আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
সামাজিক বিজ্ঞান

ধর্ম (Religion), ধর্মের উৎপত্তি ও বিকাশ ও সমাজ গঠনে ধর্মের ভূমিকা

ধর্ম (Religion) : ধর্ম একটি প্রাচীন প্রতিষ্ঠান। আদিম যুগ হতে আরমভ করে বর্তমান আধুনিক সভ্য সমাজেও ধর্মের অস্তিত্ব দেখা যায়। বিভিন্ন সমাজে ধর্মের বিভিন্নতা দেখা যায়। আবার বিভিন্ন যুগে, বিভিন্ন সমাজে ধর্মের বিভিন্ন ধরন দেখা যায়। যেমনকোনাে সমাজে ভূতপ্রেতকে কেন্দ্র করে ধর্ম গড়ে ওঠে, কোনাে সমাজে মানুষ গাছপালা, লতাপাতা, পশুপাখিকে পূজা করে, কোনাে সমাজে এক ঈশ্বর/সৃষ্টিকর্তাকে আরাধনা করে।

ধর্মের সংজ্ঞা : নৃবিজ্ঞানী টেইলর (Tylor)-এর মতে, “ধর্ম হল আত্মিক জীবে বিশ্বাস” (belief in spiritual beings)। ডুর্খেইম (Durkheim) বলেন যে, “ধর্ম হল পবিত্র জগৎ সম্পর্কে বিশ্বাস ও তৎসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আচারঅনুষ্ঠানাদি।” মনীষী ফেজার (Fazar) -এর মতে, “ধর্ম হল মানুষের চেয়ে উচ্চতর এমন একটি শক্তিতে বিশ্বাস যা মানবজীবন ও প্রকৃতির ধারাকে নিয়ন্ত্রণ করে। তার মতে, ধর্মের মূল উপাদান ২টি যথা- (ক) মানুষের চেয়ে উচ্চতর শক্তিতে বিশ্বাস এবং (খ) সে শক্তির আরাধনা।

ধর্মের উৎপত্তি ও বিকাশ

ধর্মের উৎপত্তি সম্পর্কে মতবাদগুলােকে ২ ভাগে ভাগ করা যায়, যথা-
(১) টেইলরের সর্বপ্রাণবাদ মতবাদ
(২) মেরেটের মহাপ্রাণবাদ মতবাদ।

১। টেইলরের মতবাদ :

টেইলর বিবর্তনবাদে বিশ্বাসী ছিলেন। তাঁর মতে, আদিম মানুষ প্রথমে আত্মা, প্রেতাত্মা ও নিজ নিজ মৃত পূর্বপুরুষের পূজা করত। পরে তাদের মধ্যে প্রকৃতিপূজার উন্মেষ ঘটে। ফলে তারা নদ-নদী, পাহাড়-পর্বত, চাঁদ-তারা প্রভৃতি প্রাকৃতিক বস্তুর পূজা শুরু করে। প্রকৃতিপূজা থেকে বিবর্তন প্রক্রিয়ায় দেবদেবীর মূর্তি পূজার উদ্ভব হয়। এ পর্যায়ে আদিম মানুষ ছিল বহু-ঈশ্বরবাদী। কালক্রমে তাদের মধ্যে পরমেশ্বরের ধারণার সৃষ্টি হয় এবং সমাজে একেশ্বরবাদের উদ্ভব হয়। টেইলরের মতে, ভূতপ্রেত ও মৃত পূর্বপুরুষ পূজার উদ্ভব ঘটে আত্মার ধারণা থেকে। বতুত টেইলরের মতবাদের মূল ভিত্তি হল আত্মী।

আরো পড়ুন : পরিবারের সংজ্ঞা, পরিবারের প্রকারভেদ ও পরিবারের কার্যাবলি

আদিম মানুষ মনে করত দেহ ও আত্মা নিয়ে মানবজীবন। দেহ জড়পদার্থ কিন্তু আত্মা অমর ও সচল। এরা অতিপ্রাকৃত বলেই রহস্যময়, বিস্ময়কর। এরা বতু, সময় ও স্থানকে অক্রিম করে চলতে পারে। এখন প্রশ্ন হল আদিম মানুষ আত্মার ধারণাকে কিভাবে পেল? আদিম মানুষ আত্মার ধারণা পেয়েছে স্বপ্নের মধ্যদিয়ে। ঘুমের মধ্যে মানুষ স্বপ্ন দেখে। স্বপ্নে সে বহু দূরে বেড়াতে যায়, পাহাড় পর্বতে চড়ে, শিকার করে। কিন্তু ঘুম ভাঙার পর সে দেখে তার দেহ সেখানেই আছে। তারা মনে করত যে, মানুষ ঘুমিয়ে পড়লে আত্মা ভ্রমণে বের হয়। দেহ থেকে আত্মার সাময়িক অনুপস্থিতি হল ঘুম। আর স্থায়ী বিচ্ছেদ হল মৃত্যু। মৃত্যুর পর দেহ পচে যায়, নষ্ট হয়, কিন্তু আত্মা বিনষ্ট হয় না।

আত্মা আশেপাশে বসবাস করে এবং মাঝেমধ্যে জীবন্ত লােকের ওপর ভর করে তাতে তার মঙ্গল-অমঙ্গল ঘটে। তাই প্রেতাত্মাকে সর্বদা খুশি করার জন্য আদিম মানুষ মৃত পূর্বপুরুষের আত্মাকে পূজা দিত। পূর্বপুরুষ-পূজার স্তর পার হয়ে আদিম মানুষ প্রকৃতিপূজা অর্থাৎ গাছপালা, নদীনালা, পাহাড়-পর্বত প্রভৃতিকে আরাধনা করতে শুরু করে। এসময় সমাজে বহু ঈশ্বরবাদের অস্তিত্ব দেখা দেয়। এরপর ক্রমে ক্রমে বিবর্তনের মাধ্যমে একেশ্বরবাদের উৎপত্তি হয়।

২। মেরেটের মহাপ্রাণবাদ তত্ত্ব :

আদিম মানুষ এত বুদ্ধিমান ছিল না যে তারা আত্মার ধারণা লাভ করতে পারে। তাই মেরেট মনে করেন যে, আদিম মানুষ আত্মা-প্রেতাত্মার ধারণা লাভের আগেই বিশেষ এক নৈর্ব্যক্তিক শক্তির ধারণা অর্জন করেছিল। এ তত্ত্বের মূলকথা হল সর্বপ্রাণবাদে পৌছার পূর্বে আদিম মানুষের মনে ‘মনা বা নৈর্ব্যক্তিক প্রাকৃত শক্তির ধারণা জন্মে। এ তত্ত্বের নাম মহাপ্রাণবাদ। এখন প্রশ্ন হল ‘মনা শক্তি কী ? ‘মনা’ বলতে বােঝায় এক অস্বাভাবিক অতিপ্রাকৃতিক শক্তি।

‘মনা’ বলতে কোনাে ভূত, প্রেত, আত্মা, প্রেতাত্মাকে বােঝায় না, এটা একটি নৈর্ব্যক্তিক অতিপ্রাকৃতিক শক্তি যা কোনাে ব্যক্তি বা বস্তুতে অস্বাভাবিক গুণ বােঝাতে ব্যবহৃত হয়। অর্থাৎ ‘মনা’ শক্তি যার মধ্যে বিরাজ করে সে অসাধারণ ও অসত্বকে সত্ব করে তােলে। আদিম মানুষ এই মনা-শক্তির উপস্থিতি অনুধাবন করে এবং সেগুলােকে ভয়, ভক্তি ও শ্রদ্ধা করতে থাকে। আর এভাবেই আদিম সমাজে ধর্মের উৎপত্তি লাভ করে।

সমাজ গঠনে ধর্মের ভূমিকা

ধর্মীয় বিশ্বাস ব্যক্তিগত ব্যাপার হলেও সমাজজীবনে ধর্মের একটা বিশিষ্ট ভূমিকা রয়েছে। এজন্য বলা হয় ধর্ম যতখানি ব্যক্তিগত ব্যাপার তার তুলনায় অনেক বেশি সামাজিক। সমাজজীবনে ধর্ম নানাভাবে নিজেকে প্রকাশ করে। বিভিন্ন পারিবারিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান-প্রতিষ্ঠানের ওপর ধর্মের প্রভাব পরিলক্ষিত হয়।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলাে সামাজিক মেলামেশার কেন্দ্র। সামাজিক মেলামেশার ফলে ধনী, দরিদ্র নির্বিশেষে সকল মানুষের মধ্যে পারস্পরিক সহানুভূতি ও প্রীতির সঞ্চার হয়। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলাে মানুষের মধ্যে ভ্রাতৃত্ববােধ জাগ্রত করে, মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে এবং জনকল্যাণমূলক কর্ম সম্পাদন করার জন্য উৎসাহ প্রদান করে। এছাড়া সামাজিক নিয়ন্ত্রণের ব্যাপারে ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

সামাজিক ঐক্য বজায় রাখার জন্য ধর্ম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ধর্ম ব্যক্তির মনে সামাজিক মূল্যবােধ সঞ্চারিত করে, ধর্ম ব্যক্তিকে সামাজিক নিয়ম মেনে চলতে, সামাজিক দায়িত্ব পালন করতে শিক্ষা দেয়। ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান সামাজিক জীবনের ওপর বিশেষ প্রভাব বিস্তার করে। সুতরাং সমাজ গঠনে তথা সমাজজীবনে সংহতি রক্ষা করতে ধর্ম একটি নিয়ামক শক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button