আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

লিঙ্কে ক্লিক করুন
সামাজিক বিজ্ঞান

রাজা রামমােহন রায় সম্পর্কিত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

রাজা রামমােহন রায় ছিলেন অবিভক্ত বাংলার নবজাগরণের অগ্রদূত। তিনি ছিলেন একাধারে সমাজ, শিক্ষা ও ধর্মীয় সংস্কারক। এই মনীষী ১৭৭২ সালে হুগলি জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। রামাকান্ত রায় ছিলেন তার বাবা এবং তারিণী দেবী ছিলেন তাঁর জননী। তারিণী দেবী ছিলেন তেজস্বিনী, তীক্ষবুদ্ধিমতী ও নিষ্ঠাবান মহিলা। রাজা রামমােহন রায়। সংস্কৃত, আরবি, ফারসি, ইংরেজি ভাষায় পাণ্ডিত্য লাভ করেন।

হিব্রু, গ্রিক, সিরীয় প্রভৃতি ভাষায়ও দক্ষতা অর্জন করেন। ইসলাম ধর্ম, খ্রিষ্ট ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম সম্পর্কে তাঁর গভীর জ্ঞান ছিল। ১৮২৬ সালে তিনি একখানি বাংলা ব্যাকরণ রচনা করেন। এ বইটি পণ্ডিত সমাজে সমাদৃত হয়। তিনি প্রথমে কোম্পানির চাকরিতে যােগদান করেন এবং দায়িত্বপূর্ণ পদে উন্নীত হন।

১৮২৩ সালে সংবাদপত্র বিধি (Press Ordinance) পাস করা হলে রামমােহন এর বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন শুরু করেন। তিনি সুপ্রিম কোর্টে এক প্রতিবাদলিপি দাখিল করেন। এ প্রতিবাদলিপির প্রতিলিপি ইংল্যান্ডে প্রিভি কাউন্সিলে প্রেরণ করেন। এ কৃতিত্ব তার অদম্য সাহসের পরিচয় বহন করে।

শিক্ষা-সংস্কার :

রাজা রামমােহন রায় এ দেশে পাশ্চাত্য-শিক্ষা প্রবর্তনের পক্ষপাতী ছিলেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি কলকাতায় এ্যাংলাে-হিন্দু নামে একটি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। এছাড়া ব্রাহ্ম সমাজের মাধ্যমে এবং ডেভিড হেয়ার-এর সহযােগিতায় তিনি বহু স্কুল স্থাপন করে ইংরেজি শিক্ষা প্রসারের চেষ্টা করেন। শিক্ষা বিতারের উদ্দেশ্যে তাঁর প্রণীত শিক্ষানীতির রূপরেখা অনুসারে ১৮৩৫ সালে সরকারি শিক্ষানীতি গৃহীত হয়। রাজনীতির ক্ষেত্রে রামমােহন রায় ছিলেন প্রগতিবাদী। তিনি নিয়মতান্ত্রিক রাজনৈতিক আন্দোলনের সমর্থক ছিলেন। মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় আকবর তার কৃতিত্ব ও অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ তাকে রাজা উপাধিতে অলংকৃত করেন।

ধর্ম- সংস্কার :

রাজা রামমােহন রায় হিন্দুধর্মের অনেক সংস্কার সাধন করেন। হিন্দুধর্ম থেকে মূর্তিপূজা, বর্ণভেদ প্রথা এবং অর্থহীন ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও অন্যান্য কুসংস্কার দূর করার জন্য চেষ্টা করেন। তিনি একেশ্বরবাদ’-এ বিশ্বাসী ছিলেন। একেশ্বরবাদ প্রচারের উদ্দেশ্যে তিনি বাংলায় বেদান্তসূত্রের অনুবাদ করেন ও বেদান্ত কলেজ স্থাপন করেন। তিনি ব্রাহ্ম ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেন।

সমাজ-সংস্কার :

সমাজ-সংস্কারে রাজা রামমােহন রায়ের ভূমিকা বিশেষ উল্লেখযোগ্য। ১৮২৯ সালে তিনি ব্রাহ্ম সমাজ প্রতিষ্ঠা করেন। সতীদাহ প্রথা নিষিদ্ধকরণ ও বিধবা-বিবাহ প্রচলনের সপক্ষে তিনি জোরালাে প্রচার শুরু করেন। তার অক্লান্ত চেষ্টার ফলে ১৮২৯ সালে লর্ড বেন্টিঙ্ক আইন পাস করে সতীদাহ প্রথা রহিত করেন। সতীদাহ প্রথা প্রসঙ্গে রামমােহন প্রবর্তক ও নিবর্তকের সম্বাদ’ নামে একটি পুস্তক রচনা করেন।

এছাড়া তিনি হিন্দু সমাজের অস্পৃশ্যতার বিরুদ্ধে আন্দোলন চালিয়ে যান। তিনি বহুবিবাহের বিরােধী ছিলেন। হিন্দু নারীকে সুশিক্ষা প্রদান, নারীদের সম-অধিকার প্রতিষ্ঠা এবং বিধবাগণ যাতে সম্পত্তির উত্তরাধিকার থেকে বঞ্চিত না হয়, সে চেষ্টাও তিনি করেছেন। তিনি নিজেই সমুদ্রযাত্রা করে বিলেতে গমন করে সমুদ্রযাত্রা-সম্পর্কিত সামাজিক কুসংস্কার দূর করেন। শিক্ষা-সংস্কার, ধর্ম-সংস্কার, সামাজিক-সংস্কার প্রভৃতি ক্ষেত্রে অবিস্মরণীয় অবদান রেখে ১৮৩৩ সালে ইংল্যান্ডের ব্রিস্টল শহরে রাজা রামমােহন রায় ইহলােক ত্যাগ করেন।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button