আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
সামাজিক বিজ্ঞান

উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান ও জেনারেল ইয়াহিয়া খান

উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থান

১৯৬৯ সালের প্রথম দিকে ছাত্রসমাজের এগার দফা দাবি পেশ পাকিস্তান শাসকগােষ্ঠীর শােষণ ও বৈষম্যনীতির প্রতি তীব্র অসন্তোষেরই প্রকাশ। ঐ বছরের প্রথম দিকের ধারাবাহিক ঘটনাবলি ১৯৬৯ সালের আন্দোলনকে একটি গণঅভ্যুত্থানে রূপ দেয়। এ আন্দোলনে

  • ১৯৬৯ সালের ২০শে জানুয়ারি ছাত্রনেতা আসাদুজ্জামান আসাদ পুলিশের গুলিতে নিহত হন,
  • ১৯৬৯ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি সার্জেন্ট জহুরুল হক সামরিক হাজতে নিহত হন এবং
  • ১৯৬৯ সালের ১৮ই ফেব্রুয়ারি ড. শামসুজ্জোহা রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সামরিক অফিসার কর্তৃক নিহত হন।

এসব ঘটনার ক্রমপুঞ্জিত প্রভাবে চলমান আন্দোলন দুর্বার ও মারমুখী হয়ে ওঠে। সকল সরকারি অফিস এবং রাজপথ ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণে চলে যাওয়ায় প্রাদেশিক প্রশাসন কার্যত ভেঙে পড়ে। ২১ থেকে ২৪শে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ঢাকায় প্রতিদিন মিছিল হয়েছে, পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়েছে।

পুলিশের গুলিতে নিহত হয় ছাত্র মতিয়ুর এবং শ্রমিক রুস্তম। রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে দেখে আইয়ুব খান ১৯৬৯ সালের ২২শে ফেব্রুয়ারি আগরতলা মামলা প্রত্যাহার করেন। ফলে শেখ মুজিবুরসহ আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার সকল আসামি মুক্তিলাভ করেন।

২৩শে ফেব্রুয়ারি ছাত্ররা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবসহ আগরতলা মামলার সব আসামিকে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সােহরাওয়ার্দী উদ্যান) এক গণ-সংবর্ধনা দান করে। ঐদিন তদানীন্তন ছাত্রনেতা তােফায়েল আহমদ জনতার পক্ষ থেকে শেখ মুজিবকে ভূষিত করেন বঙ্গবন্ধু’ উপাধিতে। ঐদিনই তিনি ঘােষণা করেন, ছাত্রদের এগার দফা ও আওয়ামী লীগের ছয়-দফার ভিত্তিতে দেশের সমস্যা সমাধান করতে হবে।

অতঃপর আইয়ুব খান এক গােলটেবিল বৈঠক আহ্বান করেন। কিন্তু এ বৈঠকে পূর্ণ স্বায়ত্তশাসনের দাবি না মানায় গােলটেবিল বৈঠক ব্যর্থ হয়। ফলে বেসামরিক (সিভিল) সমাজ অস্থির, উত্তেজিত ও বিক্ষুদ্ধ হয়ে ওঠে। জনতার দাবির মুখে পাক সরকার পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর মােনায়েম খানকে অপসারণ করে ২১শে মার্চ ড. এম. এন. হুদাকে নতুন গভর্নর নিযুক্ত করেন। ২৫শে মার্চ জেনারেল আইয়ুব খান জেনারেল ইয়াহিয়ার কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে পদত্যাগ করেন। ঐদিনই পাকিস্তানে জারি করা হয় সামরিক শাসন।

জেনারেল ইয়াহিয়া খান

জেনারেল ইয়াহিয়া ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে ১৯৬২ সালের সংবিধান বাতিল করেন। সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদও বাতিল করেন। ১৯৬৯ সালের অক্টোবর মাসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান দেশের জন্য একটি সংবিধান প্রণয়ন এবং জাতীয় পরিষদের ঘাষণা করেন। এ উদ্দেশ্যে একটি আইনগত কাঠামাে জারি করেন। এর বিষয়গুলাে নিম্নরূপ :

  • প্রাপ্তবয়স্কদের ভােটাধিকারের ভিত্তিতে অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে।
  • ১৯৭০ সালে এক ব্যক্তি- এক ভােট’- এ নীতিতে জাতীয় ও প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনের তারিখ ঘােষণা করা হবে।
  • জাতীয় পরিষদের আসন সংখ্যা হবে ৩১৩টি। এর মধ্যে পূর্ব পাকিস্তান পাবে ১৬৯টি। প্রত্যেক প্রদেশের আসন সংখ্যা হবে ৩০০টি।
  • জাতীয় পরিষদের প্রথম অধিবেশন হতে ১২০ দিনের মধ্যে সংবিধান রচনা করতে হবে।
  • সংবিধান ইসলামি নীতি ও আদর্শের ভিত্তিতে রচনা করতে হবে।
  • ১৯৭০ সালের ১লা জানুয়ারি হতে রাজনৈতিক কার্যকলাপ শুরু হবে।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button