আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
বাংলা রচনা সম্ভার

বাংলা রচনা ই-মেইল

সংকেত : ভূমিকা; ই-মেইল কী; ই-মেইলের ইতিহাস; ই-মেইল সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান; ই-মেইল কীভাবে কাজ করে; ই-মেইলের অংশসমূহ; ই-মেইল ব্যবহারকারী; ই-মেইলের সুবিধা-অসুবিধা; ই-মেইল ব্যবহারে সতর্কতা; উপসংহার।

ভূমিকা :

প্রযুক্তি মানুষের জীবনকে সহজ করে দিয়েছে। বর্তমানে মানুষের জীবন প্রণালী, আধুনিক জীবন পুরােপুরি প্রযুক্তি নির্ভর হয়ে পড়েছে। তাই প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে আধুনিক জীবন কল্পনা করা যায় না। প্রযুক্তির কল্যাণে মানুষের জীবন আরও গতিশীল আরও উন্নয়নমুখী হচ্ছে। এ কারণে সমগ্র বিশ্ব পরিণত হচ্ছে প্রযুক্তি নির্ভর একটি বিশ্বে। এ যেন আধুনিক জীবনের অবিচ্ছদ্য অনুষঙ্গ। যােগাযােগ ব্যবস্থা হয়েছে। সহজ থেকে সহজতর এই প্রযুক্তির উন্নয়নে। মুহূর্তের মধ্যে বার্তা প্রেরিত হচ্ছে পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে। এই পদ্ধতিটি হলাে ই-মেইল পদ্ধতি।

ই-মেইল কী :

ই-মেইল তথা ইলেক্ট্রনিক মেইল হলাে ডিজিটাল বার্তা যা কম্পিউটার নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রেরণ করা হয়। ইলেক্ট্রনিক মেইলের সংক্ষিপ্ত রূপ হলাে ই-মেইল। এটা এমন একটি পদ্ধতি যার মাধ্যমে ডিজিটাল প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে মানুষ পরস্পরের সাথে যােগাযােগ করে থাকে। যদিও এটি টেক্সট বেসড কমিউনিকেশন সিস্টেম কিন্তু প্রযুক্তির আধুনিকায়নের ফলে আজ এর মাধ্যমে এটাচমেন্ট হিসেবে বিভিন্ন ফরমেটের ফাইল, ছবি কিংবা চলমান ভিডিও পাঠানাে সম্ভব। এক কথায় বলতে গেলে এটি এমন একটি দ্রুত ও নিরাপদ যােগাযােগ ব্যবস্থা যার মাধ্যমে একস্থান থেকে অন্যস্থানে নিমিষেই পাঠানাে সম্ভব যে কোনাে ধরণের তথ্য।

ই-মেইলের ইতিহাস :

একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে ই-মেইল পাঠানাে হয়েছিল দুটি কম্পিউটারের মধ্যে। আর দু’টি কম্পিউটারের মধ্যে ই-মেইল পাঠানাের সময় অরপানেট নেটওয়ার্ক ব্যবহার করা হয়েছিল। প্রথমদিকে অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান এতে প্রােগ্রাম লিখেছিল বার্তা আদান-প্রদান করার জন্য। সে সময় এতে বিভিন্ন টার্মিনালের সাহায্যে তাৎক্ষণিক চ্যাটও করা যেত। ১৯৬০ সালের শুরুর দিকে অনেক গবেষণা প্রতিষ্ঠান। টেক্সট মেসেজ প্রেরণের জন্য প্রােগ্রাম তৈরি করেন। ১৯৭২ সালে গবেষক বেরি ওয়েসলার সফলভাবে ই মেইল প্রেরণে সক্ষম হন। ১৯৮০ সালে ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ই-মেইল প্রযুক্তিতে আরও অগ্রগতি আনেন। ১৯৮৮ সালে বাণিজ্যিক ই-মেইলের প্রবর্তন হয়। ১৯৯৩ সালে অনলাইনে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে ই-মেইল। প্রথমে ই-মেইলের ব্যবহার বার্তা পাঠানাে ও বার্তা পড়ার মাঝেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু আধুনিককালে প্রযুক্তির উন্নয়নের ফলে বার্তার সাথে সাথে ছবি ও ভিডিও চিত্রও পাঠানাে সম্ভব হচ্ছে। ১৯৭৪ সালের দিকে সামরিক বাহিনীতে এর প্রচলন বাড়ে। বিভিন্ন যুদ্ধক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ আদেশ পাঠাতে কর্মকর্তারা ব্যবহার করতেন ই-মেইল। টমলিনসন ১৯৭২ সালে এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারে তথ্য পাঠানাের জন্য @ চিহ্নটি ব্যবহার করেন। আর তখন থেকেই ই-মেইল আড্রেস হিসেবে ব্যবহারকারীর নাম@হােস্ট ব্যবহার করা হয়। এর পর ধীরে ধীরে ই-মেইল পদ্ধতির উন্নয়ন সাধিত হতে থাকে।

ই-মেইল সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান :

১৯৭৬ সালে গবেষক ল্যারি রবার্টের হাত ধরে যাত্রা শুরু করে বেশ কিছু ই-মেইল সেবা দান প্রতিষ্ঠান। বর্তমানে গ্রাহকেরা অনলাইন ছাড়াও অফলাইনে নির্দিষ্ট নেটওয়ার্কের ভেতর ই-মেইল আদান-প্রদান করতে পারে মাইক্রোসফট আউটলুকের মাধ্যমে। বর্তমানে অসংখ্য প্রতিষ্ঠান ইমেইল সেবা দিচ্ছে। এর মধ্যে উল্লেখযােগ্য কয়েকটি প্রতিষ্ঠান হলাে- জি-মেইল, জোহাে মেইল, এআইএম মেইল, জিএমএক্স মেইল, ইয়াহু মেইল, ইয়াহু মেইল ক্ল্যাসিক, গাওব ডট কম, ইনবক্স ডট কম, ফাস্ট মেইল ডট কম, মাইস্পেস মেইল, কেয়ার টু মেইল, মেইল ডট কম।

ই-মেইল কীভাবে কাজ করে :

প্রথমে প্রেরকের ই-মেইল ক্লায়েন্ট বা ওয়ার্কস্টেশন থেকে সিম্পল মেইল ট্রান্সফার প্রােটোকল (SMTP)-এর মাধ্যমে একটি ই-মেইল পাঠানাে হয়। এই মেইলে অবশ্যই প্রাপকের এড্রেস থাকা বাধ্যতামূলক। এই মেইল পাবলিক ইন্টারনেট এরিয়ায় এসে বিভিন্ন রাউটার ক্রস করে প্রেরকের মেইলের জন্য নির্দিষ্ট করা ই-মেইল সার্ভারে এসে জমা হয়। যদি প্রাপকের ই-মেইল এড্রেস একই মেইল ট্রান্সফার এজেন্ট (MTA)-এর অধীনে হয়ে থাকে তাহলে ই-মেইল সার্ভার সেই মেইলটিকে সরাসরি প্রাপকের কাছে পাঠিয়ে দেয়। আর যদি ভিন্ন MTA হয়ে থাকে, তাহলে ই-মেইল সার্ভার সেই মেইলকে ভিন্ন ই-মেইল সার্ভারের নিকট পাঠাবে। ই-মেইল সার্ভার সেই মেইলকে SMTP ব্যবহার করে প্রাপকের এড্রেসে পাঠাবে। মূলত প্রাপকের এড্রেস কিংবা মেইলের জন্য স্পেস সেই মেইল সার্ভারেই। থাকে। অতঃপর সেই মেইল আনরিড স্ট্যাটাস হিসেবে প্রাপকের ইমেইল ইনবক্সে জমা হয়। পাঠক ইমেইল ওপেন করে সেই মেইল পড়লে মেইলটির স্ট্যাটাস পরিবর্তন হয়ে রিড স্ট্যাটাস হবে। প্রেরক মেইলের সাথে কোনাে এটাচমেন্ট পাঠালে তা ডাউনলােড করে লােকাল কম্পিউটারে সেভ করতে পারে।

ই-মেইলের অংশসমূহ :

একটি ই-মেইল বার্তা তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। প্রাপকের ই-মেইল ঠিকানা, বার্তার বিষয় এবং বার্তা। ই-মেইল ঠিকানা দুইটি অংশে বিভক্ত। প্রথম অংশটি হলাে ব্যবহারকারীর নাম। এর ঠিক পরপরই @ চিহ্নটি থাকে। তার পরে থাকে সংশ্লিষ্ট ব্যবহারকারীর প্রতিষ্ঠানের নাম। যেমন – “abc@def.com”এই ঠিকানাটিতে abc হলাে ব্যবহারকারীর নাম এবং def.comহলাে ব্যবহারকারীর মেইল সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের নাম।

ই-মেইল ব্যবহারকারী :

১৯৯৩ সালে ই-মেইলের যাত্রা শুরু হয়। বর্তমানে সারা পৃথিবীতে ২.২ বিলিয়ন ইমেইল ব্যবহারকারী রয়েছে এবং প্রতিদিন প্রায় ১৪৪ বিলিয়ন ইমেইল আদান-প্রদান হয়। পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ই-মেইল সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান Gmail-এর ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৪২৫ মিলিয়ন। জানুয়ারি ২০১৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সারা পৃথিবীর ই-মেইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা রয়েছে ২.৪ বিলিয়ন। এর মধ্যে ১.১ বিলিয়ন ব্যবহারকারীই হচ্ছে এশিয়ার। ৫১৯ মিলিয়ন ইউরােপ, ২৭৪ মিলিয়ন উত্তর আমেরিকা, ১৬৭ মিলিয়ন আফ্রিকা, ৯০ মিলিয়ন মধ্যপ্রাচ্য, ২৪.৩ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়া এবং ৫৬৫ মিলিয়ন চীনের।

ই-মেইলের সুবিধা-অসুবিধা :

ই-মেইল ব্যবহারকারীর সংখ্যা দিনে দিনে বেড়েই চলেছে। এর জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ হলাে এটি যােগাযােগের সবচেয়ে সহজ মাধ্যম। তাছাড়া কম খরচ ও দ্রুত তথ্য প্রেরণের সুবিধা তাে আছেই। ই-মেইলের সুবিধার পাশাপাশি কিছু কিছু অসুবিধাও আছে। এখানে তথ্যের নিরাপত্তা কম। ই-মেইল এড্রেসগুলাে বাণিজ্যিকভাবে বিক্রি হয়ে যায়। হ্যাকাররা ই-মেইল হ্যাক করে তথ্য চুরি করে গ্রাহককে বিপদে ফেলতে পারে।

ই-মেইল ব্যবহারে সতর্কতা :

বর্তমানে চলছে অনলাইনের যুগ। আর অনলাইন সার্ভিস ব্যবহারের প্রধান মাধ্যম হচ্ছে ই-মেইল। কিন্তু ই-মেইলের নিয়ন্ত্রণ যদি অন্য কারাে কাছে চলে যায় তাহলে তা বিপদের কারণ। ই-মেইলের মাধ্যমে যারা অনলাইনে লেনদেন করেন তাদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট শূন্য হয়ে যেতে পারে। এজন্য ই-মেইল অ্যাকাউন্ট যাতে হ্যাক না হয় সে জন্য মেইলে গােপনীয়তা রক্ষা ও পূর্ব সতর্কতা অত্যন্ত জরুরি। হ্যাকাররা বিভিন্ন সফটওয়ার ব্যবহার করে ই-মেইলের পাসওয়ার্ড চুরি করে তাই হ্যাকিং এর হাতে থেকে রেহাই পেতে বেশ জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করতে হয়। অক্ষর ও সংখ্যা মিলিয়ে পাসওয়ার্ড দেয়া উত্তম। সম্ভব হলে মাঝে মাঝে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন করা যেতে পারে।

উপসংহার :

বিজ্ঞান সহজ করেছে মানুষের জীবনকে। আর বিজ্ঞানের আধুনিক সংযােজন ই-মেইলের মাধ্যমে যােগাযােগ ব্যবস্থা হয়েছে আরাে সহজ ও উন্নত, আবার বেড়েছে ঝুঁকিও। তাই কোনাে দুষ্কৃতির আশ্রয় না। নিলেই আমরা বিজ্ঞানের পূর্ণ সুবিধা ভােগ করতে পারব। বিজ্ঞানকে তাই সবসময় ইতিবাচক কাজে ব্যবহার করতে হবে। ই-মেইলের ব্যবহারে সব সময় সতর্ক থাকতে হবে যেন তা অকারণে ব্যবহৃত না হয়।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button