আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
নৃবিজ্ঞান

নৃবিজ্ঞানের আবির্ভাব এর প্রথাগত ইতিহাস

নৃবিজ্ঞানের আবির্ভাব এর প্রথাগত ইতিহাস

নৃবিজ্ঞানের আবির্ভাব : স্বতন্ত্র জ্ঞানকাণ্ড হিসেবে আবির্ভূত হওয়ার বহু পূর্বেই নৃবৈজ্ঞানিক কৌতুহল তৈরি হয়—নিচে বর্ণিত নৃবিজ্ঞানের ইতিহাসের একটি প্রধান ভাবনা এটি। এই লিখিত ইতিহাসকে স্রোতের বিপরীতে পড়লে একাধিক বিষয় চোখে পড়ে: নৃবৈজ্ঞানিক জ্ঞানের ইউরােকেন্দ্রিকতা (জ্ঞান-অন্বেষণের যাত্রা ইউরােপ হতে শুরু; শুধু তাই নয়, পশ্চিম হচ্ছে জ্ঞান-অন্বেষণকারী, এবং তদ্বিপরীতে, অ-পশ্চিম হচ্ছে জ্ঞানের কাঁচামাল), কিন্তু শুধু তাই নয়, বর্ণিত এই নৃবৈজ্ঞানিক ইতিহাস বিশ্ব-ইতিহাসে গ্রথিত, যেটি খােদ ইউরােকেন্দ্রিক; লক্ষণীয় যে এই প্রবণতা নৃবিজ্ঞান-বিশিষ্ট নয়, পশ্চিমা ধাঁচে গড়ে তােলা শিক্ষা ব্যবস্থায় সকল শাস্ত্রীয় জ্ঞানের যাত্রা মাত্রই গ্রীস/পশ্চিম হতে শুরু।

এখানে যে ইতিহাস বর্ণিত সেটি দ্বন্দ্ব ও সংঘাতবিহীন। শুধু তাই নয়, নৃবিজ্ঞানের বিষয়বস্তু—আদিম, বর্বর মানুষ বিলুপ্ত হওয়ার প্রধান কারণ যে পশ্চিমা আগ্রাসন সেটি অনুচ্চারিত (উদাহরণস্বরূপ, কলাম্বাসের নতুন বিশ্ব জয়ের পরবর্তী বছরগুলােতে ১০ মিলিয়ন নেটিভ আমেরিকান হয় গণহত্যা কিংবা অনাহার কিংবা রােগাক্রান্ত হয়ে মারা যান)। একটি মজার ব্যাপার লক্ষ্য করবেন: ১৯৬০-১৯৭০ দশকগুলােতে পশ্চিমা নৃবিজ্ঞানীদের স্ব-জাতিকেন্দ্রিকতা মৃদু সমালােচনার সম্মুখীন হচ্ছিল । নিচের ইতিহাস-বর্ণনায়, এই বিষয়টিকে গুরুত্বের সাথে আলােচনা না করে বরং একটি পাল্টা যুক্তি দাঁড় করানাে হয়: স্ব-জাতিকেন্দ্রিকতা সকল সংস্কৃতিতে পরিলক্ষিত, এবং এটিই স্বাভাবিক। নিচের ইতিহাসে আরাে বহু পক্ষপাতিত্ব রয়েছে যা। নিশ্চয়ই আপনার চোখে পড়বে।

ইউরােপ ও মধ্যপ্রাচ্যের ধ্রুপদী সভ্যতায় নৃবিজ্ঞানের উৎস খুঁজে পাওয়া সম্ভব। গােড়ার দিকের ভ্রমণকারী ও দার্শনিকগণ লক্ষ্য করেন যে এক স্থান হতে আরেক স্থানের সমাজ ব্যবস্থায় যেমন ভিন্নতা রয়েছে, তেমনি আচারপ্রথা, ধর্মীয় বিশ্বাস, সামরিক কৌশল, ভাষা এবং মনুষ্য শরীরের আকার-আকৃতি, রঙ ইত্যাদিতেও রয়েছে ভিন্নতা। এই পর্যবেক্ষণ মানুষের উৎপত্তি এবং মানব সমাজের প্রকৃতি ও বিকাশ সম্পর্কে নানান ভাবনা-চিন্তা, জল্পনা-কল্পনার জন্ম দেয় যেগুলাে, হান্টার এবং হুইটেন-এর মতে (Hunter and Whitten ১৯৭৬, ১২-১৩), বিংশ শতকের আধুনিক নৃবিজ্ঞানে আনুষ্ঠানিকভাবে জায়গা পায়।

সম্ভবত নৃবৈজ্ঞানিক দৃষ্টিভঙ্গি সর্বপ্রথম উচ্চারিত হয় জেনােফেইনস (৫৭০-৪৭৫ খ্রি. পূ.) দ্বারা । গ্রীক এই মানুষটি বহু স্থানে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে যান; দার্শনিকদের মধ্যে তিনিই প্রথম যিনি এ ধারণাটি প্রকাশ করেন যে সমাজ হচ্ছে মানুষের সৃষ্টি। জেনােফেইনস পুরাণের সত্যতা অস্বীকার করেন; তার যুক্তিতর্ক ছিল, ঈশ্বরও মানুষের ছাঁচে তৈরি এবং ধর্ম হচ্ছে সামাজিকভাবে উৎপাদিত । হেরােডােটাস (৪৮৪-৪২৫ খ্রি. পূর্ব) হচ্ছেন সর্বাপেক্ষা পরিচিত ভ্রমণকারী এবং বিভিন্ন সামাজিক রীতি-নীতির নথিভুক্তকারী। তাঁর লেখায় মেলে পঞ্চাশটি জনসমষ্টির জীবনধারার বর্ণনা।

যদিও তাঁর অনুসৃত বর্ণনা ও বিশ্লেষণ পদ্ধতি তেমন সূক্ষ্ম নয়, তাঁর দৃষ্টি আধুনিক মানদণ্ড পূরণ করে সেটির পরিব্যাপ্তির কারণে তিনি প্রথম ব্যক্তি যিনি সুসংগঠিতভাবে লিখিতরূপে রেখে গেছেন কোনাে জনসমষ্টির প্রতিবেশ, তাদের দৈহিক বৈশিষ্ট্য, ভাষা, প্রতিষ্ঠান, প্রথা, আইন, রাজনৈতিক সংগঠন, সামরিক অনুশীলন, রাজনৈতিক বিশ্বাসের বর্ণনা। যদিও হেরােডােটাস মনে করেন যে তাঁর দেখা আর সকল জীবনধারার তুলনায় গ্রীকটিই হচ্ছে সর্বোৎকৃষ্ট, তিনি এটিও স্বীকার করেন যে প্রতিটি জনগােষ্ঠী মােতাবেক তার নিজেরটাই সবচাইতে ভাল হিসেবে বিবেচিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। এই উচ্চারণের মাধ্যমে তিনি নৃবিজ্ঞানের একটি মৌলিক প্রস্তাবনা ব্যক্ত করেন: সকল মনুষ্য জনগােষ্ঠী স্ব-জাতিকেন্দ্রিক (ethnocentric) যারা নিজ জীবনধারাতেই তৃপ্ত, এবং অন্য সংস্কৃতিকে নিজেরটার সাপেক্ষে তুলনা করেন, সাধারণত, নেতিবাচকভাবে ।

প্রাচীনকালের পুরাে সময়টাতে মানব সমাজের প্রকৃতি ছিল ভাবনার বিষয়, তবে তখন নৃবিজ্ঞান একটি স্বতন্ত্র সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে গড়ে ওঠেনি, সেটির জন্য আরাে কিছু শতকের প্রয়ােজন পড়ে। মধ্যযুগীয় ইউরােপেরই দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল স্বর্গের উপর, মর্তের উপর নয় । এভাবে খ্রিস্টীয় ইউরোেপ প্রায় আট শত বছরের সাম্রাজ্যের পতন হতে বারাে শতক পর্যন্ত) প্রাচীন বিজ্ঞজনদের সামাজিক এবং দার্শনিক কল্পনা হতে বিচ্ছিন্ন থাকে। যদিও মধ্যযুগীয় ইউরােপের প্রধান বুদ্ধিবৃত্তিক ঝোঁক সামাজিক ভাবনাবিমুখ ছিল, তা সত্ত্বেও বিভিন্ন ধরনের মানুষজনের প্রতি ধীরে ধীরে আগ্রহ জন্মায়, যাদের সম্বন্ধে বণিক, আবিষ্কারক, খ্রিস্টীয় যাজকদের কল্যাণে লিখিত বর্ণনা দিন দিন বাড়ছিল কারণ ইউরােপীয় সভ্যতার এই দূতগণ দূরদূরান্তে পাড়ি জমাচ্ছিলেন।

সম্ভবত, মার্কো পােলাে (১২৫৪-১৩২৩) এ ধারার কাজ সবচাইতে ভালভাবে প্রতিনিধিত্ব করেন; তিনি কুবলা খানের দরবারে দীর্ঘ সতের বছর নিযুক্ত ছিলেন এবং এশীয় প্রথা, অনুশীলন এবং সামাজিক অনুষ্ঠানের খুঁটিনাটির আশ্চর্যজনক বর্ণনা প্রদান করেন। | রেনেসাঁর সময়ে ইউরােপের দিগন্ত প্রসার লাভ করে যখন রাজাগণ বিশ্ব বাণিজ্যের সম্ভাবনার ব্যাপারে আগ্রহী হয়ে পড়েন এবং ইউরােপের বাইরে অনুসন্ধিৎসু অভিযানে পৃষ্ঠপােষকতা প্রদান করেন ।

ভ্রমণের বর্ণনাগুলাে অতি উৎসাহে পড়া হতাে, কারণ এতে থাকত অচেনা-অজানা, দূরদূরান্তের মানুষজনের জীবনধারার বর্ণনা। এই প্রতিবেদনের তথ্য (প্রায়শই ভুল-ভালে ভরপুর, ক্ষেত্রবিশেষে বানােয়াট) ব্যবহার করেন সামাজিক তাত্ত্বিকগণ; মৌলিক সামাজিক প্রক্রিয়া অনুধাবনের লক্ষ্যে তারা এই তথ্যের সাহায্যে ‘আদিম’ ও ইউরােপীয় সমাজের তুলনা করেন। তবে, বিজ্ঞান হিসেবে নৃবিজ্ঞান আলােকময়তার (এনলাইটেনমেন্ট) আগে জন্ম লাভ করেনি।

এই সময়টি জন লক-এর (১৬৩২-১৭০৪) উদারনৈতিক, ও টমাস হবস-এর (১৫৮৮-১৬৭৯) নৈরাশ্যবাদী (রাজতন্ত্রসমর্থক) অনুসারীদের মধ্যে বুদ্ধিবৃত্তিক ও রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের সময় হিসেবে পরিচিত। লক তার Essay Concerning Human Understanding-এ (১৬৯০) এমন বহু ধারণা ও প্রত্যয়কে দাঁড় করান যা মানব আচরণের বিংশ শতকের শিক্ষার্থীগণ ব্যবহার করেন: মানব প্রাণী সর্বধারণামুক্ত অবস্থায় (tabula rasg) জন্মগ্রহণ করে এবং তারা যা কিছু শেখে তা দলের সদস্য হিসেবে, সংস্কৃতি গ্রহণের মাধ্যমে, শেখে। সেহেতু, মানব জ্ঞান সংস্কৃতিসাপেক্ষিক, যেমন কিনা রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানদি। লকের দৃষ্টিতে, মনুষ্য সম্ভাবনা অসীম, মহ; এটি পূর্ণভাবে বিকশিত হওয়ার জন্য গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়ােজন।

অপর পক্ষে, হবসের অনুসারীগণের দৃষ্টিতে, মানব প্রাণী মাত্রই স্বার্থপর; তারা রাজতন্ত্রের মাধ্যমে স্বৈরাচারী শাসন বজায় রাখার পক্ষে ছিলেন, কারণ তা বাদে, সামাজিক জীবন হবে, ন্যক্কারজনক, পাশবিক এবং সংক্ষিপ্ত’ | ভিন্নরূপে হলেও এই বিতর্ক এ যুগেও বিদ্যমান: কিছু সংখ্যক আধুনিক ethologist যেমন কনরাড লরেঞ্জ হবসের বক্তব্য জোরালােভাবে পেশ করেন; বহু সাংস্কৃতিক ও সামাজিক নৃবিজ্ঞানী এর বিপক্ষীয় যুক্তিতর্ক হাজির করেন।

বহু পণ্ডিত আধুনিক সামাজিক বিজ্ঞানের আবির্ভাবের উৎস খুঁজে পান ক্লদ হেনরি সেইন্ট-সায়মন (১৭৬০১৮২৫) এবং তাঁর সহযােগী আগস্ত কোঁতের (১৭৯৮-১৮৫৭) লেখালেখিতে; তারা চেয়েছিলেন মানুষের বিজ্ঞান গড়ে তুলতে যেটিতে সামাজিক পদার্থবিদ্যা’ নেতৃত্ব দেবে যাতে ভিত্তিপ্রস্তরকারী, একীভূতকারী নীতিসমূহ আবিষ্কার করা যায়—অনেকটা মাধ্যাকর্ষণের নীতির মতন যেটি প্রাকৃতিক বিজ্ঞানসমূহে অনেক কিছু বুঝতে সাহায্য করেছে।

ইউরােপের পটে, ১৮৫৯ সালে, চার্লস ডারউইনের একটি সম্পূর্ণরূপী জৈবিক বিবর্তন তত্ত্বের নাটকীয় আবির্ভাব বিশ্বের আদিম মানুষজনের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি করে তােলে, সাংস্কৃতিক এবং সামাজিক বিষয়াদিতে বিবর্তনবাদী প্রত্যয়সমূহের প্রয়ােগের সম্ভাবনা অতি উৎসাহের সাথে অনুসন্ধানযােগ্য হয়ে ওঠে। উনিশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধ্বে একটি স্বতন্ত্র পেশাদার এবং বিদ্যাজাগতিক অধ্যয়ন-ক্ষেত্র হিসেবে নৃবিজ্ঞান পূর্ণাঙ্গভাবে প্রকাশ লাভ করে যখন পণ্ডিতগণ বিচ্ছিন্ন এবং প্রযুক্তিগতভাবে স্বল্পোন্নত মানুষজন সম্পর্কে নির্ভরযােগ্য তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালান।

উচ্চাকাঙ্ক্ষী ‘তুলনামূলক অধ্যয়ন’ যুগের সূত্রপাত ঘটে, এতে জুরিসপ্রুডেন্স (উদাহরণস্বরূপ, , মেইনের Ancient Law, ১৮৬১), জ্ঞাতিত্ব ব্যবস্থা (উদাহরণস্বরূপ, লুইস হেনরি মর্গানের Systems of Consanguinity and Affinity of the Human Family, ১৮৭০), এবং ধর্ম ও সংস্কৃতির অপরাপর বৈশিষ্ট্যসমূহের (উদাহরণস্বরূপ, ই বি টায়লরের Primitive Culture: Researches into the Development of Mythology. Philosophy, Religion, Art, and Custom) অন্তর্ভুক্তি ঘটে।

উনিশ এবং বিংশ শতকের ব্যবধান ঘােচানাের কাজ করেন ফরাসী সমাজ বিজ্ঞানী এমিল ডুর্খেইম (১৮৫৮১৯১৭)। তিনি সমাজসমূহ কী কী উপায়ে টিকে থাকে, তাদের কার্যশীলতা কী, এ সম্পর্কে অনুসন্ধান চালান। আধুনিক সমাজবিজ্ঞান এবং আধুনিক নৃবিজ্ঞান উভয়ই তাদের বৌদ্ধিক শেকড় খুঁজে পায় তাঁর লেখায় যেগুলােতে তিনি নানাবিধ তাত্ত্বিক বিষয়াদি নিয়ে লিখেছেন যেমন আদিম ধর্ম, সামাজিক সংগঠন এবং দলীয় সংহতির সমস্যা, আধুনিক সমাজে ব্যক্তির অর্থবহ পরিচিতি গড়ে তােলার বিড়ম্বনা।

সারাংশ

এই পাঠের বিষয়বস্তু ছিল নৃবিজ্ঞান সম্বন্ধে প্রতিষ্ঠিত ভাবনা। সে ভাবনা মতে, এটি মনুষ্যজাতি, মানবসমাজ নিরিখকারী শাস্ত্রজ্ঞান। সমাজবিজ্ঞান ও মানবিক শাখার অন্যান্য শাস্ত্র হতে এর ভিন্নতা এখানেই যে এটি মানুষকে, মানুষের জীবনকে সামগ্রিকভাবে—কাল, পরিসর—অধ্যয়ন করে; এই সামগ্রিকতা উত্তর আমেরিকীয় ধারায় চারটি উপবিভাগের মাধ্যমে গঠিত হয়েছে। প্রতিষ্ঠিত ভাবনায় নৃবিজ্ঞান নিরপেক্ষ, নৃবৈজ্ঞানিক দৃষ্টি নিরেট জ্ঞান-অন্বেষণকারী কৌতুহল দ্বারা উৎপাদিত। এ বিষয়ে আমাদের ভাবনা ভিন্ন। আমাদের দৃষ্টিমতে, নৃবিজ্ঞানের ঘােষিত লক্ষ্য—মানব জাতি/মানব সমাজ/মানব প্রাণীর অধ্যয়ন—খােলাসা করা জরুরী। এই খােলাসাকরণের পথ হচ্ছে অনৈতিহাসিক হিসেবে উপস্থাপিত ভাবনাকে বিশ্বের মানচিত্রে স্থাপন করা। আগামী পাঠে দেখবেন কিভাবে দু’জন সমসাময়িক চিন্তক মনুষ্যত্বের ধারণাকে খােলাসা করে ইতিহাসকে প্রতিষ্ঠা-বিরুদ্ধ দৃষ্টিতে পাঠ করেছেন ।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button