জীবনযাপন

ডেঙ্গু জ্বরের উপসর্গ ও চিকিৎসা- ড. মেহরাব হোসেন

ডেঙ্গু জ্বর। এটি ভাইরাসজনিত এক মারাত্মক রােগ। ডেঙ্গুর তেমন কার্যকরী প্রতিষেধক নেই। এ থেকে বাঁচার উপায় হচ্ছে একে প্রতিরােধ করা।

ডেঙ্গু কী?

এডিস মশাবাহিত ৪ ধরনের ভাইরাসের যে কোনাে একটির সংক্রমণে যে অসুস্থতা হয় সেটাই ডেঙ্গু। এর সাধারণত দুটো ধরন রয়েছে। এক. ক্লিনিক্যাল ডেঙ্গু জ্বর, দুই. হেমােরেজিক ডেঙ্গুজ্বর বা ডেঙ্গু হেমােরেজিক ফিভার। শেষেরটাই সবচেয়ে ভয়াবহ।

ডেঙ্গু ভাইরাস

ভাইরাসজনিত রােগের সাধারণত কোনাে প্রতিষেধক নেই। কোনাে কোনাে ক্ষেত্রে টিকার মাধ্যমে প্রতিরােধ করা যায়। ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত জ্বর। অন্য সব ভাইরাস রােগের মতাে এরও কোনাে প্রতিষেধক নেই, টিকাও নেই। লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা দিয়ে এর মােকাবিলা করা হয়। অন্য ভাইরাস ফিভারের মতাে এটিও আপনা-আপনিই সেরে যায় সাত দিনের মধ্যে। তবে মূল ভয়টা হচ্ছে এর পরবর্তী জটিলতা নিয়ে। ডেঙ্গুজ্বর যদি সময়মতাে যথাযথভাবে মােকাবিলা করা না যায় তবে রােগীর দ্রুত অবনতি ঘটতে থাকে, দেখা দেয় ডেঙ্গু হেমােরেজিক ফিভার বা রক্তক্ষরণকারী ডেঙ্গুজ্বর।

ডেঙ্গুর লক্ষণ

হঠাৎ করে জ্বর। কপালে, গায়ে ব্যথা। চোখে ব্যথা, চোখ নাড়ালে বা এদিকে-ওদিকে তাকালে ব্যথা। দাঁতের মাড়ি দিয়ে রক্ত পড়া। পায়খানার সঙ্গে রক্ত অথবা কালাে কিংবা লালচেকালাে রঙের পায়খানা এমনকি প্রস্রাবের সঙ্গেও অনেক সময় রক্ত যেতে পারে। ডেঙ্গু হেমােরেজিক ফিভার খুবই মারাত্মক। মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণ হতে পারে।

  • জ্বর ১০৬ ডিগ্রি পর্যন্ত উঠতে পারে।
  • গলা ব্যথা, চরম অবসন্নতা ও বিষাদগ্রস্ততা দেখা দিতে পারে।
  • রােগীর হাড়ের ব্যথা এত তীব্র হতে পারে যে, রােগীর মনে হয় তার হাড় ভেঙে গেছে। এ জন্য এ জ্বরকে ‘ব্রেক বােন ফিভার’ বলা হয়ে থাকে।
  • রােগীর চোখ লাল হতে পারে এবং ত্বকও লাল হতে পারে।
  • ডেঙ্গু হেমােরেজিক জ্বরের ক্ষেত্রে ত্বকের নিচে রক্ত জমাট বাধে এবং পাকস্থলী ও অন্ত্রে রক্তক্ষরণের ঘটনা ঘটে। ডেঙ্গু হেমােরেজিক জ্বর ডেঙ্গুর মারাত্মক ধরন। এক্ষেত্রে অনেক রােগীর মৃত্যু ঘটে।

ডেঙ্গু হেমােরেজিক (রক্তক্ষরণ) জ্বর

রক্ত পরীক্ষার যদি অণুচক্রিকা বা প্লাটিলেট সংখ্যা কমে যায় তবে বুঝতে হবে এটি হেমােরেজিক বা রক্তক্ষয়ী জ্বর। রােগীর শকে চলে যাওয়া বা অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, অস্থিরতা, অবসন্নতা, পেটে তীব্র ব্যথা, হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যাওয়া, ত্বক কুঁচকে যাওয়া, রক্তচাপ কমে যাওয়া কিংবা বেশি বেশি প্রস্রাব হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখামাত্র রােগীকে হাসপাতালে স্থানান্তর করতে হবে।

পুনরায় রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে। প্রচুর তরল খাবার খাওয়াতে হবে। বিশুদ্ধ পানি প্রচুর পরিমাণে পান করাতে হবে। সেই সঙ্গে প্রস্রাবের পরিমাণ মনিটর করতে হবে। সময়মতাে সঠিক ব্যস্থাপনায় ডেঙ্গু হেমােরেজিক জ্বরও সারিয়ে তােলা যায়। বেশি রক্তক্ষরণ হলে ফ্রেশফ্রোজেন প্লাজমা কিংবা কনসেন্ট্রেটেড প্লাটিলেট অথবা প্রয়ােজনে পূর্ণ রক্ত পরিসঞ্চালনের মাধ্যমে চিকিৎসার প্রয়ােজন হতে পারে।

চিকিৎসা

সত্যিকার অর্থে ডেঙ্গুর সুনির্দিষ্ট কোনাে চিকিৎসা নেই। উপসর্গ অনুযায়ী রােগের চিকিৎসা করা হয়। বেশির ভাগ ডেঙ্গ জ্বরই সাত দিনের মধ্যে সেরে যায়, অধিকাংশই মারাত্মক নয়। প্রয়ােজন প্রচুর পরিমাণে পানি, বিশ্রাম ও প্রচুর তরল খাবার। সঙ্গে জ্বর কমানাের জন্য এসিটামিনােফেন (প্যারাসিটামল) গ্রুপের ওষুধ। সাধারণ ডেঙ্গুর চিকিৎসা এই। তবে ব্যথানাশক ওষুধ হিসেবে এসপিরিন বা ক্লোফেনাক জাতীয় ওষুধ দেয়া যাবে না।

এতে রক্তক্ষরণ বেড়ে যেতে পারে। হেমােরেজিক বা রক্তক্ষয়ী ডেঙ্গু (যা খুবই কম হয়ে থাকে) বেশি মারাত্মক। এতে মৃত্যুও হতে পারে। জ্বর, সঙ্গে রক্তক্ষরণের লক্ষণ দেখামাত্র হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে বিশেষ চিকিৎসার জন্য। জ্বর কমানাের জন্য বারবার গা মােছাতে হবে ভেজা কাপড় দিয়ে। এক্ষেত্রে রােগীকে শিরাপথে রক্তের প্লাটিলেট ট্রান্সফিউশন করতে হবে। ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত রােগীকে মশারির মধ্যে রাখা জরুরি।

সতর্কতা ও প্রতিরােধ

ডেঙ্গু মশা, মানে এডিস মশা সকাল-সন্ধ্যা কামড়ায়। অর্থাৎ ভােরে সূর্যোদয়ের আধাঘণ্টার মধ্যে এবং সন্ধ্যায় সূর্যাস্তের আধাঘণ্টা আগে এডিস মশা কামড়াতে পছন্দ করে। সুতরাং এ দুই সময়ে মশার কামড় থেকে সাবধান থাকতে হবে। সেই সাথে এডিস মশা নির্মূল করে ডেঙ্গুকে প্রতিহত করা যায়। যেসব স্থানে এডিস মশা বাস করে সেই সব স্থানের এডিস মশার আবাস ধ্বংস করে দিতে হবে। তাই দিনের বেলা ঘরে যাতে মশা ঢুকতে না পারে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে।

জমে থাকা পানিতে এরা বংশ বিস্তার করে। ফুলের টব, কৃত্রিম পাত্র, পরিত্যক্ত টায়ার, গাছের কোটর, বাঁশের গােড়ার কোটর, ডাবের খােসা, বাসার ছাদ প্রভৃতি স্থানে জমে থাকা পানিতে এদের বংশ বিস্তার ঘটে বলে সেখানটায় মশা নিধক ওষুধ ছিটিয়ে দিতে হবে। আর এভাবেই সম্ভব ডেঙ্গ প্রতিরােধ করা। বাড়ির আশপাশের নর্দমা ও আবদ্ধ জলাশয়ে ওষুধ ছিটিয়ে মশা মারতে হবে। ঝােপঝাড় পরিষ্কার করতে হবে। সর্বোপরি জনসচেতনতা সৃষ্টি এবং মশা ধ্বংসের মাধ্যমে ডেঙ্গু প্রতিরােধ করা সম্ভব।

ডেঙ্গু সম্পর্কে কিছু তথ্য
  • ইংরেজি অভিধান অনুযায়ী ডেঙ্গু শব্দটির প্রকৃত উচ্চারণ হবে ডেঙ্গি।
  • ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রােগ।
  • ডেঙ্গু মশাবাহিত একটি মারাত্মক রােগ।
  • ডেঙ্গু জ্বর দু প্রকার- ক্লিনিক্যাল ও হেমােরেজিক।
  • ডেঙ্গু রােগের আক্রমণে মানব দেহের রক্তের প্লাটিলেটের সংখ্যা দ্রুত হ্রাস পায়।
  • মানব দেহের রক্তে স্বাভাবিক প্লাটিলেটের পরিমাণ প্রতি কিউবিক মিলি মিটারে দেড় লাখ থেকে সাড়ে তিন লাখ।

Bcs Preparation

BCS Preparation provides you with course materials and study guides for JSC, SSC, HSC, NTRCA, BCS, Primary Job, Bank and many other educational exams.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button