আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
এসএসসিবাংলা রচনা সম্ভার

নৌকায় ভ্রমণের একটি অভিজ্ঞতা

নৌকায় ভ্রমণের একটি অভিজ্ঞতা

ভূমিকা :

আমি শহরেই জন্মেছি। বড় হয়েছি এই শহরেই। যদিও আমাদের গ্রামের বাড়ি আড়িয়াল খাঁ নদীর তীরে। ছােটবেলায় মা আমাকে নিয়ে একবার নানার বাড়ি বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেটা আমার স্মৃতিতে থাকার কথা নয়। বাসে, ট্রেনে ভ্রমণের অনেক অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার, কিন্তু নৌকাভ্রমণের কোনাে অভিজ্ঞতা হয়নি। সেই সুযােগও একদিন এসে গেল। আমার ছােটমামার বিয়ে উপলক্ষে নৌকাযােগে গ্রামের বাড়িতে গেলাম। সপরিবারে যাচ্ছি বলে বড়মামা একটা বালাম নৌকা ঠিক করে রেখেছিলেন আগের দিন।

যাত্রার বিবরণ :

খুব ভােরে ঘুম থেকে উঠে দেখি মা সবকিছু ঠিকঠাক করে রেখেছেন। ছােটবােন ফারহানাও তার লাল জামাটা পরে প্রস্তুত। বড়মামা কাপড়ের ব্যাগ, টিফিন কেরিয়ার ইত্যাদি গুছিয়ে ফেলেছেন। বাবা অফিস থেকে ছুটি পাননি বলে আমাদের সাথে যেতে পারছেন না। সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ আমরা নৌকায় গিয়ে উঠলাম। প্রথমদিকে মায়ের কড়া শাসনে আমি চুপচাপ ছইয়ের মধ্যে বসে থাকলাম। কারণ আমি তাে সাঁতার জানি না। কিছুটা ভয়ও লাগছে। তবে শরতের নদী বলে বেশ শান্ত।

ছােট ছােট ঢেউয়ে নৌকা দুলছিল। শুয়ে শুয়ে ছইয়ের ফাঁক দিয়ে নীল আকাশ দেখতে থাকলাম। শরতের আকাশ যে এত নীল হয়, তা আজই আমি প্রথম অনুভব করলাম। সাদা সাদা তুলাের মতাে হালকা মেঘ ভেসে যাচ্ছে। দূরে উড়ে যাচ্ছে গাঙচিল, মাছরাঙা, বকের সারি। মাঝে মাঝে ভট ভট শব্দ করে ঢেউ তুলে ছুটে যাচ্ছে পাশ দিয়ে লঞ্চ, স্পিডবােট। বড়মামা টু-ইন-ওয়ানে সতীনাথ মুখােপাধ্যায়ের গান শুনছেন- মরমিয়া তুমি চলে গেলে, দরদিয়া আমার…।’ বড়ই দরদ দিয়ে গাওয়া গানের সুর আমাকেও ক্ষণিকের জন্য তন্ময় করে ফেলেছে।

ফারহানা মায়ের চোখকে ফাঁকি দিয়ে মাঝে মাঝে হাত ডুবিয়ে দিচ্ছে নদীর পানিতে। আমারও ইচ্ছে হচ্ছে নদীর পানিতে হাত ডুবিয়ে খেলা করতে। কিন্তু মাকে বলতেই মা প্রচণ্ড এক ধমক দিলেন। আমাকে ধমক দিতে দেখে মামা মহাকৌতুকে হেসে উঠলেন। আমি ভীষণ লজ্জা পেলাম। মা মনে করে আমি এখনাে ছােট্টটি রয়ে গেছি।।

নৌকার মাঝি চারজন। বেশ দক্ষ মাঝি বােঝা যায়। খালি গা, কোমরে গামছা বাঁধা। মাথায় একটা পুরনাে কাপড় পেঁচানাে। নৌকাখানাও বেশ দশাসই। দুইপাশে চ্যাপটা গলুই। মাঝখানে ছবির মতাে ছই উঠানাে। কাঠের পাটাতনের ওপর হােগলা বিছানাে, তার ওপর একটা পাতলা কাঁথা বিছিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাতে একাধিক বালিশ পাতা আছে। একপাশে একটা মাটির চুলা। সম্ভবত মাঝিরা এখানে রান্না করে খায়। নৌকা তখন মাঝনদীতে।

কুলুকুলু ঢেউ, ছলাৎ ছলাৎ শব্দে গলা মিলিয়ে গান ধরল মাঝি
আমি গহিন গাঙের নাইয়া, আমি গহিন গাঙের নাইয়া
আমি এপার হতে ওপারে যাই বাইয়া রে আমি,…

আমার মনে হচ্ছিল আমি যেন ছায়াছবির কোনাে দৃশ্য দেখছি। ততক্ষণে পালে হাওয়া লেগেছে। দূরে ছােট ছােট দোকানপাট, হাট-বাজার, দালান-ঘর, বাড়ি, গাছপালা দেখতে পেলাম। পেছনে আবছা ছায়ার মতাে দিগন্ত। নদীর ঘাটে কেউ কাপড় ধুচ্ছে, মেয়েরা ঘােমটা মাথায় থালাবাসন মাজছে, কেউ-বা শিশুকে গােসল করাচ্ছে, ভরা কলসি কাঁখে নিয়ে হেঁটে যাচ্ছে গ্রাম্য বধূ। কিশাের দামাল ছেলেরা নদীর ঘােলা জলে লাফালাফি করছে, কেউ-বা সাঁতার কাটছে। জেলেরা জাল বাইছে। কেউ গরু গােসল করাচ্ছে নদীর জলে।

এক জায়গায় দেখলাম একসাথে অনেকগুলাে সারিবাঁধা নৌকা। কোনাে কোনাে নৌকা থেকে ধোঁয়া উড়ছে। ছইয়ের ওপর রােদে দেওয়া শাড়ি। বড়মামা বললেন, ওগুলাে বেদের নৌকার বহর। বেলা তিনটার দিকে আমরা তালতলির ঘাটে গিয়ে পৌছলাম। তালতলির বাজারটা ঘুরে দেখা আমার খুব শখ। তালতলির বাজারে একটা ভাঙাচোরা চায়ের স্টলে চা খেলাম। গরুর খাটি দুধের চা। আমার কাছে অমৃতের মতাে লেগেছে।

এখান থেকে আমাদের নৌকা ধলেশ্বরী হয়ে একটা ছােট খালে প্রবেশ করল। দুপাশে শান্ত সুন্দর বাড়িঘর। মাঝে মাঝে বর্ষার পানিতে ভেসে থাকা সবুজ ধানখেত, কচুরিপানার রঙিন ফুল আর জলজ উদ্ভিদের মদির গন্ধ, পানকৌড়ি আর ডাহুকের ডাক, ভেসে বেড়ানাে হাঁসের দল, কাশফুলের শুভ্র হাতছানি সব মিলে বাংলার অপরূপ রূপ দেখে আমি মুগ্ধ। মনে মনে বললাম ‘সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে। সার্থক আমার নৌকা ভ্রমণ।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.
Back to top button