আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

লিঙ্কে ক্লিক করুন
সামাজিক বিজ্ঞান

ছয়-দফা আন্দোলন, ছয়-দফার তাৎপর্য ও আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা

ছয়-দফা আন্দোলন

পাকিস্তান সরকার কর্তৃক রাজনৈতিক প্রশাসনিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক বৈষম্য সৃষ্টির পারিপ্রেক্ষিতেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পূর্ব পাকিস্তানের পূর্ণ আঞ্চলিক স্বায়ত্তশাসন ও অর্থনৈতিক মুক্তির দাবি-সংবলিত এক কর্মসূচির কথা ব্যক্ত করেন। এ কর্মসূচি ঐতিহাসিক ছয়-দফা নামে পরিচিত। ১৯৬৬ সালের ৫-৬ই ফেব্রুয়ারি লাহােরে বিরােধী দলগুলাের এক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এ সম্মেলনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছয়-দফা কর্মসূচি পেশ করেন। ছয়দফা কর্মসূচি নিম্নে দেওয়া হল :

  • ১৯৪০ সালের লাহাের প্রস্তাবের ভিত্তিতে সংবিধান রচনা করে পাকিস্তানকে একটি ফেডারেশন রূপে গড়তে হবে। সকল নির্বাচন সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের সরাসরি ভােটে অনুষ্ঠিত হবে। আইনসভাসমূহের সার্বভৌমত্ব থাকবে।
  • দেশরক্ষা ও পররাষ্ট্র এ দুটো বিষয় থাকবে কেন্দ্রীয় সরকারের হাতে। বাকি বিষয়গুলােতে অঙ্গরাজ্যের পূর্ণ ক্ষমতা থাকবে।
  • পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের জন্য দুটো আলাদা অথচ সহজে বিনিময়যােগ্য মুদ্রার প্রচলন করতে হবে। দুটি অঞ্চলের জন্য দুইটি স্বতন্ত্র ‘স্টেট ব্যাংক’ থাকবে।
  • সকল প্রকার ট্যাক্স, খাজনা, কর ধার্য ও আদায়ের ক্ষমতা থাকবে আঞ্চলিক সরকারের হাতে। আদায়কৃত রাজস্বের একটি নির্দিষ্ট অংশ কেন্দ্রীয় সরকারকে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে।
  • পূর্ব পাকিস্তানের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পূর্ব পাকিস্তানের এখতিয়ারে এবং পশ্চিম পাকিস্তানের অর্জিত বৈদেশিক মুদ্রা পশ্চিম পাকিস্তানের এখতিয়ারে থাকবে। এর নির্ধারিত অংশ কেন্দ্রকে দেবে। তারা বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্য সম্পর্কে আলাপ আলােচনা ও চুক্তি করতে পারবে।
  • পূর্ব পাকিস্তানে মিলিশিয়া বা নিজস্ব গণবাহিনী ও আধা-সামরিক বাহিনী গঠন করা হবে।

ছয়-দফার তাৎপর্য

ছয়-দফা ছিল বাঙালিদের মুক্তির সনদ। বস্তুতপক্ষে, ছয়-দফা পরিণত হয়েছিল জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতীকে এবং এর প্রতি জনসমর্থন ছিল স্বতঃস্ফূর্ত। পূর্ব পাকিস্তানের জনগণের মধ্যে বাঙালি জাতীয়তাবাদের ধারণার বিকাশ ঘটাতে ছয়-দফার গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। ছয়-দফার মধ্যে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বীজ নিহিত ছিল। ব্রিটিশ গণতন্ত্রের ইতিহাসে যেমন ম্যাগনা কার্টা অধিকার বিল, ঠিক তেমনি বাঙালিদের স্বাধীনতা আন্দোলনের ভিত্তি হল ছয়-দফা কর্মসূচি। তাই এর গুরুত্ব ছিল অনস্বীকার্য।

আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা

ছয়-দফা কর্মসূচি বাঙালিদের মধ্যে দ্রুত জনপ্রিয়তা লাভ করে এবং এর পক্ষে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া যায়। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগােষ্ঠী ছয়-দফাকে পাকিস্তানের অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ মনে করে। তারা একে রাষ্ট্রবিরােধী ও বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনরূপে অভিহিত করে। সরকার ভীতসন্ত্রত ও ক্ষিপ্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব, অন্যান্য নেতা ও কর্মী এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করে। ছয়-দফা কর্মসুচিকে অঙ্কুরে বিনষ্ট করার উদ্দেশ্যে ১৯৬৮ সালের জানুয়ারি মাসে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে প্রধান আসামি করে ৩৪ জনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার অভিযােগ এনে ‘আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা’ নামে একটি মামলা দায়ের করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযােগ ছিল যে, তারা ভারতের সহায়তায় সশস্ত্র বিপ্লবের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানকে পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন করার ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিলেন।

এগার দফা

আগরতলা মামলাকে কেন্দ্র করে পাকিস্তানি শাসকচক্রের বিরুদ্ধে পূর্ব পাকিস্তানের ছাত্রসমাজ দুর্বার আন্দোলন গড়ে তলতে বদ্ধপরিকর হয়। এ আন্দোলনকে ব্যাপক, সর্বাত্মক এবং অপ্রতিরােধ্য সংগ্রামে রপ দেবার জন্য ১৯৬৯ সালের ৬ জানুয়ারি সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এগার দফা কর্মসূচি ঘােষণা করে। আওয়ামী লীগের ছয়-দফা কর্মসূচি এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত ছিল। এগার দফার প্রধান দফাগুলাে ছিল শিক্ষা-সমস্যার সমাধান করে শিক্ষার সুযােগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা, প্রাপ্ত বয়স্কদের ভােটে নির্বাচনের মাধ্যমে পার্লামেন্টারি গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করা, স্বায়ত্তশাসনের দাবি, ব্যাংক, বীমা, পাটব্যবসাসহ সকল বৃহদায়তন শিল্পের জাতীয়করণ, সেন্টো, সিয়াটো চুক্তি প্রত্যাহারসহ স্বাধীন পররাষ্ট্রনীতি প্রণয়নের দাবিও এর অন্তর্ভুক্ত ছিল।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button