আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

লিঙ্কে ক্লিক করুন
সাধারন বিজ্ঞান

ড্রাগ আসক্তি | মাদকাসক্তির লক্ষণ ও ড্রাগ আসক্তি নিয়ন্ত্রণ

ড্রাগ আসক্তি

ড্রাগ আসক্তি: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ড্রাগের একটি সংজ্ঞা দিয়েছে। এই সংজ্ঞায় বলা হয়েছে, ড্রাগ এমন কিছু পদার্থ, যা জীবিত প্রাণী গ্রহণ করলে তার এক বা একাধিক স্বাভাবিক আচরণের পরিবর্তন ঘটে। ড্রাগকে সাধারণ ভাষায় আমরা মাদক বলি। ক্রমাগত মাদকদ্রব্য সেবনের কারণে যখন এমন অবস্থা সৃষ্টি হয় যে মাদকদ্রব্যের সাথে মানুষের এক ধরনের দৈহিক ও মানসিক সম্পর্ক গড়ে উঠে এবং নিয়মিতভাবে মাদক গ্রহণ না করলে শারীরিক এবং মানসিক সমস্যায় পড়ে, তখন তাকে বলে মাদকাসক্ত বা ড্রাগ নির্ভরতা।

উল্লেখযােগ্য ড্রাগ যেগুলাের ওপর মানুষের আসক্তি সৃষ্টি হয়, সেগুলাে হচ্ছে বিড়ি, সিগারেট, আফিম ও আফিমজাত পদার্থ, হেরােইন, মদ, পেথিড্রিন, বারবিচুরেট, কোকেন, ভাং, চরস, ম্যারিজুয়ানা, এলএসডি ইত্যাদি। এগুলাের মধ্যে হেরােইন একটি মারাত্মক ড্রাগ কাগতে পারে।

ড্রাগের ওপর কোনাে ব্যক্তির আসক্তি নানাভাবে জাগতে পারে এ যেমন: কৌতূহল, সঙ্গদোষ, হতাশা দূর করার প্রচেষ্টা, মানসিক যন্ত্রণা ভুলে থাকার পদ্ধতি, নিজেকে বেশি কার্যক্ষম করা, পারিবারিক অশান্তি থেকে মুক্তির আকাঙ্ক্ষা কিংবা পারিবারিক অভ্যাসগত। বাবা বা মা কোনাে মাদকে আসক্ত থাকলে তার থেকে সন্তানে ওই মাদকে আসক্ত হওয়ার সবচেয়ে বেশি আশঙ্কা থাকে।

মাদকাসক্তির লক্ষণ

যে ব্যক্তি মাদকদ্রব্যে আসক্ত, তার মধ্যে কতগুলাে লক্ষণ প্রকাশ পায়। অনেকগুলাে লক্ষণ সাধারণত স্বাভাবিক মানুষের মধ্যে দেখা যায় না। উল্লেখযােগ্য লক্ষণগুলাে হলাে এরকম:

  • খাওয়ার প্রতি আকর্ষণ কমে যাওয়া
  • সবসময় অগােছালােভাবে থাকা
  • দৃষ্টিতে অস্বচ্ছতা এবং চোখ লাল হওয়া
  • কোনাে কিছুতে আগ্রহ না থাকা এবং ঘুম না হওয়া
  • কর্মবিমুখতা ও হতাশা
  • শরীরে অত্যধিক ঘাম নিঃসরণ
  • সবসময় নিজেকে সবার থেকে দূরে রাখা
  • আলস্য ও উদ্বিগ্ন ভাব।
  • মনঃসংযােগ না থাকা, টাকা-পয়সা চুরি করা এমনকি মাদকের টাকার জন্য বাড়ির জিনিসপত্র সরিয়ে গােপনে বিক্রি করা ইত্যাদি।

ব্যক্তিগত ইচ্ছা বা অনিচ্ছা ছাড়াও কিছু সামাজিক তথা পরিবেশের কারণেও মাদকদ্রব্যের প্রতি মানুষের আকর্ষণ জন্মাতে পারে, যেখান থেকে সে ধীরে ধীরে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। মাদকাসক্তির কতগুলাে কারণ ছকে উল্লেখ করা হলাে:

পরিবেশগত কারণ পরিবারের কারণ
১. মাদকদ্রব্যের সহজলভ্যতা
২. বেকারত্ব
৩. অসামাজিক পরিবেশ
৪. অল্প বয়সে স্কুল থেকে বিদায়
৫. সিনেমা বা কোনাে টিভি সিরিয়াল দেখা
৬. আশপাশে ড্রাগের রমরমা ব্যবসা
৭. পেশাগত কারণ
৮. অসামাজিক কাজ ও অপরাধ বেশি হয়, সে সব স্থানে বাস করা
৯. যেখানে ড্রাগ নেওয়ার সুযােগ বা দল থাকে, তার আশেপাশে বসবাস করা।
১. বাবা-মায়ের নিয়ন্ত্রণের অভাব
২. হতাশা
৩. একাকিত্ব ও নিঃসঙ্গতা
৪. সন্তানের বেপরােয়া ভাবকে প্রশ্রয় দেওয়া
৫. পরিবার থেকে বিচ্ছিন্নতা
৬. সন্তানের প্রতি যত্নহীনতা
৭. উগ্র জীবনযাত্রা বা মানসিকতা
৮. খারাপ সাহচর্য

ড্রাগ আসক্তি নিয়ন্ত্রণ

কোনাে ব্যক্তি ড্রাগের উপর আসক্ত হলে তা বন্ধ করা বেশ কঠিন কাজ। কারণ ড্রাগ আসক্ত মানুষ নিজের শরীরে মাদকের কুপ্রভাব বুঝতে পেরেও সেটা ছাড়তে পারে না। সঠিক চিকিৎসাব্যবস্থায় মাদকদ্রব্যে আসক্তি কমান না যায়, তবে সে ক্ষেত্রে মাদকাসক্ত ব্যক্তি যদি সহযােগিতা না করে তাহলে তেমন ব্যবস্থা নেওয়া যায় না।

মাদক নিরাময় হাসপাতাল অথবা কেন্দ্রে মাদকাসক্ত মানুষকে ভর্তি করতে হবে এবং যথেষ্ট সহানুভূতির সাথে তার চিকিৎসা করতে হবে। প্রথমে আসক্ত ব্যক্তিকে তার ড্রাগ নেওয়া বন্ধুদের কাছ থেকে আলাদা করতে হয়। লক্ষ রাখতে হয় কোনােভাবেই যেন তার কাছে মাদকদ্রব্য পৌঁছাতে না পারে।

এরপর তার মানসিক চিকিৎসা করা প্রয়ােজন হয়, যেন সে ড্রাগের কথা মনে আনতে না পারে, তার জন্য তাকে বিশেষ কোনাে কাজে যুক্ত করতে হয়। সে যে মাদকদ্রব্যে আসক্ত হয়, সেটি একবারে হঠাৎ করে বন্ধ না করে ধীরে ধীরে মাত্রা কমিয়ে কমিয়ে শেষে একেবারে বন্ধ করতে হয়।

হঠাৎ করে বন্ধ করা শারীরিকভাবে বিপজ্জনক হতে পারে। ঘুম ঠিকমতাে না হলে বা বেশি অস্থিরতা বা বিদ্রোহীভাব দেখা দিলে ডাক্তাররা স্নায়ু শিথিলকারক ঔষধ এবং ঘুমের ঔষধ দিয়ে চিকিৎসা করে থাকেন। মাদক সেবন শুধু যে ড্রাগ আসক্ত মানুষটির ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য সমস্যা তা নয়, মাদক সেবন যেকোনাে পরিবারে বড় রকমের সমস্যা ও বিশৃংখলা বয়ে আনে।

এই সমস্যা সামগ্রিকভাবে সমাজ ও দেশের উন্নতির পরিপন্থী। মাদকদ্রব্যের ব্যবসা করে সমাজের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী ধনী হয়, কিন্তু অন্যদিকে অনেক মানুষের এবং সমাজজীবনে ভয়াবহ দুর্যোগের কালাে ছায়া নেমে আসে। সম্ভাবনাময় ছাত্র-ছাত্রীদের পড়ালেখা নষ্ট হওয়া থেকে শুরু করে সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পেতে শুরু করে।

শুধু তা-ই নয় মাদকাসক্তির কারণে অকালমৃত্যু পর্যন্ত ঘটতে পারে। এ জন্য মাদকদ্রব্য সেবন ও এর ব্যবসা-বাণিজ্য কঠিনভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। এর জন্য ব্যক্তিগত এবং সমাজসেবামূলক সংস্থাগুলাের পাশাপাশি দেশের আইনশৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থা এবং সরকারি প্রচেষ্টা মাদক নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে ফলপ্রসূ হতে পারে।

সামাজিক প্রচেষ্টা

  • মাদকাসক্ত ব্যক্তিদের খুঁজে বের করা এবং তাদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা।
  • মাদকাসক্ত ব্যক্তিকে পরামর্শ দেওয়া।
  • পুনর্বাসন করে সমাজের স্বাভাবিক স্রোতে এনে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা।

সরকারি প্রচেষ্টা

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button