আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
নৃবিজ্ঞান

চারটি পরিসর পন্থা: উত্তর আমেরিকীয় নৃবিজ্ঞান

চারটি পরিসর পন্থা: উত্তর আমেরিকীয় নৃবিজ্ঞান

উত্তর আমেরিকীয় নৃবিজ্ঞান মানুষকে অধ্যয়ন করতে চায় সামগ্রিকভাবে। এটি উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। সে অঞ্চলের নৃবিজ্ঞান মতে, মানুষকে তার সামগ্রিক রূপে নিরিখ করতে হলে, চারটি দিক দেখা জরুরী। এই চারটি দিক বা ডাইমেনশন অধ্যয়নের দায়িত্ব চারটি পরিসর কিংবা উপবিভাগের উপর ন্যস্ত করা হয়েছে (Barnard ২০০০, ২-৪)। এ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত ভাবনাসমূহ নিচে তুলে ধরা হলাে।

লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে, এই উপবিভাগসমূহ (ও এর বয়ান) পশ্চিমা দর্শন ও ভাবনায় বিরাজমান শক্তিশালী বিরুদ্ধতায় গ্রথিত-প্রকৃতি/দেহ বনাম সংস্কৃতি/মস্তিষ্ক/ভাষা, পশু বনাম মানুষ, জংলি বনাম সভ্য, বিজ্ঞান/জ্ঞানযুক্তি বনাম পুরাণ/বিশ্বাস/অনুভুতি—যেটি সম্বন্ধে বিদ্যাজাগতিক মহলে গত দু’দশকে অনুসন্ধিৎসু কৌতুহল তৈরি হয়েছে ।

(ক) জৈবিক নৃবিজ্ঞান (biological anthropology):

জৈবিক নৃবিজ্ঞান হচ্ছে মনুষ্য জীববিজ্ঞানের অধ্যয়ন । নৃবিজ্ঞান হচ্ছে মনুষ্যজাতির বিজ্ঞান, জৈবিক নৃবিজ্ঞান এই ধারণার সাথে অধিক ঘনিষ্ঠভাবে সম্পৃক্ত। মাঝেমধ্যে এই উপবিভাগটিকে তার পুরাতন পদবাচ্য-দৈহিক নৃবিজ্ঞান’ (physical anthropology)—দ্বারা সম্বােধন করা হয়। দৈহিক নৃবিজ্ঞানে তুলনামূলক অঙ্গব্যবচ্ছেদ-বিদ্যার প্রতি শাস্ত্রীয় আগ্রহ প্রতিফলিত হয়। এ ধরনের এ্যানাটমিকাল তুলনা অন্তর্ভুক্ত করে মনুষ্য প্রজাতির সাথে শিম্পাঞ্জি ও গরিলার মত উচ্চতর প্রাইমেটদের সম্পর্ক, আধুনিক মানুষের সাথে আমাদের পূর্বসূরীর (যেমন, অস্ট্রেলােপিথেকাস আফ্রিকেনাস এবং হােমাে ইরেক্টাস) মধ্যকার সম্পর্ক। সাম্প্রতিককালে, নরবর্ণের মধ্যকার এ্যানাটমিকাল তুলনা বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়; মনুষ্য জেনেটিক্স-এর দ্রুত-বিকাশশীল ক্ষেত্র এটিকে অতিক্রম করেছে। বলা যেতে পারে যে, জেনেটিক্স, এবং এর সাথে জনমিতি, ফরেনসিক বিজ্ঞান, এবং palaeo-nedicine-এর কিছু দিক, ব্যাপক অর্থে আধুনিক জৈবিক নৃবিজ্ঞান গঠন করে।

(খ) প্রত্নতত্ত্ব (archaeology):

উত্তর আমেরিকান নৃবিজ্ঞানে প্রত্নতত্ত্ব (ইউরােপে যেটিকে বলা হয় প্রাক তহাসিক প্রত্নতত্ত্ব’) হচ্ছে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপবিভাগ। প্রত্নতাত্ত্বিক খননের মাধ্যমে উদ্ধারকৃত জীবাশ্বের এ্যানাটমিকাল বৈশিষ্ট্যের তুলনা জৈবিক নৃবিজ্ঞানের অংশ হলেও, উদ্ধারকৃত এসকল সামগ্রীকে প্রাপ্তিস্থানের সাথে সম্পর্কযুক্ত করা, প্রাক-ঐতিহাসিক সমাজ কাঠামাের সূত্র খোঁজা—এগুলাে প্রত্নতাত্ত্বিকের কাজ হিসেবে বিবেচিত । উপরন্তু, যে মনুষ্য দলের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন পাওয়া যায় তাদের মধ্যকার সম্পর্ক অনুসন্ধান, এবং অনতিদূর সময়কালের সামাজিক জীবনের পুনর্গঠন, এতে অন্তর্ভুক্ত। এটি সেসব নেটিভ উত্তর আমেরিকান সামগ্রীর ক্ষেত্রে বিশেষভাবে সত্য যেগুলাে নথিভুক্ত-ইতিহাসের পূর্বের সময়কালের। বহু আমেরিকান প্রত্নতাত্ত্বিকের দৃষ্টিতে, তাদের শাস্ত্রের বিষয় হচ্ছে অতীতকালের সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান।

(গ) বৈজ্ঞানিক ভাষাতত্ত্ব (anthropological linguistics):

নৃবৈজ্ঞানিক ভাষাতত্ত্ব হচ্ছে ভাষার অধ্যয়ন, তবে বিশেষ করে ভাষার বৈচিত্র্যের অধ্যয়ন। সামগ্রিক ভাষাতত্ত্বের তুলনায় এটি ক্ষুদ্র নৃবৈজ্ঞানিক ভাষাতাত্ত্বিকগণ যেখানে নৃবিজ্ঞানের সাথে তাদের বন্ধন রক্ষা করেন সেখানে প্রধান ধারার ভাষাতাত্ত্বিকগণ (১৯৬০এর দশকের প্রথম হতে) সকল ভাষার ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনকারী নীতির প্রতি মনােযোেগী হন। বিষয়টিকে এভাবে বলা যায়, আধুনিক ভাষাতাত্ত্বিকগণ ভাষা (language) অধ্যয়ন করেন, আর নৃবৈজ্ঞানিক ভাষাতাত্ত্বিকগণ ভাষাসমূহ (languages) অধ্যয়ন করেন। নৃবৈজ্ঞানিক ভাষাতত্ত্ব সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানের সাপেক্ষিকতার দৃষ্টিভঙ্গির সাথে ঘনিষ্ঠভাবে বিজড়িত, যেটি ফ্রাঞ্জ বােয়াসের বিংশ-শতকের প্রথমদিকের নৃবিজ্ঞানের সাথে জন্মলাভ করে।

(ঘ) সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান (cultural anthropology):

এটি, উত্তর-আমেরিকীয় নৃবিজ্ঞানের বৃহত্তম উপবিভাগ। ব্যাপকতম অর্থে, এই ক্ষেত্রটি সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য, সাংস্কৃতিক বিশ্বজনীনতার অনুস কাঠামাের উন্মোচন, প্রতীকের বিশদ ব্যাখ্যা প্রদান এবং এ সম্পর্কিত আরাে নানান সমস্যাদিকে অন্তর্ভুক্ত করে। অধিকাংশ উত্তর আমেরিকান নৃবিজ্ঞানী হচ্ছেন সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানী (এই হিসাবে ফলিত সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞানীরাও অন্তর্ভুক্ত); এই উপবিভাগটি আর সকল উপবিভাগকে ছোঁয়, এবং অনুমান করা হয় যে এ কারণেই নৃবিজ্ঞান একটি একীভূত বিজ্ঞান চর্চা হিসেবে টিকে থাকুক। বহু মহাদেশে, বেশ কিছু মহলে নৃবিজ্ঞান বলতে বােঝায় কেবলমাত্র সাংস্কৃতিক নৃবিজ্ঞান, কিন্তু উত্তর আমেরিকায় নৃবিজ্ঞানের যেকোনাে উপবিভাগের অনুশীলন ঘটে ‘চার ক্ষেত্রের’ সাপেক্ষ হিসেবে।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button