আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী

সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (CEPA)’র সাতকাহন

দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মােদি ৬ সেপ্টেম্বর ২০২২ সংবাদ সম্মেলন করেন। দুই দেশের মধ্যে সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি (CEPA) স্বাক্ষরের ঘােষণা দেন।

CEPA কী?

CEPA’র পূর্ণরূপ Comprehensive Economic Partnership Agreement। দুটি দেশের মধ্যে ব্যবসা, বিনিয়ােগ ও যােগাযােগ বাড়ানাের কৌশলগত উদ্যোগ বা ধারণাই CEPA। এতে দুই দেশের সুবিধা অনুযায়ী, অবাধ বাণিজ্যের পরিবেশ, সৃষ্টি হয়। বিশ্বের অনেক দেশেই সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি রয়েছে। ইউরােপীয় ইউনিয়নভুক্ত (EU) দেশগুলাের মধ্যেও এ চুক্তি রয়েছে।

বর্তমানে ভারতের সাথে সংযুক্ত আরব আমিরাত, জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ার CEPA চুক্তি রয়েছে। আর কানাডা ও বাংলাদেশের সাথে CEPA চুক্তি নিয়ে আলােচনা চলমান। বাংলাদেশ এখনাে কারও সাথে এ চুক্তি স্বাক্ষর করে নাই। ধারণা করা হচ্ছে, ভারতের সঙ্গেই প্রথম স্বাক্ষরিত হবে এই চুক্তি। এই চুক্তির পথ ধরে জাপান, চীন ও EU’র সাথেও CEPA’র সম্ভাবনা রয়েছে।

স্বাক্ষর প্রক্রিয়া

সাধারণত কয়েকটি ধাপে সম্পন্ন হয় সমন্বিত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি। চুক্তির প্রস্তুতি হিসেবে একটি যৌথ সমীক্ষা দল তৈরি করে সংশ্লিষ্ট পক্ষ। এই সমীক্ষা দল দুই দেশের বিদ্যমান ব্যবসা-বাণিজ্য এবং বাণিজ্যিক সহযােগিতার সম্ভাব্যতা যাচাই করে। দুই দেশের মধ্যে হওয়া অন্যান্য বাণিজ্য চুক্তির সুবিধা-অসুবিধা ও দুর্বলতা চিহ্নিত করার পাশাপাশি দুই দেশের বাজার সক্ষমতার বিভিন্ন বিষয় নিয়েও গবেষণা চালায়।

পরবর্তী ধাপে সমীক্ষার পর্যবেক্ষণের ওপর ভিত্তি করে নানা আলােচনা ও সমঝােতা বৈঠকের মধ্যে দিয়ে চুক্তির শর্তগুলাে প্রণয়ন করে দুই দেশ। এ সব শর্তে সংযােজন-বিয়ােজন-পরিমার্জন এবং সংশােধনের মধ্য দিয়ে একমত হওয়ার মাধ্যমে চূড়ান্ত চুক্তি স্বাক্ষরের দিকে এগিয়ে যায় দুই দেশ। এরপর আইনগত নানা প্রক্রিয়া শেষে চুক্তিটি স্বাক্ষরের পর উভয় দেশের সংসদে অনুমােদনের পর থেকেই মূলত কার্যকর হয় CEPA।

CEPA’র উদ্দেশ্য

সাধারণত ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য সহযােগী দেশগুলাের মধ্যেই হয় CEPA। তবে বাণিজ্য পরিস্থিতি, পণ্যের ধরন, বাণিজ্যিক আইন-কানুন ইত্যাদি দেশভেদে বিভিন্নরকম হওয়ায় একেক দেশের ক্ষেত্রে CEPA একেক রকম হয়।CEPA সাধারণত win-win-win এই তিন বিবেচনায় করা হয়। অর্থাৎ এক্ষেত্রে শুধু সংশ্লিষ্ট দুই দেশের সরকার ও ব্যবসায়ীদের সুবিধার কথাই মাথা রাখা হয় না, একই সঙ্গে ভােক্তাদের সুবিধার কথাও মাথায় রাখতে হয়।CEPA’র উদ্দেশ্য সংশ্লিষ্ট দেশগুলাের সাপেক্ষে স্নিভিন্ন হতে পারে। তবে মূল বিষয়টি হলাে দুই দেশের মধ্যে পণ্য ও সেবা বিনিময়ের ক্ষেত্রটি আরও উদার এবং বহুমাত্রিক করা।

বাংলাদেশের জন্য CEPA’র গুরুত্ব

২৪ নভেম্বর ২০১৬ বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশের (LDC) তালিকা থেকে উন্নয়নশীল দেশে পরিণত হবে। উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্যের সুবিধাসহ অন্যান্য সুবিধা বাংলাদেশ পাবে না। এতে করে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ও আঞ্চলিক জোটের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক ও আঞ্চলিক মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি (FTA) করতে হবে।

আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী থেকে আরো পড়ুন

অন্যথায় বাংলাদেশের পণ্য সেসব দেশে শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাবে না। বাংলাদেশ ও ভারত দুই দেশই বর্তমানে দক্ষিণ এশীয় মুক্ত বাণিজ্য চুক্তির (SAFTA) আওতায় রয়েছে। এর অধীনে স্বল্পোন্নত দেশ হিসেবে ভারতের বাজারে বাংলাদেশি পণ্য স্কমুক্ত প্রবেশাধিকার পাচ্ছে। LDC থেকে উত্তরণের ফলে ২০২৬ সালে SAFTA’র বিদ্যমান সুবিধা পাবে না। তখন দুই দেশের মধ্যে ব্যবসা ও বাণিজ্য বাড়াতে নতুন দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রয়ােজন হবে।

তাছাড়া ভারত বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান বাণিজ্য সহযােগী। চীনের পর সবচেয়ে বেশি পণ্য ভারত থেকে আমদানি করে বাংলাদেশ। তবে রপ্তানি সে তুলনায় নগণ্য। উভয় দেশের মধ্যে বাণিজ্য ঘাটতিও অনেক বেশি। যা প্রায় ১,২০০ কোটি মার্কিন ডলার। ভারত তাদের বাজারে বাংলাদেশের অধিকাংশ পণ্যেই শুল্কমুক্ত সুবিধা দিলেও ননট্যারিফ বাধার কারণে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি প্রত্যাশিতভাবে বাড়ছে না। সে হিসাবে দেশটির বিশাল বাজার ধরতে CEPA সহায়ক হবে। বাংলাদেশ-ভারত CEPA স্বাক্ষরিত হলে ভারতে বাংলাদেশের রপ্তানি ১৯০% এবং বাংলাদেশে ভারতের রপ্তানি ১৮৮% বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং বাংলাদেশ ও ভারতের GDP’তে যথাক্রমে ১.৭২% এবং ০.০৩% প্রবৃদ্ধি অর্জিত হবে।

ভারতের সাথে বাংলাদেশের ৫ বছরের বাণিজ্য চিত্র (হিসাব কোটি ডলারে)
অর্থবছর রপ্তানি আমদানি ঘাটতি
২০১৭-১৮ ৮৭ ৮৬২ ৭৭৫
২০১৮-১৯ ১২৪ ৭৬৮ ৬৪৪
২০১৯-২০ ১০৯ ৫৭৯ ৪৭০
২০২০-২১ ১২৭ ৮৫৯ ৭৩২
২০২১-২২ ১৯৯ ১,৬১৯ ১,৪২০
সূত্র : বাংলাদেশ ব্যাংক, ইপিবি ও ভারতীয় হাইকমিশন, ঢাকা

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button