আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
গ্রন্থ-সমালোচনা
Trending

পদ্মানদীর মাঝি : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়

গ্রন্থের নাম পদ্মানদীর মাঝি
লেখক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়
প্রথম প্রকাশ ১৯৩৬
প্রকাশক গুরুদাস চট্টোপাধ্যায় এণ্ড সন্স, কলকাতা

ঔপন্যাসিক মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সর্বাধিক পঠিত এবং একাধিক ভাষায় অনূদিত জনপ্রিয় উপন্যাস ‘পদ্মানদীর মাঝি। এ উপন্যাসের পটভূমি বাংলাদেশের বিক্রমপুর-ফরিদপুর অঞ্চল। পদ্মা নদী এবং এর তীরবর্তী কেতুপুর গ্রামের জেলে-মাঝিদের বাস্তব জীবনকে কেন্দ্র করে উপন্যাসের কাহিনি গড়ে উঠেছে।

ঘনবসতি জেলেপাড়ার মাঝি ও জেলেদের জীবনের সুখ-দুঃখ, হাসিকান্না, অভাব-অভিযােগ নিপুণতার সাথে চিত্রিত হয়েছে। তাদের প্রতিটি দিন কাটে দীনহীন অসহায় আর ক্ষুধা-দারিদ্রের সাথে লড়াই করে। দুবেলা দুমুঠো খেয়ে-পরে বেঁচে থাকাটাই যেন তাদের জীবনের পরম আরাধ্য। এটুকু পেলেই তারা খুশি। পদ্মানদীর মাঝি’ বাংলা সাহিত্যের একটি বিশিষ্ট আঞ্চলিক উপন্যাস।

এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন

এ উপন্যাসের আঙ্গিক গঠন, রচনাশৈলী, পাত্র-পাত্রীদের মুখে আরােপিত ভাষা, জীবনাচরণ, সংস্কৃতি-এ সবই আঞ্চলিক উপন্যাসের পরিচয়বাহী। ১৯৩৪ সাল থেকে উপন্যাসটি পূর্বাশা পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হতে থাকে এবং ১৯৩৬ সালে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।

প্রকাশিত হওয়ার পর এটি ভারতীয় উপন্যাসগুলাের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভাষায় অনূদিত হওয়ার গৌরব লাভকরে। ভারতের একাধিক প্রাদেশিক ভাষাসহ ইংরেজি, চেক, হাঙ্গেরিয়ান, রুশ, লিথুয়ানিয়ান, নরওয়েজিয়ান ও সুইডিশ ভাষায় এ উপন্যাস প্রকাশিত হয়।

গ্রন্থ সংক্ষেপ

‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসের কেন্দ্রীয় চরিত্র ও নায়ক কুবের। সে পদ্মা নদীর সহায় সম্বলহীন, নিঃস্ব-ভাগ্যাহত মাঝি, প্রতিনিয়তই অভাব-অনটনের সাথে লড়াই করে তাকে বেঁচে থাকতে হয়। পদ্মাতীরের অজ পাড়াগাঁ কেতুপুরের বাসিন্দা কুবের একদিকে যেমন চিরপঙ্গু মালার স্বামী, অন্যদিকে সে তার সন্তানদের স্নেহময় পিতা।

নদীতে সে তার সঙ্গী-সাথিদের নিয়ে মাছ ধরে, বিশেষত ইলিশ মাছ ধরে সে জীবিকা নির্বাহ করে। একেবারে নিম্নবিত্ত ও নিম্নতম পর্যায়ের মানুষ কুবের। সহজ-সরল হওয়ায় তাকে অনেকেই ঠকায়। তার মাঝেও আছে স্বাভাবিক দোষ-গুণ ও কামনা-বাসনা। একসময় কপিলার প্রতি সে আদিম আকর্ষণ অনুভব করে।

ঔপন্যাসিক মূলত কুবেরকে কেন্দ্র করে বাকি চরিত্রগুলাে অঙ্কন করেছেন। এ উপন্যাসের নায়িকা কপিলা চতুর, চপল ও উপস্থিত বুদ্ধিসম্পন্ন এক যুবতী। তার আচরণের মধ্যে কিছুটা আদিম ও অসংস্কৃত মনের পরিচয় লক্ষণীয়। যা সমাজের চোখে অনেকটাই নিন্দনীয়। ব্যক্তিগত পরিচয়ে সে মালার বােন, সাংসারিক পরিচয়ে সে শ্যামাদাসের স্ত্রী। এ উপন্যাসের রহস্যময় ও গুরুত্বপূর্ণ একটি প্রধান চরিত্র হােসেন মিয়া।

নােয়াখালীর এই লােকটি বহুদর্শী ও বহু অভিজ্ঞ এক ব্যক্তি। পদ্মার তীর সংলগ্ন মাঝিপ্রধান গ্রামগুলাের অসহায় মাঝিদের মাঝে প্রায়ই সে সেবকরূপে আবির্ভূত হয়। তবে তার এ সেবাকর্মের পেছনে রয়েছে এক গভীর দুরভিসন্ধি। সমুদ্রের বুকে হােসেন মিয়া একটি দ্বীপের পত্তন নিয়েছিল। নাম তার ময়নাদ্বীপ। বিভিন্ন এলাকা থেকে দরিদ্র মানুষদের নিয়ে ময়নাদ্বীপে লােকবসতি গড়ে তুলেছিল সে।

এই ময়নাদ্বীপকে ঘিরেই হােসেন মিয়ার সব স্বপ্ন। কুবের একসময় ঘটি ও টাকা চুরির অভিযােগে অভিযুক্ত হয়ে জেল খাটার ভয়ে হােসেন মিয়ার কাছে অসহায়ভাবে আত্মসমর্পণ করে। এক অসংস্কৃত, আদিম ও নিষিদ্ধ ভালােবাসার প্রতি আকৃষ্ট কুবের কপিলাকে নিয়ে চিরকালের জন্য চলে যায় হােসেন মিয়ার ময়নাদ্বীপে। এ উপন্যাসে আরও রয়েছে রাসু, ধনঞ্জয়, শীতল বাবু, পীতম মাঝি, গােপী, মালা, গণেশ, আমিনুদ্দি, রসুল, ফাতেমা প্রভৃতি চরিত্র। এ সকল চরিত্রের সমন্বয়ে এ উপন্যাসটিতে একটি * সার্থক সমাজচিত্র অঙ্কনের কৃতিত্ব দেখিয়েছেন ঔপন্যাসিক।

সাহিত্যিক পরিচিতি

জন্ম ১৯ মে ১৯০৮; বিহার জেলার সাঁওতাল পরগনার দুমকা গ্রামে।
উপন্যাস জননী (১৯৩৫), দিবারাত্রির কাব্য (১৯৩৫), পুতুলনাচের ইতিকথা (১৯৩৬), পদ্মানদীর মাঝি (১৯৩৬), শহরতলী (১৯৪০-৪১), অহিংসা (১৯৪১), শহরবাসের ইতিকথা (১৯৪৬), চতুষ্কোণ (১৯৪৮), জীয়ন্ত (১৯৫০), সােনার চেয়ে দামী (১৯৫১), চিহ্ন(১৯৪৭), স্বাধীনতার স্বাদ (১৯৫১), ইতিকথার পরের কথা (১৯৫২), আরােগ্য (১৯৫৩) প্রভৃতি।
গল্প অতসী মামী ও অন্যান্য গল্প (১৯৩৫), প্রাগৈতিহাসিক (১৯৩৭) মিহি ও মােটা কাহিনী (১৯৩৮), সরীসৃপ (১৯৩৯), বৌ (১৯৪৩), সমুদ্রের স্বাদ (১৯৪৩), ভেজাল (১৯৪৪), হলুদ পােড়া (১৯৪৫), আজ কাল পরশুর গল্প (১৯৪৬), মাটির মাশুল, ছােটবড় (১৯৪৮), ছােট বকুলপুরের যাত্রী (১৯৪৯), শ্রেষ্ঠ গল্প (১৯৫০), ফেরিওয়ালা (১৯৫৩), উত্তরকালে গল্প সংগ্রহ।
প্রবন্ধ লেখকের কথা
মৃত্যু ৩ ডিসেম্বর ১৯৫৬।

বিভিন্ন পরীক্ষায় আসা প্রশ্নাবলি

প্রশ্ন : ‘পদ্মানদীর মাঝি’ কার লেখা উপন্যাস?
উত্তর : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়।

প্রশ্ন : মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘পদ্মানদীর মাঝি’ নামক উপন্যাসের উপজীব্য—
উত্তর : জেলে-জীবনের বিচিত্র সুখদুঃখ।

প্রশ্ন : ‘পদ্মানদীর মাঝি’ উপন্যাসটির প্রকাশকাল কোনটি?
উত্তর : ১৯৩৬।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button