সামাজিক বিজ্ঞান

১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন

১৯১৯ সালের ভারত শাসন আইনে ভারতবাসীর আশা-আকাঙক্ষার প্রতিফলন ঘটেনি। শাসনতান্ত্রিক সমস্যা সমাধানের জন্য ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইন প্রণয়ন করা হয়। এ আইনের বৈশিষ্ট্যগুলাে নিম্নে দেওয়া হল

১. যুক্তরাষ্ট্র গঠন : ১৯৩৫ সালের ভারত শাসন আইনে ভারতের সকল প্রদেশ ও ইচ্ছুক রাজ্যগুলােকে নিয়ে
যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার প্রবর্তনের পরিকল্পনা করা হয়।

২. প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসন : এ আইনের মাধ্যমে প্রদেশগুলােকে স্বায়ত্তশাসন প্রদান করার প্রস্তাব করা হয়। এর ফলে
প্রদেশগুলাে সুনির্ধারিত ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয় এবং প্রদেশসমূহে দায়িত্বশীল সরকার প্রবর্তিত হয়। প্রাদেশিক সরকার ও
পরিষদের ওপর কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রণ সীমিত করা হয়।

৩. ক্ষমতা বণ্টন: এ আইন দ্বারা যুক্তরাষ্ট্রীয় বিষয়গুলাে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে এবং প্রাদেশিক বিষয়গুলাে প্রাদেশিক
সরকারের হাতে ন্যস্ত করা হয়। যুগ্ম বিষয়গুলাে কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারের শাসনাধীনে আনা হয়।

৪. দ্বৈত শাসন : এ আইনে কেন্দ্রে দ্বৈত শাসন প্রবর্তন করা হয় এবং প্রদেশ থেকে দ্বৈত শাসন বিলােপ করা হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের বিষয়সমূহ সংরক্ষিত এবং হস্তান্তরিত- এ দুই ভাগে ভাগ করা হয়। দেশরক্ষা, বৈদেশিক সম্পর্ক, ধর্মীয় বিষয়সমূহ এবং উপজাতি অধ্যুষিত এলাকার শাসনভার সংরক্ষিত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অপরপক্ষে আইন-শৃঙ্খলা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য প্রভৃতি বিষয়সমূহ হস্তান্তরিত বিষয়ের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

৫. জি-কক্ষবিশিষ্ট আইনসভা : এ আইনে কেন্দ্রে উচ্চ পরিষদ ও নিম্ন পরিষদ নামে দ্বি-কক্ষবিশিষ্ট সভার প্রবর্তন করা হয়। বাংলা, মুম্বাই (বােম্বে), চেন্নাই (মাদ্রাজ), যুক্ত প্রদেশ, বিহার ও আসাম প্রদেশেও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট আইন সভার প্রবর্তন করা হয়। অন্যান্য প্রদেশে এক কক্ষবিশিষ্ট আইনসভার ব্যবস্থা রাখা হয়।

৬. যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত : এ আইনে কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক সরকারের মধ্যে বিরােধ মীমাংসার জন্য একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় আদালত স্থাপনের ব্যবস্থা করা হয়।

৭. পৃথক নির্বাচন ও সংরক্ষণ : এ আইনে মুসলমানদের জন্য পৃথক নির্বাচন চালু রাখা হয় এবং কেন্দ্রীয় আইনসভায় মুসলমানদের জন্য এক-তৃতীয়াংশ আসন সংরক্ষণ করা হয়।

৮. গভর্নর জেনারেল ও প্রাদেশিক গভর্নর: এ আইন দ্বারা কেন্দ্রীয় সরকারের শাসনক্ষমতা একজন গভর্নর জেনারেল এবং প্রাদেশিক সরকারের শাসনক্ষমতা একজন প্রাদেশিক গভর্নরের হাতে ন্যস্ত করা হয়।

৯. উপদেষ্টী বাের্ড গঠন : এ আইনের ফলে ভারত-সচিবের ঐতিহাসিক কাউন্সিলের বিলুপ্তি ঘটে এবং এর স্থলে | অপেক্ষাকৃত কম ক্ষমতাসম্পন্ন একটি উপদেষ্টা বাের্ড গঠন করা হয়।

১০. নতুন প্রদেশ সৃষ্টি : এ আইন অনুযায়ী সিন্ধু ও উড়িষ্যা নামে দুইটি প্রদেশ সৃষ্টি করা হয়।

১১. মায়ানমার (বার্মা) পৃথকীকরণ : এ আইন দ্বারা মায়ানমার (বার্মা)-কে ভারত থেকে পৃথক করা হয়।

১২. সংবিধান সংশােধন: এ আইনের মাধ্যমে ব্রিটিশ পার্লামেন্টকে ভারতীয় শাসনতন্ত্র সংশােধনের ক্ষমতা প্রদান করা হয়।

১৩. শাসন-বিভাগীয় প্রাধান্য ; এ আইনের ফলে শাসন-বিভাগীয় প্রাধান্য প্রতিষ্ঠিত হয়। এ আইনের মাধ্যমে কেন্দ্রে গভর্নর
জেনারেল এবং প্রদেশে প্রাদেশিক গভর্নরের হাতকে শক্তিশালী করে নিজ নিজ ক্ষেত্রে আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করে।

Bcs Preparation

BCS Preparation provides you with course materials and study guides for JSC, SSC, HSC, NTRCA, BCS, Primary Job, Bank and many other educational exams.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button