আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
রসায়ন

পর্যায় সারণির পটভূমি (Background of Periodic Table)

মানুষ প্রাচীনকাল থেকে বিক্ষিপ্তভাবে পদার্থ এবং তাদের ধর্ম সম্পর্কে যে সকল ধারণা অর্জন করেছিল পর্যায় সারণি হচ্ছে তার একটি সম্মিলিত রূপ। পর্যায় সারণি একজন বিজ্ঞানীর একদিনের পরিশ্রমের ফলে তৈরি হয়নি। অনেক বিজ্ঞানীর অনেক দিনের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফলে আজকের এই আধুনিক পর্যায় সারণি তৈরি হয়েছে।

1789 সালে ল্যাভয়সিয়ে অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, হাইড্রোজেন, ফসফরাস, মার্কারি, জিংক এবং সালফার ইত্যাদি মৌলিক পদার্থসমূহকে ধাতু ও অধাতু এই দুই ভাগে ভাগ করেন। ল্যাভয়সিয়ের সময় থেকেই মৌলগুলােকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করার চিন্তা-ভাবনা শুরু হয় যেন একই ধরনের মৌলিক পদার্থগুলাে একটি নির্দিষ্ট ভাগে থাকে। 1829 সালে বিজ্ঞানী ডডাবেরাইনার লক্ষ করেন তিনটি করে মৌলিক পদার্থ একই রকমের ধর্ম প্রদর্শন করে। তিনি প্রথমে পারমাণবিক ভর অনুসারে তিনটি করে মৌল সাজান। এরপর তিনি লক্ষ করেন দ্বিতীয় মৌলের পারমাণবিক ভর প্রথম ও তৃতীয় মৌলের পারমাণবিক ভরের যােগফলের অর্ধেক বা তার কাছাকাছি, একে ডডাবেরাইনারের ত্রয়ীসূত্র বলে।

বিজ্ঞানী ডােবেরাইনার ক্লোরিন, ব্রোমিন ও আয়ােডিনকে প্রথম ত্রয়ী মৌল হিসেবে চিহ্নিত করেন। 1864 সাল পর্যন্ত আবিষ্কৃত মৌলসমূহের জন্য নিউল্যান্ড অষ্টক সূত্র নামে একটি সূত্র প্রদান করেন। এই সূত্র অনুযায়ী মৌলসমূহকে যদি পারমাণবিক ভরের ছােট থেকে বড় অনুযায়ী সাজানাে যায় তবে যেকোনাে একটি মৌলের ধর্ম তার অষ্টম মৌলের ধর্মের সাথে মিলে যায়। 1869 সালে রাশিয়ান বিজ্ঞানী মেন্ডেলিফ সকল মৌলের ধর্ম পর্যালােচনা করে একটি পর্যায় সূত্র প্রদান করেন।

সূত্রটি হলাে: “মৌলসমূহের ভৌত ও রাসায়নিক ধর্মাবলি তাদের পারমাণবিক ভর বৃদ্ধির সাথে পর্যায়ক্রমে আবর্তিত হয়”। এ সূত্র অনুসারে তিনি তখন পর্যন্ত আবিষ্কৃত 63টি মৌলকে 12টি আনুভূমিক সারি আর ৪টি খাড়া কলামের একটি ছকে পারমাণবিক ভর বৃদ্ধি অনুসারে সাজিয়ে দেখান যে, একই কলাম বরাবর সকল মৌলগুলাের ধর্ম একই রকমের এবং একটি সারির প্রথম মৌল থেকে শেষ মৌল পর্যন্ত মৌলগুলাের ধর্মের ক্রমান্বয়ে পরিবর্তন ঘটে। এই ছকের নাম দেওয়া হয় পর্যায় সারণি (Periodic Table)।

মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির আরেকটি সাফল্য হচ্ছে কিছু মৌলিক পদার্থের অস্তিত্ব সম্পর্কে সঠিক ভবিষ্যদ্বাণী। সে সময় মাত্র 63টি মৌল আবিষ্কৃত হওয়ার কারণে পর্যায় সারণির কিছু ঘর ফাঁকা থেকে * যায়। মেন্ডেলিফ এই ফাঁকা ঘরগুলাের জন্য যে মৌলের ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন পরবর্তীতে সেগুলাে সত্য ও প্রমাণিত হয়।

পর্যায় সারণি

আধুনিক পর্যায় সারণি

মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণির কিছু ত্রুটি পরিলক্ষিত হয়। মেন্ডেলিফ পারমাণবিক ভর অনুযায়ী তার পর্যায় সারণিতে যে নিয়মানুযায়ী মৌলগুলাে বসিয়েছিলেন সেই নিয়মানুযায়ী যে পরমাণুর পারমাণবিক ভর কম থাকবে সেই পরমাণু পর্যায় সারণিতে আগে বসবে এবং যে পরমাণুর পারমাণবিক ভর বেশি থাকবে সেই পরমাণু পর্যায় সারণিতে পরে বসবে।

কিন্তু দেখা যায় মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণিতে আর্গনের পারমাণবিক ভর 40 এবং পটাশিয়াম-এর পারমাণবিক ভর 39 হওয়া সত্ত্বেও একই গ্রুপের মৌলসমূহের ধর্মের মিল করানাের জন্য আর্গনকে পটাশিয়ামের আগে বসানাে হয়েছিল। এরকম আরও অনেক মৌলের ক্ষেত্রে দেখা যায় পারমাণবিক ভর বেশি হওয়া সত্ত্বেও তাদেরকে কোনাে কোনাে মৌলের আগে পর্যায় সারণিতে বসানাে হয়েছিল। এটি ছিল পর্যায় সারণির ত্রুটি। এরকম আরও অনেক ত্রুটি মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণিতে লক্ষ করা যায়।

1913 সালে মােসলে পারমাণবিক ভরের পরিবর্তে পারমাণবিক সংখ্যা অনুযায়ী মৌলগুলােকে পর্যায় সারণিতে সাজানাের প্রস্তাব দেন। পারমাণবিক সংখ্যা অনুসারে পর্যায় সারণিতে মৌলের স্থান দেওয়া হলে মেন্ডেলিফের পর্যায় সারণিতে আর্গনের পারমাণবিক সংখ্যা 18 এবং পটাশিয়াম-এর পারমাণবিক সংখ্যা 19।

কাজেই আর্গন পটাশিয়ামের আগে বসবে। কাজেই পারমাণবিক সংখ্যা অনুসারে পর্যায় সারণিতে মৌলের স্থান দেওয়া হলে এই রকম ত্রুটিগুলাে সংশােধিত হয়। আন্তর্জাতিক রসায়ন ও ফলিত রসায়ন সংস্থা (International Union of Pure and Applied Chemistry বা সংক্ষেপে IUPAC) এখন পর্যন্ত 118টি মৌলিক পদার্থকে শনাক্ত করেছে। IUPAC সংস্থাটি আন্তর্জাতিকভাবে রসায়ন ও ফলিত রসায়নের বিভিন্ন নিয়মকানুন, ক্রমবর্ধমান পরিবর্তনের কোনটি গ্রহণ করা যায় এবং কোনটি বর্জন করা উচিত এই বিষয়গুলাে দেখাশােনা এবং নিয়ন্ত্রণ করে।

118টি মৌলের মধ্যে বেশির ভাগ মৌলই প্রকৃতিতে পাওয়া যায় এবং বাকি কিছু মৌল ল্যাবরেটরিতে তৈরি করা হয়েছে। ল্যাভয়সিয়ে মাত্র 33টি মৌল নিয়ে ছক তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন। মেন্ডেলিফ 63টি আবিষ্কৃত মৌল এবং এটি অনাবিষ্কৃত মৌল নিয়ে পর্যায় সারণি নামে যে ছকটি তৈরি করেছিলেন, বর্তমানে সেটি 118টি মৌলের আধুনিক পর্যায় সারণি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button