আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

Click Here
এসএসসিবাংলা রচনা সম্ভার

ঝড়ের রাত

ঝড়ের রাত

আমি গা-শিউরে ওঠা এক ঝড়ের রাতের কথা বলব। সে এক বিভীষিকাময় ঝড়ের রাত। সে রাতে প্রায় মৃত্যু এসে উপস্থিত হয়েছিল আমার শিয়রে। আমি তখন ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্র। বৈশাখ মাস সবে শুরু হয়েছে। মা-বাবাসহ বেড়াতে গেছি গ্রামে, নানার বাড়িতে। প্রচণ্ড গরম পড়ছে। আমার নানি বলেন-‘কাঁঠাল পাকানাে গরম।

চারদিকে রুক্ষ-শুষ্কতা। মাটি ফেটে চৌচির। একদিন বিকেলে হঠাৎ উত্তর-পশ্চিম আকাশে কালাে হয়ে মেঘ জমল। ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকাতে লাগল। মাঝে মাঝে দমকা হাওয়ার ধাক্কা। সন্ধ্যা হতে না-হতেই সমস্ত আকাশ কালাে মেঘে ছেয়ে গেল। অজানা আশঙ্কায় সবাই তখন উদ্বিগ্ন। বাতাসের ঝাপটা উত্তরােত্তর বেড়েই চলল। মামা আবহাওয়ার খবর শােনার জন্য রেডিও অন করলেন।

আরো পড়ুন : বাংলাদেশের ঋতুবৈচিত্র্য

রেডিওর আওয়াজ স্পষ্ট বােঝা যাচ্ছিল না। মামা তবু রেডিওর সাথে কান লাগিয়ে শব্দ শােনার চেষ্টা করছেন। আমি মামার কাছেই বসেছিলাম। হঠাৎ প্রচণ্ড একটা ঝাপটা এল। আর বিকট শব্দে বাড়ির দরজার আমগাছের বড় ডালটি ভেঙে পড়ল। পাশে কোথাও যেন তীব্র শব্দে বাজ পড়ল। ভয়ে আর আতঙ্কে আমার বুক দুরুদুরু।। নানিবাড়িতে বিদ্যুৎ নেই। হারিকেনের আলােয় সবাই তাড়াতাড়ি খেয়ে নিলাম। সবার বিছানা তৈরি হল। কিন্তু কেউ আর ঘুমুতে পারল না। রাত প্রায় দশটা হবে। প্রচণ্ড ঝড় আর শিলাবৃষ্টি শুরু হলাে।

বাতাসের ঝাপটায় এক-একবার মনে হতে লাগল এই বুঝি পুরাে ঘরটি উড়িয়ে নিয়ে যাবে। পশ্চিম কোণের ঘরের চাল হঠাৎ খুঁটি থেকে আলগা হয়ে গেল। ঝড়াে বাতাসে সেটা দাপাদাপি করতে লাগল। নানা কোথেকে একটা মােটা রশি নিয়ে খুঁটিটা বাঁধতে লেগে গেলেন। মামা ও বাবা দৌড়ে গেলেন সেখানে। অন্ধকারে ভালাে করে কিছু দেখা যাচ্ছে না। ঘনঘন বিদ্যুৎ চমকানাের আলােয় দেখলাম মামা আর বাবা প্রাণপণ চেষ্টা করছেন ঘরের চালের সঙ্গে খুঁটিটাকে বাঁধার জন্য, কিন্তু পারছেন না।

আরো পড়ুন : বর্ষায় বাংলাদেশ

খাটের ওপর আমার মা, ছােটবােন ফারহানা, নানি সবাই আল্লাহ্, আল্লাহ্ করতে লাগলেন। এমন সময় প্রচণ্ড শব্দে আমাদের মাথার ওপর থেকে ঘরের টিন উড়ে গেল। আমার নানি চিৎকার করে কেঁদে উঠলেন। নানির কান্নার শব্দে আমার বােন ফারহানা এবং আমার মা হাউমাউ করে কাঁদতে লাগলেন। গােয়ালঘরে গরুর হাম্বা ডাক, মানুষের আর্ত চিৎকার, বাতাসের ঝাপটা—সব মিলিয়ে মনে হলাে যেন কেয়ামত শুরু হয়ে গেছে।

নানা জোরে জোরে শব্দ করে আজান দিতে লাগলেন। মামা চিৎকার করে বললেন, সবাই খাটের তলে আশ্রয় নাও। না হয় ঝড়ের তাণ্ডবে কোনাে কিছুতে শরীরে চোট লাগতে পারে। আমরা সবাই খাটের তলে আশ্রয় নিলাম। এভাবে কতক্ষণ ঝড় চলেছে বুঝতে পারিনি। সকালে যখন আমার হুঁশ হলাে তখনও আমি খাটের নিচে। চারদিকে কাদাজল। আমি যেন কাঁদতেও ভুলে গেছি। আম্মা কোথায়, নানি-বা কোথায় গেল, কাউকে দেখতে পাচ্ছি না। খাটের নিচ থেকে আমি উঠে দেখলাম, ঘর কোথায়? ঘর নেই।

আরো পড়ুন : বর্ষণমুখর একটি দিন

একটা নারকেল গাছ পড়ে আছে ঘরের ওপর। টিনের একটা চালা উড়ে গেছে কোথাও। বরই গাছে ঝুলছে একটা টিন। একটা ঘুঘুপাখি মরে পড়ে আছে উঠোনে। দৌড়ে গেলাম বাড়ির দরজার দিকে। দেখি কলাগাছ, সুপারিগাছ, কড়ই গাছের ডাল ভেঙে পড়ে আছে পথের ওপর। বাবা-মা, নানা-নানি, মামা সবাই সেগুলাে পরিষ্কার করছে। কালবৈশাখী ঝড়ের কথা এর আগে শুনেছিলাম। কিন্তু আমার নিজের কোনাে অভিজ্ঞতা ছিল না। কিন্তু এবার সেই অভিজ্ঞতা হলাে।

ভাবলাম, এমন ভয়াবহ অভিজ্ঞতা যেন কারও না হয়। এর মধ্যে চার বছর চলে গেছে। কিন্তু আমার স্মৃতিতে আজও গেঁথে আছে সেই রাতের ভয়াবহতা। সে রাতের কথা মনে হলে এখনও গা শিউরে ওঠে। ঝড়ের প্রলয় তাণ্ডব, ভয়ংকর রূপ সে রাতে সবকিছু লণ্ডভণ্ড করে দিয়েছিল। সেদিন ঝড়ের রাতে আমি বুঝেছি প্রকৃতির কোলে মানুষ কত অসহায়, কত নিঃস্ব।

গুরুত্বপূর্ণ কিছু ভাবসম্প্রসারণ :

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.
Back to top button