আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী

আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস

‘তারা সভ্যতার পিলসুজ, মাথায় প্রদীপ নিয়ে খাড়া দাঁড়িয়ে থাকে—উপরের সবাই আলাে পায়, তাদের গা দিয়ে তেল গড়িয়ে পড়ে।’ কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শ্রমজীবী মানুষদের বলেছেন ‘সভ্যতার পিলসুজ’। অথচ সভ্যতার ইতিহাসে তাঁরাই সবচেয়ে বেশি নিগৃহীত। তবে নিগৃহীত মানুষ ঘুরে দাঁড়াতে জানে। মেরুদণ্ড সােজা করে প্রতিবাদ করতে জানে। রক্তের বিনিময়ে অধিকার আদায় করে নিতে জানে। আর মে দিবস সেই অধিকার প্রতিষ্ঠার রক্তাক্ত ইতিহাস।

গােড়ার কথা

উনবিংশ শতাব্দীর কথা। সে সময় দৈনিক ১২ ঘণ্টার বেশি, ক্ষেত্রবিশেষে ১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করতে হতাে শ্রমিকদের। কলকারখানা গিলে খাচ্ছিল শ্রমিকের স্বাভাবিক জীবন। ওদিকে পারিশ্রমিকও খুব অল্প। ফুসে উঠল শ্রমজীবী শ্রেণি। সময়টা ১৮৬০ সাল। আদর্শ কর্মসময় আট ঘণ্টা নির্ধারণের দাবি জানাল তারা। ধীরে ধীরে সংঘবদ্ধ হলাে। পরবর্তীকালে গড়ে তুলল ‘আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার’ নামে একটি শ্রমিক সংগঠন। সংগঠনটি অব্যাহতভাবে আন্দোলন চালিয়ে যেতে লাগল।

নিউইয়র্কের সমাবেশ

ক্রমেই বাড়ছিল শ্রমিকদের অধিকারসচেতনতা। সমানতালে আন্দোলনও ছড়িয়ে পড়ছিল। ১৮৮২ সালের ৫ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক শহরে সমবেত হন প্রায় ১০ হাজার শ্রমিক। অধিকার প্রতিষ্ঠার দাবিতে সেখানে বিশাল সমাবেশ করেন তারা।

শ্রমিকদের সময় বেঁধে দেওয়া

‘আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার সংগঠনের চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগােতে আন্দোলন শুরু হয়। প্রচুর শ্রমজীবী মানুষ রাস্তায় নেমে আসেন। ১৮৮৪ সালের অক্টোবরে আমেরিকার ফেডারেশন অব অর্গানাইজড ট্রেডস অ্যান্ড লেবার ইউনিয়নস’-এর বৈঠকে আট ঘণ্টা কাজের সময় নির্ধারণের বিষয়টি আলােচিত হয়। এরপর অন্যান্য শ্রমিক ইউনিয়নের সম্মতিক্রমে ১৮৮৬ সালের ১ মে পর্যন্ত দাবি বাস্তবায়নের জন্য মালিকপক্ষকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়। একটি পত্রিকায় এ-সংক্রান্ত একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হলে আন্দোলন আরও তীব্র আকার ধারণ করে। ফলে সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে ১ মে ও শিকাগাে শহর এক অবধারিত সংঘর্ষের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে ওঠে।

হে মার্কেট ম্যাসাকার

১ মে ১৮৮৬। শ্রমিকের ক্ষোভের আগুনে যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগাে শহর সেদিন ছিল তপ্ত কড়াই। তিন লক্ষাধিক শ্রমিক নেমে এসেছেন রাস্তায়। প্রতিবাদ-আন্দোলন চলছে। তবে শান্তিপূর্ণভাবে। সহিংস হয়ে ওঠেনি তখনাে। কিন্তু মালিকপক্ষের অনড় অবস্থান এবং পুলিশের উপস্থিতিতে শ্রমিকদের ক্ষোভ বাড়ছিল। শিকাগাের হে মার্কেট বাণিজ্যিক এলাকায় এক আততায়ী আচমকা বােমা ছােড়েন ঘিরে থাকা পুলিশদের লক্ষ্য করে। পাল্টা গুলি চালায় পুলিশ। হে মার্কেট এলাকা মুহূর্তে রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ ও শ্রমিক হতাহত হন।

মিথ্যা মামলা ও ফাঁসি

এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শ্রমিক ইউনিয়নগুলাের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করে যুক্তরাষ্ট্র সরকার। শুরু হয় ব্যাপক ধরপাকড়। প্রহসনমূলক বিচারে আটজনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। একজনকে কারাদণ্ড আর সাতজনকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেওয়া হয়। কিন্তু সাতজনের একজন কারারুদ্ধ অবস্থায় আত্মহত্যা করেন। ১৮৮৭ সালের নভেম্বরে উন্মুক্ত স্থানে বাকি ছয়জনের ফাঁসি কার্যকর করা হয়।

মামলা ও ফাঁসির মিথ্যাচার ফাঁস

প্রতিবাদ-আন্দোলন, দাঙ্গা-ধরপাকড়, মামলা-ফসি— এসবের মধ্যে আট ঘণ্টা কর্মঘণ্টা’র মূল দাবিটি চাপা পড়ে যায়। তবে তা খুব অল্প সময়ের জন্যই। ষড়যন্ত্রমূলক মামলা ও বিচারের মিথ্যাচার ধরা পড়ে যায় দ্রুতই। ১৮৯৩ সালের ২৬ জুন ইলিনয় সরকারের পক্ষ থেকে তা স্বীকার করা হয়। শেষ পর্যন্ত ‘দৈনিক আট ঘণ্টা কাজ’-এর দাবি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি পায়।

মে দিবসের স্বীকৃতি

১৮৮৯ সালের ১৪-২০ জুলাই ফরাসি বিপ্লবের শতবর্ষ পালিত হয়। এ উপলক্ষে প্যারিসে দ্বিতীয় আন্তর্জাতিক শ্রমিক সম্মেলনের প্রথম কংগ্রেস অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে শ্রমিকনেতা রেমন্ড লাভিনে একটি প্রস্তাব করেন। পরবর্তী বছর তথা ১৮৯০ সাল থেকে শিকাগাে প্রতিবাদের দিনটিকে আন্তর্জাতিকভাবে পালনের সেই প্রস্তাব সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়। সেই থেকে দিবসটি বিশ্বের ৯০টি দেশে সরকারিভাবে পালিত হয়ে আসছে।

https://youtu.be/6Lx2cHXcgss

প্রশ্নোত্তরে মে দিবস

প্রশ্ন : আন্তর্জাতিক মে দিবস/শ্রমিক দিবস কবে?
উত্তর : ১মে।

প্রশ্ন : মে দিবসের সঙ্গে সম্পর্কিত দাঙ্গা ‘হে মার্কেট ম্যাসাকার’ কত সালে এই দাঙ্গা হয়?
উত্তর : ১৮৮৬ সালে।

প্রশ্ন : হে মার্কেট’ কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগাে শহরে।

প্রশ্ন : আদর্শ কর্মঘণ্টা হিসেবে কত ঘণ্টাকে প্রতিষ্ঠার জন্য শ্রমিকেরা আন্দোলন করেছিলেন?
উত্তর : ৮ ঘণ্টা।

প্রশ্ন : আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস পালনের সিদ্ধান্ত হয় কত সালে ও কোথায়?
উত্তর : ১৮৮৯ সালে। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে অনুষ্ঠিত প্রথম আন্তর্জাতিক সমাজতান্ত্রিক কংগ্রেসে।

প্রশ্ন :যুক্তরাষ্ট্রেশ্রমিক দিবস পালিত হয় কত তারিখে?
উত্তর : সেপ্টেম্বর মাসের প্রথম সােমবার।

প্রশ্ন : হে মার্কেট স্মৃতিস্তম্ভ’ কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : শিকাগাের ফরেষ্ট পার্কে জার্মান ওয়াল্ডহেইম কবরস্থানে (বর্তমানে ফরেষ্ট হােম কবরস্থান)।

প্রশ্ন : হে মার্কেট স্মৃতিস্তম্ভ কত সালে নির্মিত হয়?
উত্তর : ১৮৯৩ সালে।

প্রশ্ন : ‘প্রিয়, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য’—মে দিবসকে কেন্দ্র করে রচিত পঙক্তিটির রচয়িতা কে?
উত্তর : সুভাষ মুখােপাধ্যায়।

প্রশ্ন : ‘তারাই মানুষ, তারাই দেবতা, গাহি তাহাদেরি গান, তাদেরি ব্যথিত বক্ষে পা ফেলে আসে নব উত্থান! কাজী নজরুল ইসলাম রচিত এই পঙক্তিতে দেবতা বলতে কাদের বােঝানাে হয়েছে?
উত্তর : কুলি-মজুরদের।

প্রশ্ন : শ্রমিকদের সার্বিক উন্নয়নকল্পে ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) প্রতিষ্ঠিত হয় কত সালে?
উত্তর : ১৯১৯ সালে।

প্রশ্ন : কোন চুক্তির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হয়?
উত্তর : ভার্সাই চুক্তি।

প্রশ্ন : ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা জাতিসংঘের সহায়ক সংস্থা হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করে কত সালে?
উত্তর : ১৯৪৬ সালে।

প্রশ্ন : জাতিসংঘের সবচেয়ে পুরােনাে ও প্রথম বিশেষায়িত সংস্থা কোনটি?
উত্তর : ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)।

প্রশ্ন : ‘আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সদর দপ্তর কোথায় অবস্থিত?
উত্তর : সুইজারল্যান্ডের জেনেভায়।

প্রশ্ন : আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সদস্যদেশ কতটি?
উত্তর : ১৮৭টি।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ কোন মেয়াদের জন্য আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) পরিচালনা পর্ষদের উপসদস্য নির্বাচিত হয়েছে?
উত্তর : ২০২১-২০২৪ মেয়াদে।

প্রশ্ন : আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা’ শান্তিতে নােবেল পুরস্কার লাভ করে কত সালে?
উত্তর : ১৯৬৯ সালে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার সদস্য হয় কবে?
উত্তর : ২২ জুন ১৯৭২ সালে।

প্রশ্ন : বাংলাদেশ সম্প্রতি আইএলওর কোন কনভেনশনটি অনুসমর্থন করেছে?
উত্তর : আইএলও কনভেনশন ১৩৮।

প্রশ্ন : আইএলও কনভেনশন ১৩৮ কী সম্পর্কিত?
উত্তর : কাজে যােগদানের ন্যূনতম বয়স সম্পর্কিত।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button