আমাদের সকল পোস্ট ও ভিডিও হোয়াটসঅ্যাপে পেতে ফলো করুন :

লিঙ্কে ক্লিক করুন
প্রবন্ধ আলোচনা

ক্লাউড সিডিং : কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের প্রযুক্তি

সভ্যতার শুরু থেকেই মানুষ চেষ্টা করে আসছে প্রকৃতির ওপর নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার। সেই পথে মানুষের সাফল্যের ইতিহাসও বেশ দীর্ঘ। তার মধ্যে কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের এক যুগান্তকারী প্রযুক্তি ক্লাউড সিডিং। এ প্রযুক্তির মাধ্যমে কোনাে কোনাে দেশ কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটাচ্ছে।

কৃত্রিম বৃষ্টির ইতিহাস

১৮৯১ সালে লুই গাথমান প্রথম কৃত্রিম বৃষ্টি সৃষ্টিতে তরল কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহারের প্রস্তাব করেন । ১৯৩০-এর দশকে বার্গারন-ফাইন্ডিসেন বরফের স্ফটিক কণার উপস্থিতিতে অতীব ঠান্ডা পানির কণা জমে এবং শেষ পর্যন্ত বৃষ্টি হয়ে নামে-এ ধারণার ওপর ভিত্তি করে তত্ত্ব তৈরি করেন। এ তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করেন মার্কিন রসায়নবিদ ভিনসেন্ট শিফার।

জুলাই ১৯৪৬ তিনি যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেল ইলেকট্রিকের গবেষণাগারে প্রথমবারের মতো কৃত্রিম বৃষ্টিপাতের সফল ব্যবহারিক প্রয়োগ ঘটান। পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রের আরেক নোবেলজয়ী বিজ্ঞানী আরভিং ল্যাংমুর যোগ দেন শিফারের সঙ্গে। দুই জন মিলে একই বছরের ১৩ নভেম্বরে বার্কশায়ারের পাহাড়ি এলাকায় উন্মুক্ত পরিবেশে মানব ইতিহাসে প্রথম ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটাতে সক্ষম হন ।

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর প্রক্রিয়া

কৃত্রিম বৃষ্টিপাত হলো প্রকৃতির ওপর বৈজ্ঞানিক প্রভাব খাটিয়ে জোর করে বৃষ্টি নামানো। এ জন্য প্রথমে মেঘ সৃষ্টি করতে হয়। দ্বিতীয় পর্যায়ে এ মেঘকে ঘনীভূত করে বৃষ্টিপাতের উপযোগী অবস্থায় নিয়ে আসতে হয় এবং পরিশেষে বৃষ্টি ঝরানো হয়।

ক্লাউড সিডিংয়ে সাধারণ রাসায়নিক যেমন সিলভার আয়োডাইড, পটাশিয়াম আয়োডাইড অথবা শুষ্ক বরফ বা কঠিন কার্বন ডাই-অক্সাইড ব্যবহার করা হয়। তরল প্রোপেন গ্যাসও ব্যবহার করা হয়। এ গ্যাস সিলভার আয়োডাইডের চেয়ে বেশি তাপমাত্রায় বরফের স্ফটিক তৈরি করতে পারে। ক্লাউড সিডিংয়ের সময় মেঘের ভেতরের তাপমাত্রা -২০° থেকে -৭° সেলসিয়াসে নেমে আসে।

এই বিভাগ থেকে আরো পড়ুন

এরকম পরিস্থিতিতে সিলভার আয়োডাইডের মতো রাসায়নিক ব্যবহার করা হয়। মেঘের ভেতর দিয়ে যখন উড়োজাহাজ যায় তখন সিলভার আয়োডাইড ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এ রাসায়নিকের ক্ষুদ্র স্ফটিকদানাগুলোই মেঘের সিড হিসেবে কাজ করে। অর্থাৎ এসব দানায় ভাসমান জলীয়বাষ্পে পানি কণাগুলো জড়ো হয়ে বড় ফোঁটায় পরিণত হয় । একসময় ওজন বেড়ে গিয়ে মহাকর্ষের টানে বৃষ্টি হয়ে ঝরে পড়ে ।

বহুবিধ ব্যবহার

কৃষিক্ষেত্রে ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি ব্যবহার করার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে থাইল্যান্ড। ১৯৫৫ সাল থেকে সরকারিভাবে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটানোর প্রকল্প চালিয়ে আসছে দেশটি, যা প্রধানত বৃষ্টিনির্ভর শস্যগুলো রক্ষায় কাজে আসছে। ২০০৮ সালে বেইজিং অলিম্পিক গেমসের আগে ক্লাউড সিডিংয়ের মাধ্যমে বৃষ্টি নামায় চীন, যাতে পুরো আয়োজন বৃষ্টির কারণে বিঘ্নিত না হয় ।

অনাবৃষ্টি ও মরু অঞ্চলে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত যে কত বড় আশীর্বাদ হতে পারে তার সফল উদাহরণ সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই শতকের শুরু থেকেই সেখানকার সরকার বৃষ্টিপাত বাড়াতে বৃহৎ কর্মযজ্ঞ হাতে নেয়, যার মধ্যে আছে। বৃষ্টি বৃদ্ধির লক্ষ্যে বৃহৎ পরিসরে গবেষণা, ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তির উন্নয়ন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের জন্য কৃত্রিম হ্রদ ও বাঁধ নির্মাণ।

আমিরাতের জাতীয় আবহাওয়া কেন্দ্রের একটি দল সার্বক্ষণিক মেঘ পর্যবেক্ষণ করে থাকে এবং বৃষ্টিপাত ঘটাতে পারে এমন মেঘ খুঁজে পেলেই ক্লাউড সিডিং অপারেশন শুরু করে। কেবল ২০১৭ সালেই তারা ২৪২টির মতাে সফল ক্লাউড সিডিং অপারেশন সম্পন্ন করে যা ১৫ ৩০ শতাংশের মতাে বৃষ্টিপাত বৃদ্ধিতে সহায়তা করে। চীনই * সবচেয়ে বেশি কৃত্রিম উপায়ে বৃষ্টি ঝরায়।

ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তি যখন অস্ত্র

অবাক শােনালেও এটাই সত্য! মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৬৭ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধে নজিরবিহীনভাবে ক্লাউড সিডিং প্রযুক্তিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে। Operation Popeye নামে কুখ্যাত এই অভিযানে মার্কিনরা ক্লাউড সিডিং করে ভিয়েতনামের উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চলের সংযােগকারী হাে চি মিন ট্রেইলের উপর প্রচুর পরিমাণে কৃত্রিম বৃষ্টিপাত ঘটায়।

মূলত এর ফলে বন্যা ও ভূমিধসে ভিয়েতনাম বাহিনীর যােগাযােগ ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হয়। উত্তর ও দক্ষিণ অংশের মধ্যে খাদ্য ও অস্ত্র পরিবহন কঠিন হয়ে ওঠে। কৃত্রিম বৃষ্টিপাত যেমন ব্যবহৃত হয়েছে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে, আবার মানুষের জীবন বাঁচাতেও এর ব্যবহার হয়ে আসছে।

জানুয়ারি ২০২০ ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় প্রবল বর্ষণ ও ভূমিধসে ৩ দিনেই প্রায় ৪৩ জন মানুষ প্রাণ হারায়। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে আশঙ্কা করা হয়েছিল আরও অন্তত দু’সপ্তাহ ভারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে। ইন্দোনেশিয়ার সরকার সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির মাত্রা কমাতে দ্রুত যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করে তার মধ্যে ক্লাউড সিডিং অন্যতম।

জাকার্তা উপসাগরে উৎপন্ন মেঘগুলাের উপর সােডিয়াম ক্লোরাইড ছড়িয়ে সেগুলােকে শহরে ঢুকতে বাধা সৃষ্টি করা হয়। শহরে ঢােকার আগেই তৎসংলগ্ন নদীতে কিছুটা বৃষ্টিপাত হয়ে যাওয়ায় মেঘগুলাে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ে, রক্ষা পায় প্রাণ ও সম্পদ।

Md. Mahabub Alam

I am a committed educator, blogger and YouTuber and I am striving to achieve extraordinary success in my chosen field. After completing Masters in Anthropology from Jagannath University, I am working as Chief Accounts Officer in a national newspaper of the country. I really want your prayers and love.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button