সামাজিক বিজ্ঞান

সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ হতে সমাজ ও সভ্যতার বিভিন্ন ধাপ

সমাজ ও সভ্যতার বিভিন্ন ধাপ

সমাজ স্থিতিশীল নয়, পরিবর্তনশীল। বর্তমানকালে আমরা যে আধুনিক সমাজে বসবাস করছি, আগে তা ছিল না। বর্তমান আধুনিক সমাজ বিভিন্ন ধাপ অক্রিম করে বিবর্তন ধারায় বর্তমান রূপ লাভ করেছে। সমাজবিজ্ঞানীগণ সমাজ বিকাশের ধারাকে নিম্নলিখিতভাবে ভাগ করেছেন, যথা-

  • আদিম সমাজ
  • পশুপালন সমাজ
  • কৃষি সমাজ এবং
  • শিল্প সমাজ।

আবার প্রত্নতাত্ত্বিকেরা সমাজ ও সভ্যতার বিকাশের ধারাকে

  • প্রাচীন প্রযুগ
  • নব্য প্রস্তরযুগ
  • ব্রোঞ্জযুগ এবং
  • লৌহযুগ

এভাবে ভাগ করেছেন।

সমাজতাত্ত্বিক দৃষ্টিকোণ হতে সমাজ ও সভ্যতার বিভিন্ন ধাপ:

আদিম সমাজ : মানবসভ্যতার শুরু হয়েছে আদিম সমাজ হতে। এ সমাজকে নৃবিজ্ঞানীগণ অনক্ষর সমাজ বলে অভিহিত করেছেন। অর্থাৎ যে সমাজে সভ্যতার আলাে পৌছায়নি এবং যে সমাজের লােকেরা লিখতে পড়তে
জানত না সে সমাজকে আদিম সমাজ বলা যেতে পারে।

আদিম সমাজের নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্য দেখা যায় :

অর্থনৈতিক অবস্থা : আদিম সমাজের লােকদের অর্থনৈতিক অবস্থা ছিল অত্যন্ত সহজ সরল নিম্নমানের। তারা দলবদ্ধ হয়ে বনজঙ্গল হতে ফলমূল সংগ্রহ ও পশুপাখি শিকার করত এবং নদীনালা খালবিল হতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। এ সমাজের মানুষ খাদ্য উৎপাদন করতে পারত না, প্রকৃতি থেকে খাদ্য সংগ্রহ করত।

তাই এ অর্থনীতিকে খাদ্য-সংগ্রহ অর্থনীতি বলা হয়। আদিম সমাজে সম্পত্তিতে ব্যক্তিমালিকানা ছিল না, ছিল সামাজিক মালিকানা। ব্যক্তিগত মালিকানা না থাকার কারণে আদিম সমাজ ছিল শ্রেণীহীন। এ সমাজে খাদ্য ছিল অপ্রতুল। এ সময় কোনাে বাড়তি খাবার জমা রাখার চিন্তাই করা যেত না। শিকারে যা পাওয়া যেত সবাই মিলে একসঙ্গে ভুরিভােজ করত নয়তাে সবাই একসাথে উপােস করে থাকত। আদিম সমাজে প্রাকৃতিক শ্রমবিভাগ দেখা যায়। টাকা-পয়সা, লেনদেন, হাট-বাজার বলতে কিছুই ছিল না। তবে তাদের মধ্যে বিনিময় প্রথা বিদ্যমান ছিল।

হাতিয়ার : আদিম সমাজের মানুষেরা আত্মরক্ষা ও পশুপাখি শিকারের জন্য বিভিন্ন রকম হাতিয়ার ব্যবহার করত। আদিম মানুষের প্রথম হাতিয়ার হল গাছের ডালপালার লাঠি এবং অমসৃণ পাথরের টুকরা। ক্রমে ক্রমে তারা তীরধনুক, মুগুর, বল্লম, চাকু, বড়শি, দা, বর্শা, গদা, বুমেরাং ইত্যাদি তৈরি করতে শেখে।

পােশাক-পরিচ্ছদ : আদিম সমাজের লােকেরা শুধুমাত্র লজ্জা ও শীত নিবারণের জন্য বা বৃষ্টি ও রােদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্যই যে পােশাক পরিধান করত, তা নয়। সৌন্দর্যের প্রতীক হিসেবে তারা পােশাক-পরিচ্ছদ ব্যবহার করত। পােশাকের মাধ্যমেই আদিম সমাজের লােকদের সামাজিক মর্যাদা প্রকাশ পেত। পােশাক হিসেবে তারা ব্যবহার করত বনের লতাপাতা, গাছের ছাল-বাকল, অথবা পশু-পাখির চামড়া।

জীবনমান : আদিম সমাজের মানুষের জীবনযাত্রা প্রণালি ছিল অত্যন্ত নিম্নমানের। এরা ফলমূল সংগ্রহ, মাছ ও পশু-পাখি শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করত। তারা প্রকৃতিতে অসহায় জীবন যাপন করত। প্রকৃতির কাছে তারা যায়। বাড়তি খাবার ছিল না। দলবদ্ধ হয়ে শিকার করে যা পেত তা সবাই ভাগ করে খেত। এদের অবস্থা ছিল অনেকটা “দিন আনে দিন খায় গােছের”। রােগ, শােক, মহামারী, জীবজন্তুর সঙ্গে লড়াই করে
তাদেরকে অনিশ্চয়তার মধ্যে দিন কাটাতে হত।

পশুপালন সমাজ : আদিম সমাজের পরবর্তী সমাজব্যবস্থার নাম পশুপালন সমাজ। এ সমাজের মানুষেরা খাদ্য সংগ্রহের পাশাপাশি পশুপালন করে জীবিকা নির্বাহ করত। পশুপালন সমাজেই সর্বপ্রথম সম্পত্তিতে ব্যক্তিগত মালিকানা দেখা যায়।

কৃষি সমাজ : কৃষির আবিষ্কার মানবসমাজ বিকাশের আরাে একটি বৈপ্লবিক ঘটনা। কেননা পশুপালন সমাজে মানুষ যাযাবরের ন্যায় এক স্থান হতে অন্য স্থানে ঘুরে বেড়াত। কিন্তু কৃষি আবিষ্কারের সাথে সাথে মানুষ স্থায়ীভাবে এক স্থানে বসবাস শুরু করে। কৃষিকাজ মানুষের খাদ্যের সরবরাহ আরাে নিশ্চিত করে। উদ্বৃত্ত ফসল ফলায়, মানুষ কৃষিকাজ ছাড়াও অন্যান্য পেশায় যেমন- শিল্প, সংগীত, শিক্ষা, ব্যবসা-বাণিজ্য প্রভৃতি পেশায় অংশগ্রহণ করতে থাকে। অর্থাৎ কৃষিতে উদ্বৃত্ত ফসল সভ্যতার সূচনা করে।

শিলযুগ : কৃষিযুগের শেষ দিকে এবং শিল্পযুগে মানুষ শিল্পকারখানা গড়ে তােলে। এ সময়ে শিল্প, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির বিকাশ ঘটে। কৃষি ক্ষেত্রে যন্ত্রের ব্যবহার এবং বিদ্যুতের ব্যবহারে শিল্পকারখানায় উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পায়। ছােট ছােট শিল্পকারখানার পাশাপাশি বৃহদায়তন শিল্পকারখানা গড়ে ওঠে। সমাজে সৃষ্টি হয় বিভিন্ন ধরনের শ্রেণী এবং শ্রেণী-বৈষম্য।

শিল্পযুগকে প্রধানত তিনটি পর্যায়ে বিভক্ত করা হয়েছে। যথা-

  • পুঁজিবাদী যুগ
  • সমাজতান্ত্রিক যুগ এবং
  • সাম্যবাদী যুগ।

এ তিন যুগে সম্পত্তির প্রকৃতি ও মালিকানা বিভিন্ন প্রকৃতির। পুঁজিবাদী যুগে ২টি শ্রেণী দেখা যায়, যথাবুর্জোয়া বা পুঁজিপতি এবং শ্রমিক শ্রেণী। শিল্পকারখানা, ব্যাংক, বীমা, ব্যবসা-প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি যাবতীয় সম্পত্তির মালিক হল বুর্জোয়া।

এ ব্যবস্থায় শ্রমিকেরা মজুরীর বিনিময়ে উৎপাদন যন্ত্রে শ্রম বিক্রি করে। পুঁজিবাদী যুগের পরবর্তী পর্যায় হল সমাজতান্ত্রিক যুগ। এ যুগে কলকারখানা ও শিল্পপ্রতিষ্ঠানের ওপর ব্যক্তিগত মালিকানা লােপ পায় এবং রাষ্ট্রীয় মালিকানা প্রতিষ্ঠিত হয়। উৎপাদনের উপকরণে সামাজিক মালিকানা থাকায় এখানে মানুষ কর্তৃক মানুষের শােষণ থাকে না।

“সমাজতান্ত্রিক সমাজে মানুষ যার যার সাধ্যানুযায়ী কাজ করবে এবং যােগ্যতা অনুযায়ী পারিশ্রমিক পাবে।” এটাই হল সমাজতন্ত্রের মূল কথা। মার্কসীয় দর্শনের মূল লক্ষ্য সাম্যবাদী সমাজ প্রতিষ্ঠা, যেখানে প্রত্যেক ব্যক্তি সাধ্যানুযায়ী কাজ করবে এবং প্রয়ােজন অনুসারে বণ্টন ব্যবস্থায় অংশ নেবে।”

Bcs Preparation

BCS Preparation provides you with course materials and study guides for JSC, SSC, HSC, NTRCA, BCS, Primary Job, Bank and many other educational exams.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button