আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী

আর্থিক লেনদেনের নেটওয়ার্ক SWIFT

আর্থিক লেনদেনের ব্যাপারে তথ্য আদান-প্রদানের জন্য SWIFT’কে একটি নিরাপদ নেটওয়ার্ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক অভিযানের প্রেক্ষিতে ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ আন্তর্জাতিক আন্তঃব্যাংক লেনদেনের বার্তা ব্যবস্থা SWIFT থেকে রাশিয়াকে নিষিদ্ধ করা হয়।

SWIFT কী?

SWIFT’র পূর্ণরূপ Society for Worldwide Interbank Financial Telecommunication ! এটি হলাে দ্রুত ও নিরাপদে আন্তর্জাতিক লেনদেনের প্রধান ব্যবস্থা। SWIFT মূলত একটি তাৎক্ষণিক মেসেজিং ব্যবস্থা, যা কোনাে লেনদেনের ব্যাপারে গ্রাহককে তৎক্ষণাৎ জানিয়ে দেয়। SWIFT নেটওয়ার্ক দিয়ে সরাসরি অর্থ প্রেরণ করা যায় না, এটা শুধু। অনলাইনে পেমেন্ট অর্ডার প্রেরণ করে।

বিশ্বের অধিকাংশ ব্যাংক নিজেদের মধ্যকার বার্তা। আদান-প্রদানের জন্য SWIFT নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। একটি ব্যাংক তাদের SWIFT নেটওয়ার্ক এ সংযুক্ত অন্য একটি ব্যাংককে অর্থ পরিশােধের অনুরােধ পাঠায় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যাংক সেই আদেশ গ্রহণ করে কাজ করে।

প্রতিষ্ঠানটি বিশ্বব্যাপী খুবই গুরুত্বপূর্ণ অর্থনৈতিক ভূমিকা রাখলেও কোনাে দেশের ওপর অবরােধ আরােপের আইনি ক্ষমতা নেই। SWIFT গঠিত হয় ৩ মে ১৯৭৩ এবং এর সদর দপ্তর বেলজিয়ামের লা হুল্পে। যদিও SWIFT একটি নিরাপদ উপায়ে আর্থিক বার্তা পরিবহন করে; কিন্তু এটি তার সদস্যদের জন্য অ্যাকাউন্ট বা নিষ্পত্তির কাজ করে না।

নিয়ন্ত্রক

SWIFT সৃষ্টি হয় আমেরিকান ও ইউরােপিয়ান ব্যাংকসমূহের উদ্যোগে। বিশ্বের ২০০টির বেশি দেশ ও অঞ্চলের ১১,০০০ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান SWIFT’র সঙ্গে যুক্ত। মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ সিস্টেম, ইউরােপীয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক (ECB) এবং ব্যাংক অব। ইংল্যান্ডসহ বিশ্বের বড় বড় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাথে মিলে বেলজিয়ামের কেন্দ্রীয় ব্যাংক ন্যাশনাল ব্যাংক অব বেলজিয়াম SWIFT’র কাজকর্ম তদারকি করে থাকে। কারাে ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার ব্যাপারে SWIFT’র কোনাে প্রভাব থাকে না, বরং নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নির্ভর করে কোনাে দেশের সরকারের ওপর।

রাশিয়াকে বহিষ্কার

২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ রাশিয়াকে অর্থনৈতিক চাপে ফেলার জন্য। SWIFT থেকে বাদ দেওয়ার ঘােষণা দেয় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরােপীয় ইউনিয়ন। তবে SWIFT থেকে রাশিয়াকে বাদ দেওয়ার চিন্তা নতুন নয়। ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া দখলের জন্য SWIFT থেকে রাশিয়াকে বহিষ্কারের হুমকি দেওয়া হয়। তখন রাশিয়ার সাবেক অর্থমন্ত্রী আলেক্সি কুনি ভবিষ্যদ্বাণী করেন যে, এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে রাশিয়ার জিডিপি ৫% সংকুচিত হতে পারে।

SWIFT থেকে রাশিয়ার যে ব্যাংকগুলাে বিচ্ছিন্ন থাকবে, সে ব্যাংকগুলাের বিশ্বব্যাপী কর্মকাণ্ড পরিচালনা ক্ষশ্রিস্ত হবে। এই নিষেধাজ্ঞার উদ্দেশ্য হচ্ছে রুশ কোম্পানিসমূহ যাতে SWIFT’র। মাধ্যমে স্বাভাবিক সময়ের মতাে নিঝঞাটে এবং তাৎক্ষণিক লেনদেন পরিচালনা করতে না পারে। এর ফলে এখন রাশিয়ার। জ্বালানি এবং কৃষিপণ্য বিক্রির অর্থ আদায় মারাত্মকভাবে ব্যাহত 3 হবে। ব্যাংকগুলােকে এখন সরাসরি একে অপরের সাথে যােগাযােগ করতে হবে। এতে সময়ক্ষেপণ হবে এবং বাড়তি খরচ গুনতে হবে। যা শেষ পর্যন্ত রুশ সরকারের রাজস্ব আয়হাস পাবে।

SWIFT’র বিকল্প

২০১৪ সালে হুমকির ফলেই রাশিয়া SWIFT’র বিকল্প হিসেবে Sistema Peredachi Finansovykh Soobscheniy (SPFS) নামে আর্থিক বার্তা স্থানান্তর করার একটি বিকল্প সিস্টেম স্থাপন করে। রাশিয়া ও চীনের মধ্যে যেন বাধামুক্ত বাণিজ্য হতে পারে তা নিশ্চিত করার জন্য ২০১৫ সালে চীন একটি Cross-Border Interbank Payment System (CIPS) চালু করে। এর মাধ্যমেই বর্তমানে দেশটির স্থানীয় ব্যাংকগুলাে তাদের ২০ শতাংশ অভ্যন্তরীণ লেনদেন করছে। চীনের CIS অবশ্য রাশিয়াকে একটি লাইফলাইন। দিতে পারে এবং ডি-ডলারাইজেশনকে ত্বরান্বিত করতে পারে। CIS-এ মাত্র ৮০টি বিদেশি ব্যাংক অন্তর্ভুক্ত। SWIFT’র বিকল্প। হিসেবে CIS-কে এখনাে অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।

আন্তর্জাতিক আর্থিক বাজারে রেনমিনবির অংশ এখনাে খুবই সামান্য। বিশ্বব্যাপী অর্থ প্রদানের ২ শতাংশেরও কম, যা মার্কিন ডলারের ৪০ শতাংশ শেয়ার এবং ইউরাে, ব্রিটিশ পাউন্ড ও জাপানি ইয়েনের তুলনায় অনেক পিছিয়ে। ফলে CIS পেমেন্ট সিস্টেমটি এখনাে খুব ছােট, SWIFT’র প্রায় ০.৩ %। পরমাণু কর্মসূচির কারণে ২০১২ সালে ইরানের ওপর SWIFT’র নিষেধাজ্ঞা দেওয়া। হয়। ফল হিসেবে দেশটির তেল রপ্তানি থেকে আয় অর্ধেক কমে। যায় এবং বৈদেশিক বাণিজ্যের ৩০ শতাংশ হারায়। এরপর ইউরােপীয় ইউনিয়ন (EU) ২৯ নভেম্বর ২০১৯ SWIFT’র বিকল্প। TROI Instrument in Support of Trade Exchanges (INSTEX) চালু করে। INSTEX বর্তমানে মানবিক বাণিজ্যের মধ্যে সীমাবদ্ধ, যা মার্কিন নিষেধাজ্ঞার মধ্যেও অনুমােদিত।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button