বাংলা রচনা সম্ভার

প্রবন্ধ রচনা কি | প্রবন্ধ রচনা কাকে বলে? প্রবন্ধ রচনা লেখার নিয়ম বা কৌশল।

রচনা বলতে প্রবন্ধ রচনাকে বােঝায়।

‘রচনা’ শব্দের অর্থ কোনােকিছু নির্মাণ বা সৃষ্টি করা। কোনাে বিশেষ ভাব বা তত্ত্বকে ভাষার মাধ্যমে পরিস্ফুট করে তােলার নামই রচনা। রচনাকে সাধারণত সৃষ্টিশীল কর্ম হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এতে বিষয়ের উপস্থাপনা, চিন্তার ধারাবাহিকতা, সংযত বর্ণনা, ভাষার প্রাঞ্জলতা ও যুক্তির সুশৃঙ্খল প্রয়ােগ থাকে। লেখকের চিন্তা, কল্পনা ও বুদ্ধির মিলিত প্রয়াসে রচনা উৎকৃষ্ট হয়ে ওঠে।

‘প্রবন্ধ’ শব্দের প্রকৃত অর্থ প্রকৃষ্ট রূপে বন্ধন। প্রকৃষ্ট বন্ধন’ বলতে বিষয়বস্তু ও চিন্তার ধারাবাহিক বন্ধনকে বােঝায়। নাতিদীর্ঘ, সুবিন্যস্ত গদ্য রচনাকেই প্রবন্ধ বলে। প্রবন্ধ রচনায় বিষয়, ভাব, ভাষা সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

শিক্ষার্থীদের বেলায় রচনা ও প্রবন্ধ কথাটি সমার্থক। শিক্ষার্থীদের রচনায় নতুন কোনাে ভাব বা তত্ত্ব থাকে। একটা নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে শিক্ষার্থীরা মনের ভাব বা বক্তব্যকে প্রকাশ করে।

আরো পড়ুন: সারমর্ম ও সারাংশ লিখন | সারমর্ম/ সারাংশ লেখার ক্ষেত্রে নির্দেশনা | সারমর্ম/সারাংশ রচনার কৌশল

রচনা বা প্রবন্ধ লেখার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থী কোনাে বিষয়ে স্পষ্ট ধারণা ব্যক্ত করতে পারে। এতে তার বক্তব্যকে গুছিয়ে বলার দক্ষতা জন্মে। কোনাে বিষয় সম্পর্কে স্বাধীনভাবে চিন্তা করার ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। রচনা লেখার মধ্য দিয়ে শিক্ষার্থীর ভাষা ব্যবহারেরও দক্ষতা জন্মে। বক্তব্যকে সুস্পষ্ট করার জন্য যথার্থ শব্দ প্রয়ােগ এবং উপমা, অলংকার ইত্যাদি ব্যবহার সম্পর্কে শিক্ষার্থী সচেতন হয়ে ওঠে।

প্রকাশের জড়তা কাটিয়ে ওঠা ও ভাষাগত দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রবন্ধ-রচনার অনুশীলন প্রয়ােজন। এ ছাড়া শিক্ষার্থীর ব্যক্তিগত আবেগ, অনুভূতি, অভিজ্ঞতা, ব্যক্তিত্বের স্বাধীন প্রকাশের জন্য প্রবন্ধ-রচনা অনুশীলনের বিকল্প কিছু নেই।

রচনার বিভিন্ন অংশ

রচনার প্রধান অংশ তিনটি – কভূমিকা, খ. বিষয়বস্তু, গ. উপসংহার।

ক. ভূমিকা : এটি রচনার প্রবেশপথ। একে সূচনা, প্রারম্ভিকা বা প্রাক-কথনও বলা চলে। এতে যে বিষয়ে রচনা লেখা হবে, তার আভাস এবং সংক্ষিপ্ত ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়। ভূমিকা সংক্ষিপ্ত হওয়াই উচিত।

খ. বিষয়বস্তু বা মূল বক্তব্য : বিষয়বস্তু বা মূল বক্তব্যই হচ্ছে রচনার প্রধান অংশ। এ অংশে রচনার মূল বিষয়বস্তুর সামগ্রিক পরিচয় স্পষ্ট করতে হয়। বিষয় বা ভাবকে পরিস্ফুট করার জন্য প্রয়ােজনে ছােট ছােট অনুচ্ছেদ ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে লক্ষ রাখতে হবে, অনুচ্ছেদগুলাের ধারাবাহিকতা যেন বজায় থাকে। বক্তব্যকে স্পষ্ট করার জন্য এ অংশে প্রয়ােজনে উদাহরণ, উপমা, উদ্ধৃতি ইত্যাদি ব্যবহার করা যায় ।

গ. উপসংহার : বিষয়বস্তু আলােচনার পর এ অংশে একটা সিদ্ধান্তে আসা প্রয়ােজন হয় বলে এটাকে ‘উপসংহার’ নামে অভিহিত করা হয়। এখানে বর্ণিত বিষয়ে লেখকের নিজস্ব মতামত বা অভিজ্ঞতার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হয়।

রচনার শ্রেণিবিভাগ

বিষয়বস্তু অনুসারে রচনাকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায় : ক. বর্ণনামূলক রচনা, খ. চিন্তামূলক রচনা।

বর্ণনামূলক রচনা সাধারণত স্থান, কাল, বস্তু, ব্যক্তিগত স্মৃতি-অনুভূতি ইত্যাদি বিষয়ে হয়ে থাকে। ধান, পাট, শঙ্কাল, কাগজ, টেলিভিশন, বনভােজন, শৈশবস্মৃতি ইত্যাদি রচনা এই শ্রেণির অন্তর্ভুক্ত। চিন্তামূলক রচনায় থাকে সাধারণত তত্ত্ব, তথ্য, ধ্যান-ধারণা, চেতনা ইত্যাদি। শ্রমের মর্যাদা, বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার, পরিবেশদূষণ, অধ্যবসায়, সত্যবাদিতা, চরিত্রগঠন প্রভৃতি এই শ্রেণির রচনার মধ্যে পড়ে।

প্রবন্ধ-রচনার কৌশল

১. বর্ণনার মধ্য দিয়ে দৃষ্টি, রং, ধ্বনি, স্বাদ, গন্ধ, অনুভূতি ব্যবহার করে বিষয়বস্তুকে ছবির মতাে ফুটিয়ে তুলতে হয়।

২. বর্ণনামূলক রচনা লেখার সময় সময়সীমা এবং পরিসরের কথা মনে রেখে বিশেষ কিছু দিক বেছে নিতে হয়। সেগুলির সাহায্যে মূল বিষয়বস্তুকে সংক্ষেপে উপস্থাপন করতে হয়।

৩. রচনা লেখার সময় পরম্পরা বা ধারাবাহিকতার দিকে লক্ষ রাখতে হবে। চিন্তাগুলাে যেন এলােমেলাে না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা দরকার। জানা বিষয় ছাড়াও অনেক সময় অজানা বিষয় নিয়ে রচনা লিখতে হতে পারে। বিষয়ের ধারণাগুলাে একটির পর একটি এমনভাবে সাজাতে হবে, যাতে ভাবের কোনাে অসংগতি না থাকে।

৪. শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে রচনার আকার সাধারণত নির্দিষ্ট পরিসরের হয়ে থাকে। পরিমিত পরিসরে তাই রচনার সামগ্রিক বিষয়কে তুলে ধরতে হয়। অযথা বিষয়কে প্রলম্বিত করা ঠিক নয়। অপ্রয়ােজনীয় ও অপ্রাসঙ্গিক বাক্য লেখা থেকে বিরত থাকতে হয়। এক কথায় রচনা খুব ছােট বা খুব বড় হওয়া উচিত নয়।

৫. প্রবন্ধের ভাষা সহজ এবং প্রাঞ্জল হওয়া বাঞ্ছনীয়। সন্ধি, সমাসবদ্ধ পদ, অপরিচিত বা অপ্রচলিত শব্দ যথাসত্ব পরিহার করা ভালাে। বাগাড়ম্বর বা অলংকারবহুল শব্দ ব্যবহার করা হলে অনেক সময় বিষয়টি জটিল ও দুর্বোধ্য হয়ে পড়ে। সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষারীতির মাধ্যমে রচনাকে যথাসম্ভব রসমণ্ডিত ও হৃদয়গ্রাহী করার চেষ্টা করতে হয়।

প্রবন্ধ রচনায় দক্ষতা অর্জনের উপায়

প্রবন্ধ রচনায় রাতারাতি দক্ষতা অর্জন করা সম্ভব নয়। এর জন্য নিয়মিত অনুশীলন দরকার। এ ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত দিকগুলাে সহায়ক হতে পারে :

১. প্রবন্ধ লেখার দক্ষতা অর্জনের জন্য প্রচুর প্রবন্ধ বা রচনা পড়তে হবে। পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রবন্ধ, সংবাদ, প্রতিবেদন, ফিচার ইত্যাদি নিয়মিত পাঠ করলে নানা বিষয়ে ধারণা জন্মায় এবং শব্দভাণ্ডার বৃদ্ধি পায়। এতে লেখা সহজ হয়ে ওঠে।

২. প্রবন্ধের বিষয়বস্তু সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা থাকা দরকার। প্রবন্ধের মর্মবস্তু, যুক্তি, তথ্য, তত্ত্ব, বিচার বিশ্লেষণ ইত্যাদি বিষয়ানুগ, প্রাসঙ্গিক ও সামঞ্জস্যপূর্ণ হওয়া চাই। একই বক্তব্যের পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সেদিকে লক্ষ রাখা দরকার।

৩. ভাষারীতিতে সাধু ও চলিত যেন মিশে না যায় সে ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। অযথা অপ্রাসঙ্গিক তথ্য, উদ্ধৃতি ব্যবহার করা উচিত নয়।

৪. প্রাসঙ্গিক তথ্য-উপাত্ত ছাড়াও নিজের বক্তব্যকে আরাে জোরালাে করার জন্য প্রবাদ-প্রবচন, কবিতার পঙক্তি, উদ্ধৃতি ইত্যাদি সন্নিবেশ করা চলে।

৫. নিজের অভিজ্ঞতা, শিক্ষা, চিন্তাশক্তি, পঠন-পাঠন, ভাষাগত দক্ষতা ও উপস্থাপনা কৌশল ইত্যাদি প্রয়ােগ করে প্রবন্ধকে যথাসম্ভব হৃদয়গ্রাহী করার চেষ্টা করা উচিত।

Bcs Preparation

BCS Preparation provides you with course materials and study guides for JSC, SSC, HSC, NTRCA, BCS, Primary Job, Bank and many other educational exams.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button