আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
সাধারন বিজ্ঞান

স্বাস্থ্য রক্ষায় শরীরচর্চা এবং বিশ্রাম

শরীরই মানুষের প্রথম পরিচয়। তাই শরীরকে মানুষের জীবনসংগ্রামের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার বলা যেতে পারে। এই হাতিয়ারকে ঠিক রাখার দায়িত্ব আমাদেরই। শরীরকে ঠিক রাখার জন্য চাই সুষম খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়াম। এর মধ্য দিয়েই গড়ে ওঠে মানুষের শারীরিক দৃঢ়তা।

মানুষের জীবনে নিয়মিতভাবে ঘুম, খাওয়া এবং বিশ্রাম নেওয়া আবশ্যক, এগুলাে মানুষের শরীরের বিভিন্ন অংশকে সঠিকভাবে কাজকর্ম করতে সাহায্য করে। তবে মনে রাখতে হবে, এগুলাে কোনােভাবেই শরীরের সুপ্ত সম্পদগুলাের বিকাশ ঘটাতে সাহায্য করে না।

এই বিকাশ একমাত্র নিয়মিত শরীরচর্চা বা ব্যায়ামের মধ্য দিয়েই সম্ভব হতে পারে। একটা গাছের সবকিছু নির্ভর করে তার শিকড়ের ওপর, ঠিক তেমনি মানুষের চলাফেরা, ভাবনা-চিন্তা ইত্যাদি সবকিছুই নির্ভর করে তার স্নায়ুতন্ত্রের কার্যক্ষমতার ওপর। সুস্থ স্নায়ুতন্ত্র গড়তে হলে নিয়মিত অঙ্গ চালনার সাহায্যে উপযুক্ত এবং পরিমিত শরীরচর্চার প্রয়ােজন আছে।

আমরা সকলেই জানি, স্নায়ুতন্ত্র শরীরের মাংসপেশি নিয়ন্ত্রণ করে। তাই যদি নিয়মিত মাংসপেশির ব্যায়াম করি, তাহলে সহজেই স্নায়ুতন্ত্রকে সতেজ এবং সক্রিয় করে তােলা যাবে। এর ফলে স্নায়ুতন্ত্রের বিকাশ ঘটবে। শুধু তা-ই নয়, নিয়মিত শরীরচর্চার মধ্য দিয়ে যদি শরীরের বিভিন্ন দেহতত্ত্ব বা জৈব তন্ত্রগুলােকে সক্রিয় করে তােলা যায়, তাহলে সেগুলােরও পর্যাপ্ত বিকাশ ঘটবে এবং যার ফলে আমাদের দৈনিক কাজকর্ম সম্পাদন করার ক্ষমতা অনেকাংশে বেড়ে যাবে।

দৈনিক নিয়মিত কয়েক মিনিট শরীরচর্চার মধ্য দিয়েই শরীরের পরিপাক করার ক্ষমতা বাড়াতে পারব, রক্ত চলাচলের ক্ষমতা ভালাে করতে পারব, পাচন ক্ষমতা ভালাে হবে, শ্বাস-প্রশ্বাস ভালাে হবে, শরীরের তাপ নিয়ন্ত্রণও আরও সুষ্ঠু হবে। এক কথায় বলা যায়, একটা সুস্থ শরীরের অধিকারী হওয়া যাবে।

মনে রাখতে হবে, মাংসপেশির সক্রিয়তা এসব ব্যাপারে একটি বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে। তাই নিয়মিত এমন কিছু শারীরিক ক্রিয়াকলাপের চর্চা করতে হবে, যেন শরীরের প্রধান মাংসপেশিগুলাে সক্রিয় এবং উত্তেজিত হওয়ার সুযােগ পায়। বয়স, দৈহিক গঠন, সাধারণ স্বাস্থ্য প্রভৃতি দিক বিবেচনা করে ব্যায়ামের অভ্যাস করা উচিত।

ব্যায়াম যে শুধু নিরানন্দ পরিশ্রমের একটি বিষয় তা কিন্তু নয়। সব রকম খেলাধুলা একদিকে আনন্দের ব্যাপার, অন্যদিকে এগুলাে শারীরিক ব্যায়ামও বটে। আজকাল ছেলেরা এবং মেয়েরা সমানভাবে দৌড়ঝাঁপ, সাঁতার, হাঁটা, সাইকেল চালানাে, কারাতে থেকে শুরু করে ফুটবল, টেনিস, হকি, ক্রিকেট এসব খেলছে।

শরীর ঠিক রাখার জন্য শুধু যে নিয়ম করে ব্যায়াম করতে হয় তা নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রাও সেভাবে গড়ে তুলতে হয়। একজন মানুষ প্রতিদিন যদি ৮ থেকে ১০ হাজার পদক্ষেপ নেয়, তাহলে সে সুস্থ ও নীরােগ একটি দীর্ঘ জীবন আশা করতে পারে।

অত্যধিক পরিশ্রমের ফলে মানুষ যখন ক্লান্ত হয়ে পড়ে এবং শরীরের পেশিগুলাে অবশ হয়ে আসে, তখন সারা শরীরকে কিছুক্ষণ নিষ্ক্রিয় অবস্থায় রেখে আরাম করাকে আমরা বিশ্রাম বলি। ঘুমই শ্রেষ্ঠ বিশ্রাম। দেহ-মনকে সুস্থ ও সতেজ করার জন্য প্রত্যেক মানুষের কমপক্ষে দৈনিক ৬ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়ােজন।

বালক-বালিকাদের ৮/৯ ও শিশুদের ১০/১২ ঘণ্টা করে ঘুমের প্রয়ােজন। যারা রাতে কাজ করে, তাদের অবশ্যই দিনের বেলায় পর্যাপ্ত বিশ্রাম নেওয়া উচিত।

মনের বিশ্রাম: কেবল শরীরেরই নয়, মনেরও বিশ্রাম নেওয়া প্রয়ােজন। শরীর ও মন থেকে সমস্ত রকম উদ্বেগ, দুশ্চিন্তা, অশান্তি, একেবারে দূর করে দিয়ে দেহ-মনকে একান্তভাবে নিদ্রার কোলে সঁপে দিতে পারলে তবেই দেহ মনের পক্ষে প্রকৃত বিশ্রাম হয়। অনেক সময় দেখা যায়, এক কাজ থেকে অন্য কাজে মনােনিবেশ করেও শরীর ও মনকে বিশ্রাম দেওয়া যায়।

একে কর্মান্তরের মাধ্যমে বিশ্রাম বলা হয়। কঠিন কায়িক শ্রমের পর চিত্তবিনােদন বিশ্রামেরই নামান্তর। আবার কঠিন মানসিক পরিশ্রমের পর কর্মান্তর বিশ্রাম খোঁজার একটা উপায়। বিখ্যাত লেখকদের মধ্যে অনেককে দেখা যায়, যারা ঘণ্টার পর ঘণ্টা ফাউনটেন পেন পরিষ্কার করে যাচ্ছেন।

এতে তিনি কিন্তু আসলে তাঁর কাজের মাধ্যমে বিশ্রাম গ্রহণ করেন। অনেকে ছবি আঁকেন, অনেকে বাগান পরিচর্যা, পশুপাখি পালন কিংবা শৌখিন সবজি বাগান তৈরি করে বিশ্রাম গ্রহণ করেন। এ সমস্ত কাজকেই বলে কর্মান্তরের মাধ্যমে বিশ্রাম গ্রহণ।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button