ভাবসম্প্রসারণ

শুধাল পথিক, ‘সাগর হইতে কী অধিক ধনবান?’ জ্ঞানী কহে, ‘বাছা, তুষ্ট হৃদয় তারো চেয়ে গরীয়ান।’

শুধাল পথিক, ‘সাগর হইতে কী অধিক ধনবান?’
জ্ঞানী কহে, ‘বাছা, তুষ্ট হৃদয় তারো চেয়ে গরীয়ান।’

ভাব-সম্প্রসারণ : আত্মতুষ্টিই মানবজীবনের সবচেয়ে চরম ও পরম পাওয়া। কেননা সন্তুষ্টিতে যে সুখ রয়েছে তার কোনো তুলনা নেই। রত্নাকর সাগরের চেয়েও পরিতুষ্ট হৃদয় অধিক সুখসম্পদে সমৃদ্ধ।

পার্থিব এ-জীবনে চাওয়া পাওয়ার যেমন শেষ নেই, তেমনি তার অভাববোধও কোনোদিন শেষ হয় না। নতুন নতুন পাওয়া মানুষের মনে নতুন নতুন অভাববোধ জাগ্রত করে। এভাবে এক ধারাবাহিক অতৃপ্তি মানুষের মনকে আচ্ছন্ন করে রাখে। সে আরও চায়। মহাসাগরের তলদেশে অসংখ্য রত্নরাজির অফুরন্ত ভাণ্ডার পর্যন্ত সেচে আনতে চায়। ফলে সে সম্পদের পাহাড় গড়লেও তাতে তার সন্তুষ্টি আসে না, সে তৃপ্তি পায় না। সুখ তার কাছে কেবলই পলায়নপর সোনার হরিণ হয়ে তাকে হাতছানি দেয়, কিন্তু ধরা দেয় না। ধনসম্পদের প্রতি মানুষের অতিরিক্ত লোলুপতা মানুষকে যান্ত্রিক করে তোলে। সারাক্ষণ তার চিন্তা পড়ে থাকে সম্পদের স্তূপের পাশে। এই সম্পদ আহরণ নিয়েই তার যত ব্যস্ততা। জীবনের যে অপরাপর উদ্দেশ্য আছে, কর্তব্য আছে, সে তা ভুলে যায়। এভাবে পার্থিব তুচ্ছ বস্তুগত ধন আহরণ করতে গিয়ে সে অন্যায়, অত্যাচার, শোষণ, খুন, ব্যাভিচার ইত্যাদি জঘন্য কাজে লিপ্ত হতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। এ সব পাওয়া না পাওয়ার অন্ধকারে নিমজ্জিত থেকে সে কখনোই সুখের নাগাল পায় না। কারণ অতৃপ্তির বেদনা সারাক্ষণ তাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারে। সে বঞ্চিত হয় হৃদয়ের পরম চাওয়া ও পাওয়ার শান্তি থেকে। অপরপক্ষে, জ্ঞানি ব্যক্তি অল্পতেই তুষ্ট থাকেন। অর্থসম্পদকে ঘিরে তাঁর আশা কম। চলার জন্যে যেটুকু প্রয়োজন ততটুকু পেলেই তিনি তৃপ্ত। অতৃপ্তির বেদন। তাঁকে কখনোই গ্রাস করতে পারে না। তাঁর এই আত্মতৃপ্তিই তাঁর মনোবল বাড়িয়ে দেয়। পার্থিব ধনসম্পদ দুপাশে পায়ে ঠেলে নির্দ্বিধায় এগিয়ে যান জীবনের প্রকৃত গন্তব্যের দিকে- যেখানে রয়েছে মনস্তুষ্টির অপার সুখ। তাই মানুষকে পরিতৃপ্ত হৃদয়ের বৈশিষ্ট্য অর্জন করতে হবে।

Bcs Preparation

BCS Preparation provides you with course materials and study guides for JSC, SSC, HSC, NTRCA, BCS, Primary Job, Bank and many other educational exams.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button