আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
বাংলা ভাষার ব্যাকরণ ও নির্মিতি

নতুন ও পুরোনো ব্যাকরণ বই অনুসারে পদের শ্রেণীবিভাগ

পুরোনো ব্যাকরণ বইয়ে পদের শ্রেণি দেখানো আছে পাঁচ রকম – বিশেষ্য, সর্বনাম, বিশেষণ, ক্রিয়া ও অব্যয়। নতুন ব্যাকরণে পদকে আট শ্রেণিতে ভাগ করে আলোচনা করা হয়েছে। ফলে নতুনভাবে পদের শ্রেণি সম্পর্কে জানা দরকার।

পদের শ্রেণি

বাক্যে ব্যবহৃত একেকটি শব্দকে পদ বলে। এসব শব্দ বা পদকে আট শ্রেণিতে ভাগ করা যায়— ১. বিশেষ্য, ২. সর্বনাম, ৩. বিশেষণ, ৪. ক্রিয়া, ৫. ক্রিয়া বিশেষণ, ৬. অনুসর্গ, ৭. যোজক ও ৮. আবেগ।

বিশেষ্য

যেসব শব্দ দিয়ে ব্যক্তি, প্রাণী, স্থান, বস্তু, ধারণা ও গুণের নাম বোঝায়, সেগুলোকে বিশেষ্য বলে। যেমন — শফিক, হাতি, মিরপুর, লবণ, ভ্রমণ, মধুরতা ইত্যাদি।

বিশেষ্যের শ্রেণিবিভাগ

বিশেষ্য ছয় প্রকার। যথা: ১. নাম- বিশেষ্য, ২. জাতি-বিশেষ্য, ৩. বস্তু-বিশেষ্য, ৪. সমষ্টি-বিশেষ্য, ৫. গুণ-বিশেষ্য এবং ৬. ক্রিয়া-বিশেষ্য।

১. নাম বিশেষ্য : ব্যক্তি, স্থান, দেশ, কাল, সৃষ্টি প্রভৃতির সুনির্দিষ্ট নামকে নাম- বিশেষ্য বলা হয়। যেমন — জিনাত, সিলেট, মেঘনা, আষাঢ়, রোববার, সঞ্চয়িতা ইত্যাদি।

২. জাতি বিশেষ্য : জাতি-বিশেষ্য নির্দিষ্ট কোনো নাম না বুঝিয়ে প্রাণী ও অপ্রাণীর সাধারণ নামকে বোঝায়। যেমন— মানুষ, গরু, ছাগল, ফুল, ফল, নদী, সাগর, পর্বত ইত্যাদি।

৩. বস্তু বিশেষ্য : কোনো দ্রব্য বা বস্তুর নামকে বস্তু-বিশেষ্য বলে। যেমন—ইট, লবণ, আকাশ, টেবিল, বই ইত্যাদি।

৪. সমষ্টি বিশেষ্য : এ ধরনের বিশেষ্য দিয়ে ব্যক্তি বা প্রাণীর সমষ্টিকে বোঝায়। যেমন— মিছিল, পরিবার, ঝাঁক, বাহিনী ইত্যাদি।

৫. গুণ বিশেষ্য : গুণগত অবস্থা ও ধারণার নামকে গুণ-বিশেষ্য বলে। যেমন— সরলতা, দয়া, আনন্দ, গুরুত্ব, দীনতা, ধৈর্য ইত্যাদি।

৬. ক্রিয়া বিশেষ্য : যে বিশেষ্য দিয়ে কোনো ক্রিয়া বা কাজের নাম বোঝায়, তাকে ক্রিয়া-বিশেষ্য বলে। যেমন— পঠন, ভোজন, শয়ন, করা, করানো, পাঠানো, নেওয়া ইত্যাদি।

এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন

সর্বনাম

বিশেষ্যের পরিবর্তে ব্যবহৃত শব্দকে সর্বনাম বলে। যেমন—‘রাবেয়া লিখিত পরীক্ষা ভালো দিয়েছে। সে এখন মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে।’ দ্বিতীয় বাক্যের ‘সে’ প্রথম বাক্যের ‘রাবেয়া’র পরিবর্তে বসেছে।

সর্বনামের শ্রেণিবিভাগ

সর্বনামকে নিচের ৯ শ্রেণিতে ভাগ করা যায়। যেমন-

১. ব্যক্তিবাচক সর্বনাম : ব্যক্তিবাচক সর্বনাম ব্যক্তিনামের পরিবর্তে বসে। যেমন—আমি, আমরা, আমাকে, আমাদের, তুমি, তোমরা, তুই, তোরা, আপনি, আপনারা, তোমাকে, তোকে, আপনাকে, সে, তারা, তিনি, তাঁরা, এ, এরা, ওর, ওদের ইত্যাদি।

২. আত্মবাচক সর্বনাম : কর্তা নিজেই কোনো কাজ করেছে, এটি জোর দিয়ে বোঝানোর জন্য এ ধরনের সর্বনাম ব্যবহার করা হয়। যেমন—নিজে (সে নিজে অঙ্কটা করছে), স্বয়ং ইত্যাদি।

৩. নির্দেশক সর্বনাম : যে সর্বনাম নৈকট্য বা দূরত্ব নির্দেশ করে, তাকে নির্দেশক সর্বনাম বলে। যেমন— নিকট নির্দেশক–এ, এই, এরা, ইনি; দূর নির্দেশক – ও, ওই, ওরা, উনি।

৪. অনির্দিষ্ট সর্বনাম : অনির্দিষ্ট বা পরিচয়হীন কিছু বোঝাতে যে সর্বনাম ব্যবহৃত হয়, তাকে অনির্দিষ্ট সর্বনাম বলে। যেমন— কেউ, কোথাও, কিছু, একজন (একজন এসে খবরটা দেয়) ইত্যাদি।

৫. প্রশ্নবাচক সর্বনাম : প্রশ্ন তৈরির জন্য প্রশ্নবাচক সর্বনাম প্রয়োগ করা হয়। যেমন— কে, কারা, কাকে, কার, কী (কী দিয়ে ভাত খায় ?) ইত্যাদি।

৬. সাপেক্ষ সর্বনাম : পরস্পর নির্ভরশীল দুটি সর্বনামকে সাপেক্ষ সর্বনাম বলে। যেমন—যারা তারা, যে-সে, যেমন-তেমন (যেমন কর্ম তেমন ফল) ইত্যাদি।

৭. পারস্পরিক সর্বনাম : দুই পক্ষের সহযোগিতা বা নির্ভরতা বোঝাতে পারস্পরিক সর্বনাম ব্যবহৃত হয়। যেমন– পরস্পর, নিজেরা নিজেরা (যাবতীয় দ্বন্দ্ব নিজেরা নিজেরা মিটমাট করে) ইত্যাদি।

৮. সকলবাচক সর্বনাম : ব্যক্তি, বস্তু বা ভাবের সমষ্টি বোঝাতে সকলবাচক সর্বনাম হয়। যেমন— সবাই, সকলে, সকলকে, সবার, সমস্ত, সব ইত্যাদি।

৯. অন্যবাচক সর্বনাম : নিজ ভিন্ন অন্য কোনো অনির্দিষ্ট ব্যক্তি বোঝাতে অন্যবাচক সর্বনাম ব্যবহৃত হয়। যেমন— অন্য, অপর, পর, অমুক ইত্যাদি।

বিশেষণ

যে শব্দ দিয়ে বিশেষ্য ও সর্বনামের গুণ, দোষ, সংখ্যা, পরিমাণ, অবস্থা ইত্যাদি বোঝায়, তাকে বিশেষণ বলে। যেমন— পাকা ফল, মধুর গলা, তিরিশ টাকা, অর্ধেক সম্পত্তি, ভাঙা চেয়ার।

বিশেষণের শ্রেণিবিভাগ

বিশেষণ অনেক রকম হতে পারে।

১. বর্ণবাচক : যে বিশেষণ দিয়ে রং নির্দেশ করা হয়, তাকে বর্ণবাচক বিশেষণ বলে। যেমন— নীল আকাশ, সবুজ মাঠ, লাল ফিতা। এখানে ‘নীল’, ‘সবুজ’ বা ‘লাল’ হলো বর্ণবাচক বিশেষণ বলে।

২. গুণবাচক : যে বিশেষণ দিয়ে গুণ বা বৈশিষ্ট্য বোঝায়, তাকে গুণবাচক বিশেষণ যেমন— চালাক ছেলে, ঠান্ডা পানি। এখানে ‘চালাক’ ও ‘ঠান্ডা’ হলো গুণবাচক বিশেষণ।

৩. অবস্থাবাচক : যে বিশেষণ দিয়ে অবস্থা বোঝায়, তাকে অবস্থাবাচক বিশেষণ বলে। যেমন— চলন্ত ট্রেন, তরল পদার্থ। এখানে ‘চলন্ত’ ও ‘তরল’ অবস্থাবাচক বিশেষণ।

৪. ক্রমবাচক : যে বিশেষণ দিয়ে ক্রমসংখ্যা বোঝায়, তাকে ক্রমবাচক বিশেষণ বলে। যেমন—এক টাকা, আট দিন। এখানে ‘এক’ ও ‘আর্ট’ ক্রমবাচক বিশেষণ।

৫. পূরণবাচক : যে বিশেষণ দিয়ে পূরণসংখ্যা বোঝায়, তাকে পূরণবাচক বিশেষণ বলে। যেমন— তৃতীয় প্রজন্ম, ৪৩তম বিসিএস। এখানে ‘তৃতীয়’ ও ‘৪৩তম’ পূরণবাচক বিশেষণ।

৬. পরিমাণবাচক : যে বিশেষণ দিয়ে পরিমাণ বা আয়তন বোঝায়, তাকে পরিমাণবাচক বিশেষণ বলে। যেমন— আধা কেজি চাল, অনেক লোক। এখানে ‘আধা কেজি’ ও ‘অনেক’ পরিমাণবাচক বিশেষণ।

৭. উপাদানবাচক : যে বিশেষণ দিয়ে উপাদান নির্দেশ করে, তাকে উপাদানবাচক বিশেষণ বলে। যেমন—বেলে মাটি, পাথুরে মূর্তি। এখানে ‘বেলে’ ও ‘পাথুরে’ উপাদানবাচক বিশেষণ।

৮. প্রশ্নবাচক : যে বিশেষণ দিয়ে প্রশ্নবাচকতা নির্দেশিত হয়, তাকে প্রশ্নবাচক বিশেষণ বলে। যেমন—কেমন গান? কতক্ষণ সময়? এখানে ‘কেমন’ ও ‘কতক্ষণ’ প্রশ্নবাচক বিশেষণ।

৯. নির্দিষ্টতাবাচক : যে বিশেষণ দিয়ে বিশেষিত শব্দকে নির্দিষ্ট করা হয়, তাকে নির্দিষ্টতাবাচক বিশেষণ বলে। যেমন— এই দিনে, সেই সময়। এখানে ‘এই’ ও ‘সেই’ নির্দিষ্টতাবাচক বিশেষণ।

১০. ভাববাচক বিশেষণ : যেসব বিশেষণ বাক্যের অন্তর্গত অন্য বিশেষণকে বিশেষিত করে, সেসব বিশেষণকে ভাববাচক বিশেষণ বলে। যেমন—‘খুব ভালো খবর’ ও ‘গাড়িটা বেশ জোরে চলছে। এসব বাক্যে ‘খুব’ এবং ‘বেশ’ ভাববাচক বিশেষণ।

১১. বিধেয় বিশেষণ : বাক্যের বিধেয় অংশে যেসব বিশেষণ বসে, সেসব বিশেষণকে বিধেয় বিশেষণ বলে। যেমন—’লোকটা পাগল’ বা ‘এই পুকুরের পানি ঘোলা’। বাক্য দুটির ‘পাগল’ ও ‘ঘোলা’ বিধেয় বিশেষণ।

ক্রিয়া

বাক্যে উদ্দেশ্য বা কর্তা কী করে বা কর্তার কী ঘটে বা হয়, তা নির্দেশ করা হয় যে পদ দিয়ে, তাকে ক্রিয়া বলে। যেমন—মিনা খেলছে। সূর্য উঠেছে।

ক্রিয়ার প্রকারভেদ

ক. ভাব প্রকাশের দিক দিয়ে ক্রিয়া দুই প্রকার। যথা—

১. সমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া দিয়ে ভাব সম্পূর্ণ হয়, তাকে সমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন—ভালো করে পড়াশোনা করবে।

২. অসমাপিকা ক্রিয়া : যে ক্রিয়া ভাব সম্পূর্ণ করতে পারে না, তাকে অসমাপিকা ক্রিয়া বলে। যেমন— ভালো করে পড়াশোনা করলে ভালো ফল হবে ।

খ. বাক্যের মধ্যে কর্মের উপস্থিতির ভিত্তিতে ক্রিয়া তিন প্রকার। যথা-

১. অকর্মক ক্রিয়া : বাক্যে ক্রিয়ার কোনো কর্ম না থাকলে সেই ক্রিয়াকে অকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন— সে ঘুমায়। এই বাক্যে কোনো কৰ্ম নেই।

২. সকর্মক ক্রিয়া : বাক্যের মধ্যে ক্রিয়ার কর্ম থাকলে সেই ক্রিয়াকে সকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন – সে বই পড়ছে। এই বাক্যে ‘পড়ছে’ হলো সকর্মক ক্রিয়া। ‘বই’ হলো ‘পড়ছে’ ক্রিয়ার কর্ম।

৩. দ্বিকর্মক ক্রিয়া : বাক্যের মধ্যে ক্রিয়ার দুটি কর্ম থাকলে সেই ক্রিয়াকে দ্বিকর্মক ক্রিয়া বলে। যেমন—শিক্ষক ছাত্রকে বই দিলেন। এই বাক্যে ‘দিলেন’ একটি দ্বিকর্মক ক্রিয়া। ‘কী দিলেন’ প্রশ্নের উত্তর দেয় মুখ্য কর্ম (‘বই’), আর ‘কাকে দিলেন’ প্রশ্নের উত্তর দেয় গৌণ কর্ম (‘ছাত্রকে’)।

গ. গঠন বিবেচনায় ক্রিয়া পাঁচ রকম। যথা—

১. সরল ক্রিয়া: একটিমাত্র পদ দিয়ে যে ক্রিয়া গঠিত হয় এবং কর্তা এককভাবে ক্রিয়াটি সম্পন্ন করে, তাকে সরল ক্রিয়া বলে। যেমন— সে লিখছে। ছেলেরা মাঠে খেলছে। এখানে লিখছে ও খেলছে। এগুলো সরল ক্রিয়া।

২. প্রযোজক ক্রিয়া : কর্তা অন্যকে দিয়ে কাজ করালে তাকে প্রযোজক ক্রিয়া বলে। যেমন—তিনি আমাকে অঙ্ক করাচ্ছেন; রাখাল গরুকে ঘাস খাওয়ায়। এখানে ‘করাচ্ছেন’ ও ‘খাওয়ায়’ প্রযোজক ক্রিয়া।

৩. নাম ক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক শব্দের শেষে -আ বা আনো প্রত্যয় যুক্ত হয়ে যে ক্রিয়া গঠিত হয়, তাকে নামক্রিয়া বলে। যেমন—বিশেষ্য চমক শব্দের সঙ্গে – আনো যুক্ত হয়ে হয় চমকানো—আকাশে বিদ্যুৎ চমকায়; বিশেষণ কম শব্দের সঙ্গে আ যুক্ত হয়ে হয় কমা—বাজারে সবজির দাম কমছে না; ধ্বন্যাত্মক ছটফট শব্দের সঙ্গে -আনো যুক্ত হয়ে হয় ছটফটানো – জবাই করা মুরগি উঠানে ছটফটায়।

৪. সংযোগ ক্রিয়া: বিশেষ্য, বিশেষণ বা ধ্বন্যাত্মক শব্দের পরে করা, কাটা, হওয়া, দেওয়া, ধরা, পাওয়া, খাওয়া, মারা প্রভৃতি ক্রিয়া যুক্ত হয়ে সংযোগ ক্রিয়া গঠিত হয়। যেমন—গান করা, সাঁতার কাটা, রাজি হওয়া, কথা দেওয়া, মরচে ধরা, লজ্জা পাওয়া, আছাড় খাওয়া, উঁকি মারা ইত্যাদি।

৫. যৌগিক ক্রিয়া : অসমাপিকা ক্রিয়ার সঙ্গে সমাপিকা ক্রিয়া যুক্ত হয়ে যখন একটি ক্রিয়া গঠন করে, তখন তাকে যৌগিক ক্রিয়া বলে। যেমন—মরে যাওয়া, কমে আসা, এগিয়ে চলা, হেসে ওঠা, উঠে পড়া, পেয়ে বসা, সরে দাঁড়ানো, বেঁধে দেওয়া, বুঝে নেওয়া, বলে ফেলা, করে তোলা, চেপে রাখা ইত্যাদি।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button