয়েছে পূর্ব বাংলার মানুষের মুক্তির চেতনা। পাকিস্তানের উভয় অংশের বৈসাদৃশ্য। ঢকে রাখার যে প্রবণতা ছিল তা ছিন্ন ভিন্ন হয়ে যায় এই নির্বাচনের ফলাফলে। তাই বাঙালি জাতির ইতিহাসে ১৯৭০ সালের নির্বাচনের গুরুত্ব ব্যাপক।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button